ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে আইকিউসি প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত করা হোক

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে আইকিউসি প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত করা হোক

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে দেশ যাতে উন্নয়নের গতিময়তা পায় এবং সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়, সেজন্য ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার বিস্তার এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারপ্রধানের আন্তরিকতার কমতি নেই। এ লক্ষ্য সামনে রেখে বিশ্বব্যাংক হেকাপের মাধ্যমে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল গঠন করে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে মান উন্নয়নের প্রয়াস সরকার ইউজিসি এবং কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স ইউনিটের মাধ্যমে গ্রহণ করেছে। অথচ মাত্র ৬৯টি সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) মাধ্যমে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামের এনটিটির পর্যালোচনা করে মোট পাঁচ বছর। প্রথম বছর স্বনির্ধারণীভিত্তিক মূল্যায়ন এবং মূল্যায়নউত্তর চার বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার সাইকেল গ্রহণ করেছে। প্রথম রাউন্ড থেকে চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত যে ৬৯ বিশ্ববিদ্যালয় আইকিউসি কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত তাদের প্রায় ৯০০ এনটিটি বা বিভাগের স্বনির্ধারণী পদ্ধতি করলেই চলবে না বরং পরবর্তী চার বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এখন হঠাৎ করে হেকাপের মেয়াদ যখন ২০১৮তে শেষ হয়ে যাবে তখন কি হবে? এ জন্য প্রয়োজন হচ্ছে সময় থাকতে প্রকল্পের সুফল পেতে এর মেয়াদ অন্তত ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এদিকে কারিগরি ও ধর্মীয় শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করেছে। আসলে সরকার আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষায় বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন শিক্ষার মান উন্নত করার মাধ্যমে কর্মদ্যোমী যুবসমাজ তৈরি এবং কার্যকর দেশী উন্নয়নের জন্য বাজারভিত্তিক মান যাচাই করে সে অনুযায়ী যথাযথ বিনিয়োগ এবং প্রতিদানের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষা হবে দেশের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও শক্তিশালী জাতির মেরুদ-স্বরূপ। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইকিউসির মাধ্যমে তাদের নিজস্ব দুর্বলতা, সবলতা, সুযোগ এবং সমস্যা চিহ্নিত করতে পারছে তাদের উত্তরণের পরিকল্পনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধ্যাদেশে কিন্তু আইকিউসি স্থাপনের বিধান নেই। আবার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন-২০১০-এ ইন্টার্নাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল গঠনের কথা থাকলেও ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেলের কথা নেই। ইউজিসি অবশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেছে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইকিউসিকে সময় শেষ হওয়ার পরও অব্যাহত রাখতে। কিন্তু যতক্ষণ না আইকিউসি স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সংশোধন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে করা হবে ততক্ষণ এর সঠিক ফল কিভাবে অর্জিত হবে, একমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই তা জানেন। তবে আইকিউসির প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও যাতে প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, কিভাবে আইকিউসির পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালক স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং জবাবদিহির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন সে জন্য একটি সার্বিক ব্যবস্থা ও দিকনির্দেশনা আইন হিসেবে জাতীয় সংসদ থেকে পাস হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি এ ব্যাপারে একটি কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে এ দেশের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনাল ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার যে শিক্ষানীতি-২০১০ তৈরি করেছিল তা ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। অথচ এটি কার্যকর করার জন্য ২০১৬ সালে একটি শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষা আইনটি সংসদে পাস করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং করার জন্য ইউজিসির আইনে ব্যবস্থা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে এ্যাক্রেডিশন কাউন্সিল-২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে পাস করা হলেও এখন পর্যন্ত এ্যাক্রেডিশন কাউন্সিলের কার্যক্রম অদৃশ্য কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। এ্যাক্রেডিশন কাউন্সিল চালু হলে এর সঙ্গে যেন সত্যিকার অর্থে কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন, বোঝেন এবং জ্ঞান রয়েছে তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। কিছু সুযোগসন্ধানী আবার দেশে র‌্যাঙ্কিং করছে; যা কিন্তু আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং