ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতবিনিময় সভা

দেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত, পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেড ১১৫টি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

দেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত, পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেড ১১৫টি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৭০ লাখ লোক মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। এর বিপরীতে সরকারী মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে শয্যা (বেড) রয়েছে মাত্র ১১৫টি। এই মুহূর্তে এর লাগাম টানতে না পারলে জাতির জন্য মারাত্মক অবক্ষয় সৃষ্টি হবে। রবিবার সচিবালয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একথা বলেন। তিনি বলেন, মাদকাসক্তের ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কখন আমি, কখন আমার সন্তান, কখন আমার পরিবার- কে যুক্ত হয়ে যায় তা বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে চলে গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সক্ষমতা অনেক কম। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ফেনসিডিলের বিক্রি কমে আসছে, কিন্তু ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, দেখা যায় কক্সবাজারে ৩০-৫০ টাকায় পাওয়া যায় এক ধরনের জিনিস (ইয়াবা)। ঢাকায় এনে ৩০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে লাভজনক কারবার আর কিছু হতে পারে না। এটা বন্ধে পুলিশ চেষ্টা করছে না তা নয়। এরমধ্যে কিছু ভূত নেই আমরা তাও বলব না। আমরা সেই জায়গায় পৌঁছতে পারিনি, আমরা চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন মিডিয়ায় আসে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ, ৮০ লাখ, কেউ বলেন ৬০ লাখ। কিন্তু সঠিক তথ্য আমাদের কাছে থাকার কথা কিন্তু আমাদের কাছে নেই। চেষ্টা করছি কীভাবে আনা যায়। মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বলেন, এজন্য অপরাধের হারও বাড়ছে। এটাকে যদি চ্যালেঞ্জ হিসেবে না নিই তবে সরকার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ হলে একজনকে নিরাময় করতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। ৭ মাস, ১০ মাসও লাগে। আমাদের সরকারী নিরাময় কেন্দ্রের অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। সরকারী পর্যায়ে ঢাকাতে ১০০ সিট, আর তিন বিভাগে ১৫ বেড, মানে সরকারী পর্যায়ে ১১৫টি বেড, যেখানে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত। আমরা বেসরকারী খাতকেও সম্পৃক্ত করেছি, ১৯৭টি হাসপাতালে ২ হাজার ৩০০ বেড আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সারাদেশে ৯২টি ইউনিট রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, অধিদফতরের ৫১টি গাড়ি, এরমধ্যে মোটরসাইকেলও আছে। মাদকদ্রব্যের ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত আমরা অনেকে তাদের চিনি বা ধারণা করতে পারি। তাদের গতির সঙ্গে আমাদের গতি কীভাবে মেলাবেন। আমরা সক্ষমতা বাড়ানোরও চেষ্টা করছি। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে অন্যান্য এজেন্সিগুলোর সমন্বয় করা মোবাইল ট্র্যাকিং ও বিভিন্ন বিষয় আনার চেষ্টা করছি আমরা। সবাই মিলে একসঙ্গে মুভ না করলে এটা কোনভাবেই কাভার করা যাবে না। তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমরা সন্তানদের সঙ্গে অনেক জিনিস শেয়ার করছি না। পিতা হিসেবে সন্তানের রুমে ঢুকতে পারছি না। সামাজিকভাবে এগোতে না পারলে আমরা সমস্যায় পড়ব। মাদকের ভয়াবহতার দিকগুলো মানুষের সামনে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা সভায় একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০১১ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ে ৩৭ হাজার ৩৯৫টি মামলা হয়েছিল। ২০১৭ সালে হয়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৫৩৬টি মামলা হয়েছে। ২০১১ সালে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ১২৫টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে, ২০১৭ সালে উদ্ধার করা হয়েছে ৪ কোটি ৭৯ হাজার ৪৪৩টি। তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘মাদক ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রচার ও মাদকের মামলায় শাস্তি কী তা প্রচার দরকার। তাহলে সবাই সতর্ক হয়ে এ কাজ থেকে বিরত থাকবে। তিনি বলেন, মাদকের সবচেয়ে বড় টার্গেট তরুণ-শিশু, আমরা তাদের মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করছি, কিন্তু আনাচে কানাচে চলছে এর ব্যবহার। আমরা দৃঢ়ভাবে মাঠে নামতে চাই। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রয়োজনে প্রচার চালানো হবে। স্কুলভিত্তিক প্রচারের জন্য কাজ করা উচিত। সেখানে ডিএফপি নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানোর পর মাদকের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হবে। সভায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তা ও দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×