ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আধুনিক পদ্ধতিতে রোপণ, ধানে ফলন দেড় গুণ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

 আধুনিক পদ্ধতিতে রোপণ, ধানে ফলন দেড় গুণ

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে বরিশালের তিন উপজেলার কৃষক গত বোরো মৌসুমে পানি-সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করে অধিক ফসল উৎপাদন করছেন। ফলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা এই আধুনিক পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ওপর ঝুঁকে পড়েছেন। পানি সাশ্রয়ী এই প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করে কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ধানের ফলন বৃদ্ধি; সেচের পানির ব্যবহার ও দক্ষতা বৃদ্ধি; কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহার করে মাটি উর্বরতা বৃদ্ধি করা; কৃষকের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পল্লী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (পউএ) বগুড়া কর্তৃক “পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির সস্প্রসারণ ও বিস্তার এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা” প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল সদর, উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলায় গত বোরো মৌসুমে পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা অধিক লাভবান হয়েছেন। সরেজমিনে বরিশাল সদর উপাজেলার এয়ারপোর্ট থানার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের সোলনা এলাকার ব্লক ঘুরে চাষীদের সঙ্গে আলাপ করে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে সফলতার কথা শোনা গেছে। বর্তমানে পানি সাশ্রয়ী প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা অল্প বয়সের ধানের চারা মেশিন দিয়ে জমিতে রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গত মৌসুমের তুলনায় এবছর প্রযুক্তিটি ব্যাপকভাবে সস্প্রসারিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। প্রকল্পের আওতাধীন কৃষক আজাহার বেপারী, আলমগীর হোসেন, বেলাল মিয়াসহ একাধিক চাষী জানান, গত বছর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা প্রতি ২০ শতক জমিতে ৩২ মণ করে ধান উৎপাদন করেছেন। অতীতে প্রচলিত পদ্ধতিতে তারা পেয়েছেন ২০ মণ ধান। প্রযুক্তিগুলো লাগসই এবং যুগোপযোগী। যা ব্যবহার করে শুধু অধিক ফলনই নয়, উৎপাদন খরচও অনেক কমে গেছে। প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে সারাদেশে কম পানিতে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং খামার যান্ত্রিকীকরণের ফলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে কৃষকেরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হচ্ছেন। পানি সাশ্রয়ী এ আধুনিক প্রযুক্তিগুলো সমস্ত বাংলাদেশের আবাদী জমিতে বাস্তবায়িত হলে দেশ ও জাতি আর্থিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। প্রকল্পের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বরত তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা (পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া) মোঃ জাহিদুর রহমান কৃষকদের সকল প্রযুক্তির বিষয়ে অবহিত করে থাকেন। চলতি বোরো মৌসুমে বরিশাল জেলায় ৩০ একর জমিতে বাইসট্রান্স প্লান্টার যন্ত্রের সাহায্যে অল্প বয়সী বীজ রোপণ করা হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার কৃষক আজাহার বেপারী, বাবুগঞ্জের তোফাজ্জেল হোসেন, উজিরপুরের রফিকুর রহমান ও জগলু লস্কর জানান, তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিক লাভবান হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৩১টি জেলার অন্তর্গত ১১৫টি সাইটে (উপ-প্রকল্প এলাকা) এবং সাতটি মাদার ট্রায়েল এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০টি জেলার অন্তর্গত ২০০টি সাইটে উপ-প্রকল্প এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। আধুনিক পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করাই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে তথা ভূগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ে গত বোরো মৌসুমে কৃষকরা পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি এসআরআই (সিস্টেম অব রাইচ ইন্টেনশিফিকেশন) পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপণ করে অধিক ফসল উৎপাদন করছেন।
×