পদ্ধতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। সরকারের আইকিউসি প্রকল্পটি অত্যন্ত যুগোপযোগী ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে যেহেতু এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে সেহেতু এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে ‘ওঠ ছুঁড়ি, তোর বিয়ে’ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- হেকাপ প্রকল্পের মেয়াদ ন্যূনতমপক্ষে ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় শিক্ষকদের মান-মর্যাদা-সামাজিক মূল্য বৃদ্ধিতে ভূয়সী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে এবং সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূল্যায়ন করে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তবে তা দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মসূচীতে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আইকিউসিতে মোট পাঁচটি স্টেকহোল্ডার আছে: বর্তমান ছাত্র, প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং চাকরিদাতা। এখানে ছাত্র বলতে ছাত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, লিঙ্গভেদ নয়। যদি অভিভাবকদের মতামত নেয়া যেত, তাদের জন্য প্রশ্নমালা রাখা যেত তবে ভাল হতো। আইকিউসির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নয়টি বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে থাকে : গভার্নেন্স, কারিকুলাম ডিজাইন এ্যান্ড রিভিউ, স্টুডেন্ট এডমিশন, প্রোগ্রেস এ্যান্ড এ্যাসিভমেন্ট, ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ, টিচিং লার্নিং এ্যান্ড এ্যাসেসমেন্ট, স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস, স্টাফ এ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ, রিসার্চ এ্যান্ড এক্সটেনশন, প্রোসেস ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড কন্টিনিউয়াস ইম্প্রভমেন্ট। আসলে যে নয়টি মূল্যায়ন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে হলে একটি সমন্বিত পদ্ধতির দরকার। আর সে জন্য সেলফ এ্যাসেসমেন্ট মূল্যায়নে সততা, নিষ্ঠার পাশাপাশি স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে কার্যক্রম শুরুর আগে টিম ব্রিডিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৮ এর পর প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এটি যেমন আইনে থাকবে না তেমনি অর্থায়নের বিষয়টি সামনে চলে আসবে। কেননা, এমনিতেই বর্তমানে চুক্তি করার সময় সেলফ এ্যাসেসমেন্টের অর্থায়ন সরকার করছে তবে আইকিউসির অফিস পরিচালনা, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ, ইনস্ট্রাকশন ম্যানুয়েল তৈরিকরণ, অফিসের আসবাবপত্রাদি সংগ্রহ, পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালকের সম্মানী এবং অফিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতাদি দেয়ার ক্ষেত্রে ৫০% হচ্ছে প্রকল্পের আওতায় আর ৫০% হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড। বর্তমানে পরিচালক সাবপ্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন আর উপাচার্য হচ্ছেন ইউনিট প্রধান। মধ্যিখানে কোন ধরনের বাধা না থাকায় তারা কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করে। কিন্তু যখন প্রকল্প শেষ হবে তখন নানা ধরনের চক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এমনিতেই অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার বা তৃতীয় পক্ষ আইকিউসির কার্যক্রমে নাক গলাতে চেষ্টা করেন; না পারলে চিরাচরিত অভ্যাস অনুসারে নানা গুঞ্জনে লিপ্ত হোন। তাদের এ ধরনের হীন প্রভাবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না হলে বরং অব্যাহত থাকবে। চক্রান্তকারীরা সুষ্ঠু নিয়মনীতির অভাবে তখন ধরাকে সরা জ্ঞান করবে। শিক্ষকতায় যারা অতিরিক্ত মাত্রায় নৈতিকতাহীনের পরিচয় দেন তারা অতি সহজে অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেন এবং অন্যায়কে ধারণ করে বড় বড় কথা বলেন। এরা আসলে সুশীল সমাজের অংশ না হয়ে বরং কুশীল সমাজের অংশ। এদিকে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল-৪-এ বলা হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমতাভিত্তিক উন্নত শিক্ষা ও সারাজীবনের জন্য শিক্ষার সুযোগের সৃষ্টিকরণ। সরকার এ ব্যাপারে সজাগ এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ২০৩০ নাগাদ অর্জনে বদ্ধপরিকর। এ কারণে দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রাথমিক থেকে শুরু করে এসএসসি-এইচএসসি পর্যায়েও প্রয়াস চালু করেছে। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের মান উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকায় যে ৭টি অধিভুক্ত সরকারী কলেজ নিয়ে কিছুটা হলেও টানাপোড়েন চলছে, আশা করি দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ে এবং শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় সমাধান হবে। তবে এ ৭ কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজকে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা যায় কিনা সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিবেচনা করে দেখতে পারে। এ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার মান উন্নয়নে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং টএঈ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই