ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৩ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৩ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে তিন হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হবে বিওটি (বিল্ট অপারেট এ্যান্ড ট্রান্সফার) নামের বেসরকারী লালদিয়া টার্মিনাল। পতেঙ্গার লালদিয়ার চর এলাকায় ৫২ একর জায়গার ওপর এই টার্মিনাল প্রতিষ্ঠা পেলে তা দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি ও রফতানিকে আধুনিক সেবা প্রদানে সক্ষম হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে এটি হবে সম্পূর্ণ বেসরকারী টার্মিনাল। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে অভিজ্ঞ বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড, কর্ণফুলী টানেলসহ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিকল্পিতভাবে টার্মিনালটি নির্মাণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বিদেশী কিংবা বেসরকারী খাতে না দিয়ে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণের সুপারিশও উঠে এসেছে। রবিবার চট্টগ্রাম বন্দর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. খালেদ ইকবালের সভাপতিত্বে এই মতবিনিময় সভায় অভিমত তুলে ধরেন বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা ও ট্রেড বডির প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ, এনবিআর, সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে এবং বিভিন্ন সেবা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। মূলত টার্মিনালটি কিভাবে নির্মিত ও পরিচালিত হলে বন্দরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রেখে কর্মকা- চালানো সম্ভব হবে সেই বিষয়গুলো উঠে আসে। আলোচনায় আসে এর ব্যবস্থাপনা, ট্যারিফ নির্ধারণ, বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি, শহর এড়িয়ে টার্মিনাল থেকে সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন বিষয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ এটিকে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে অভিজ্ঞ বিদেশী প্রতিষ্ঠান দিয়ে নির্মাণ ও পরিচালনার পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে। তবে সম্পূর্ণ বন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে ব্যয়ে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণের পক্ষেও বক্তব্য এসেছে। নৌ-পরিবহন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য এমপি এমএ লতিফ তার বক্তব্যে বন্দরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বর্তমান সরকার গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, এগুলো যুগের পর যুগ শোনা গেলেও এই সরকারের আমলে দৃশ্যমান হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত তহবিল থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনার অভাবে গুরুত্বপূর্ণ একাজগুলো করা যায়নি। তিনিও লালদিয়া টার্মিনাল বন্দরের নিজের অর্থে করা উচিত বলে অভিমত রেখে বলেন, ৩ হাজার কোটি টাকা এমন কোন বড় অঙ্ক নয়। বন্দরের হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। ব্যাংকে রেখে যে রেটে ইন্টারেস্ট পাওয়া যাচ্ছে সেই টাকায় টার্মিনাল নির্মাণ করে অপারেটর নিয়োগ করলে বেশি লাভ হবে। তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিদেশী বিনিয়োগ চাইব নিজের সামর্থ্য না থাকলে। কিন্তু যেহেতু আছে সেহেতু বাইরের সহযোগিতা চাইব কেন? তবে তিনি যেভাবেই হোক না কেন, দীর্ঘসূত্রতা না করে দ্রুততার সঙ্গে লালদিয়ার টার্মিনাল নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর সে মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি দিয়ে যে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে তাতে বন্দরকে অদক্ষ বলা যাবে না। আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। এর জন্য বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের দায়ী করা ঠিক হবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল খালেদ ইকবাল বলেন, বন্দরের উন্নয়নে অনেকগুলো সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০২০-২১ সালের মধ্যে একের পর এক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক গ্র্যান্টিক্রেন সংযোজন করা হচ্ছে। লালদিয়ার চর টার্মিনালটি নির্মাণ এবং অপারেশনে গেলে বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। তিনি জানান, সেখানে চারটি জেটি নির্মিত হবে। এর মধ্যে দুটি হবে কন্টেনার জেটি। যেহেতু বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ টার্মিনালটি অত্যাধুনিক হবে, সেহেতু সেখানে পণ্য হ্যান্ডলিংও বেশি হবে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য ৫টি প্রতিষ্ঠান কোয়ালিফাই করেছে। এগুলো বেশ অভিজ্ঞ এবং সবকটিই আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন। মতবিনিময় সভায় লালদিয়া টার্মিনাল বিষয়ে স্লাইডশো’র মাধ্যমে পরিকল্পনা ও তথ্য উপস্থাপনা করেন বুয়েটের শিক্ষক ড. রাকিব হোসেন। আলোচনা করেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বাচ্চু, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়াডার্স এ্যাসোসিয়েশনের খায়রুল আলম সুজন, বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক মেম্বার (এডমিন এ্যান্ড প্লানিং) হাদী হোসেন বাবুল, বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) গোলাম সরওয়ার প্রমুখ। তারা লালদিয়া টার্মিনালের ট্যারিফ নির্ধারণ, ওই স্থান থেকে সরিয়ে নেয়া পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন, টার্মিনাল ও সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে পতেঙ্গা এলাকার ট্যুরিজম সম্ভাবনাকে বিশেষ বিবেচনায় রাখা, আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনের জন্য পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ, কানেক্টিং সড়কগুলোর সম্প্রসারণসহ সার্বিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রায় একই সুরে সকলেরই বক্তব্য, দেশের আমদানি-রফতানি ও শিল্পায়ন যে হারে বাড়ছে তাতে করে এই বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে খুব বেশি দিন সেবা প্রদান করা যাবে না।
×