ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব বাধা কেটে গেল

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

সব বাধা কেটে গেল

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর মাঝনদী ও মাওয়া প্রান্তে ১৪টি খুঁটি নির্মাণ অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। নদীর তলদেশের গভীরে নরম মাটির স্তর নিয়ে ভাবনায় ফেলেছিল। তবে শনিবার জাজিরা সার্ভিস এরিয়ায় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের তৃতীয় দিনের সভায় এই বিষয়ে ঐক্যমত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ডিজাইন চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আর কোন সভাও করার প্রয়োজন নেই। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যবর্গ এবং পরামর্শক সকলেই এই ডিজাইন চূড়ান্তে একমত পোষণ করেছেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই ১৪ খুঁটির ডিজাইনগত সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে সেতুর কাজ সম্পন্ন হতে আর কোন বাধা রইল না। সভায় উপস্থিত থাকা দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, শুক্রবারও সফল আলোচনা হয়। শনিবার বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ার অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। এই সভায় প্যানেলের বিদেশী ৫ বিশেষজ্ঞসহ বাংলাদেশী ৬ বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই উপস্থিত ছিলেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়। এই সফল সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪টির মধ্যে ৮ খুুঁটিতে ছয়টি করেই এবং বাকি ছয়টি খুঁটিতে মাঝখানে বাড়তি একটি ভার্টিক্যাল পাইল বসেছে বলে ধরণা করা হেেচ্ছ। যে খুঁটিগুলোতে বাড়তি পাইলটি বসছে সেই সম্পর্কে নির্দেশনা হচ্ছে- অন্য খুঁটির মতই ছয়টি পাইল নরম কাদামাটির র প্রায় ৭ মিটার ওপরে বালুর উপযোগী স্তরে পর্যাপ্ত গভীরতায় রাখা হবে। আর মাঝখানের একটি বাড়তি পাইল কাদামাটির ভেদ করে ১৪৫ থেকে ১৫০ মিটার পর্যন্ত গভীরে চলে যাবে, যেখানে উপযোগী বালুর স্তর রয়েছে। এতেই ঝুঁকিহীন হবে খুঁটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, শক্ত ও মজবুত ভিতের জন্যই পদ্মা সেতুর সবগুলো পাইলই একটু হেলিয়ে বা বাঁকা করে ডিজাইন করা। তবে বাড়তি পাইলটি খুঁটির নিচে ছয়টি করে বাকা খুঁটির মাঝখানের একটি একেবারেই সোজাসোজি বসবে। তাই সোজা পাইলটিকে বলা হচ্ছে- ভার্টিক্যাল পাইল। অবশেষে এই ভার্টিক্যাল পাইলেই পদ্মা সেতুর বড় চ্যালঞ্জটির সফল সমাধান হচ্ছে। যে ১৪টি খুঁটির তলদেশে নরম মাটির সমস্যা রয়েছে সেগুলো হলো মাওয়া প্রান্তে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০,১১ ও ১২ নম্বর খুঁটি। এ ছাড়া মাঝ নদী ও জাজিরা প্রান্তের ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর খুঁটি। তবে এপর্যন্ত ১৪৫ মিটার গভীর পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩৫, ৩২, ৩১ ও ৩০ নম্বর খুঁটি পয়েন্টে। সেখানকার রিপোর্ট অনুযায়ী পর্যাপ্ত বালুর স্তর রয়েছে। জাজিরা দিক থেকেই চলছে এই ১৪ পিয়ারে (খুঁটি) পয়েন্টে নতুন পরীক্ষা। সংশ্লিষ্টদের ধারণা অনুযায়ী ৮টি খুঁটিতে অর্থাৎ আরও ৪টি খুঁটিতে এমন ভাল স্তর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাওয়ার ১ নম্বর খুঁটির কাজ শুরু ॥ মাওয়ার ১ নম্বর খুঁটির কাজ শুরু হয়ে গেছে। পদ্মা তীরের এই খুঁটির ১৬টি পাইলের মধ্যে ৬ নম্বর পাইলের পাইলিং শুরু হয়েছে। এই খুঁটির ডিজাইন নিয়েও সঙ্কট চলছিল। এর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১২টির স্থলে ১৬টি পাইল স্থাপানের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার থেকে এই খুঁটিতে পাইল নির্মাণ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে অনুরূপ খুঁটি অপর তীর জাজিরায় ৪২ নম্বর পিয়ার। এই পিয়ারের ১৬টি পাইলের কাজ শেষে এখন পাইল ক্যাপ করে এখন খুুঁটি ওপরের দিকে উঠছে। এ ছাড়া নদীতে পদ্মা সেতুর ৯৮টি পাইল পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। আর বটম পাইল অর্থাৎ আংশিক পাইল বসেছে ১৬টি। মাওয়া প্রান্তের সংযোগসেতুর (ভিয়াডাক্টের) ৭৩টি পাইল বসে গেছে। এ ছাড়া জাজিরা প্রান্তের সংযোগসেতুর পাইল সম্পন্ন শেষে এখন ওপরের দিকের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতার দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে।
×