মন্তব্য করেছেন যে, সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধিত্বকারী যেভাবে সরকারের সমালোচনা করে বসে, মিথ্যা হিসাব কষে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে থাকে তা অত্যন্ত অন্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে সত্য বলার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর যারা সুশীল সমাজের ব্যানারে কুশীল কাজ করে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কেননা, এমনও দেখা গেছে যে, ভদ্র মহিলার অফিসে জননেত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারে না বলে ১৫ জনের বৈঠকের সংবাদ বেরিয়েছিল পত্রপত্রিকায়; অবশ্য একজন নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন বিবৃতির মাধ্যমে- ফলে দেখা যায়, তারা কিন্তু যতই সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করুন বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। আর সুযোগ সন্ধানী সুশীল সমাজের অংশ নানা কর্মকা-ে কুশীল হিসেবে কাজ করছে। তাদেরই একজন বহাল তবিয়তে গুলশানের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা করছেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে। কাশিমপুরের টাঙ্গাইলে মূল ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য জায়গা নিলেও বহাল তবিয়তে চালাচ্ছেন। তারা নানা ক্ষেত্রে অনৈতিক সহায়তা পাচ্ছে। তাদের জন্য তো ভিন্ন আইন হতে পারে না। জানা গেছে, ইউজিসি একটি পাঁচ বছর মেয়াদী স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান করতে চাচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন করা দরকার। তবে যে সমস্ত ভাল কার্যক্রম রয়েছে তা যাতে মাঝপথে বন্ধ না হয় সে জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঘাটতিগুলো বন্ধ করা দরকার। কেননা চউঈঅ-প্ল্যান-ডু-চেক-এ্যাক্টের আওতায় সব কর্মসূচী পৃথকভাবে গ্রহণ না করে একই অভীষ্ট সিদ্ধ-অর্জনের লক্ষ্যে একটি ইন্টিগ্রেটেড পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনের নিরিখে যে সমস্ত পর্যায়ে সমস্যা আছে সেগুলো শুধরে নতুন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসানোর কোন সুযোগ নেই। যারা শিক্ষার মান উন্নয়নে সুযোগ-সুবিধা এবং নীতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা দেবে তাদের সম্মান জানাতে হবে। আর যারা কুচক্রীদের সহযোগিতা করছে, বর্তমান সরকারের কাছ থেকে নানা সুযোগ নিয়ে তলে তলে নব্য রাজাকার হিসেবে কাজ করে, রাষ্ট্রের সামনে এগিয়ে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে না, কুমির অশ্রুর মতো অশ্রু বর্ষণ করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রধানমন্ত্রী দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। সময় এসেছে এখন থেকে যারা মোনাফেকদের ও নিমকহারামদের সহায়তা করে তাদের বিচারের আওতায় আনার। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে আইকিউসি যাতে কাজ করতে পারে সে জন্য সব ধরনের আইনগত এবং প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত করতে হবে। এদিকে ইউজিসির মান উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় লোকবলের জন্য পদ সৃষ্টি করা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান একজন দক্ষ শিক্ষাবিদ। দেশের শিক্ষার উন্নয়নে তার নেতৃত্ব সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। আইকিউসির কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বে যে কাজ ১৫/২০ বছর আগে শুরু হয়েছে তা গত তিন বছরে আমাদের শিক্ষকরা শিখছেন। অনেক শিক্ষকই আগে জানতেন না আউট কাম বেজড টিচিং কাকে বলে। ব্লুমস টেক্সোনোমির প্রয়োগ, লেসেন প্ল্যান, ক্লাস অডিটিং এমনকি লার্নিং আউটকাম কি হবে। দেশের সব উচ্চতর শিক্ষা ক্ষেত্রে আইকিউসির প্রচলন করা গেলে ভাল হতো। কিন্তু সব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এই আওতায় আসেনি। এখন যদি আইকিউসিকে আইনগত অবস্থায় আনা যায় তাও তা সরকারের সাধু উদ্দেশ্যকে সাফল্যম-িত করবে। গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা প্রসারে প্রায়োগিক কৌশল কাজে লাগাতে হবে। সময় এসেছে প্রাক্তন ছাত্রদের তাদের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই হিসেবে প্রকল্পভিত্তিক কর্মসূচীতে অর্থায়ন করা। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেয়া হয়, অবশ্য এ জন্য উদ্যোক্তা শ্রেণীও তৈরি করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট লেভেলে উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরিকরণের পাশাপাশি মাস্টার্স এবং সম্মান শ্রেণীতে পাঠদানের জন্য অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স ব্যতিক্রমধর্মী পরিকল্পনা ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের নেতৃত্বে করতে পারে। কেননা উদ্যোক্তা গঠনের বিকল্প নেই। আইকিউসির আইনগত ভিত্তি, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি, ন্যাশনাল এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক স্থাপন করা, ইউজিসির মর্যাদা এবং লোকবল বৃদ্ধিকরণ ও এ্যাক্রেডিশন কাউন্সিলের কার্যক্রম অনতিবিলম্বে চালু করা দরকার। ন্যাশনাল এ্যাসেসরদের সম্মান বাড়ানো উচিত। অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনে উৎসাহ দিতে হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীবিদ [email protected]
×