ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ বছরে ৩টি উটপাখি !

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

৭ বছরে ৩টি উটপাখি !

দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, দেশে আনন্দ-বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত। অধুনা ঋতুভেদে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে একটু বেশি জনসমাগম লক্ষ্য করা গেলেও, সে সব স্থানেও বেড়ানোর ছলে বিনোদনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে অপরাহ্ণ গড়িয়ে সন্ধ্যা রাত নামলে হাত-পা গুটিয়ে হোটেল-মোটেলে ফিরে আসা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। ছিনতাই-রাহাজানি-ধর্ষণের ভয়ও আছে বৈকি। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে প্রশ্নের মুখে। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকাতেও আনন্দ-বিনোদনের অভাব প্রকট। বেইলি রোড, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমি চত্বরকে ঘিরে বিশেষ করে শীত-বসন্তে বিভিন্ন নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিলক্ষিত হলেও সারা বছর হাপিত্যেশ করে থাকেন নাগরিক দর্শক-শ্রোতারা নির্মল বিনোদনের জন্য। সিনেমা হলগুলোও এখন দর্শক টানতে ব্যর্থ। বুড়িগঙ্গা, হাতির ঝিল, মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি উত্তম বিনোদনের উপযুক্ত বটে। তবে নিয়মিত দেখভাল, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোর অবস্থা নিতান্তই শোচনীয়। উদাহরণ হিসেবে, মিরপুর চিড়িয়াখানার বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে বিশাল জলাশয় ও জায়গা ঘিরে অবস্থিত চিড়িয়াখানাটির আদৌ কোন আকর্ষণ নেই বললেই চলে। শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণীর দর্শককে আকৃষ্ট করার জন্য চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে নিত্য-নতুন পশু-পাখি, জলচর প্রাণী ইত্যাদি। ঢাকা চিড়িয়াখানা এদিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। গত ৭ বছরে ভারত থেকে মাত্র ৩টি উটপাখি ছাড়া আর কোন প্রাণী আনা হয়নি এই চিড়িয়াখানায়। কোন দেশের সঙ্গে পশু-পাখি বিনিময়ও হয়নি। যে সব পশু-পাখি আছে, সে সবই বয়সের ভারে জবুথবু, জরাজীর্ণ, অপুষ্টিতে আক্রান্ত, রোগে-শোকে জর্জরিত। তদুপরি এবার জলাশয়ে যে কোন কারণেই হোক না কেন পরিযায়ী পাখি এসেছে খুবই কম। তদুপরি রয়েছে চিড়িয়াখানায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি-অনিয়মসহ জবাবদিহির অভাব। দুর্নীতি এতটাই প্রকট যে, পশু-পাখির নিয়মিত খাদ্য বরাদ্দ থেকেও পর্যন্ত প্রায় অবাধে লুটপাট চলে। তৃণভোজী প্রাণীদের পচা-গলা শসা-কলা-পেঁপে ইত্যাদি খেতে দেয়ার পাশাপাশি মাংশাসী প্রাণীদের দেয়া হয় পচা মাংস, পরিমাণেও কম। এ সবই একরকম ওপেন সিক্রেট। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সরকারী বরাদ্দও কম। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড এ্যাসোসিয়েশন অব জু এ্যান্ড এ্যাকুয়ারিয়াম-ওয়াজার’ সদস্য না হওয়ায় বিদেশ থেকে পশু-পাখি আমদানিসহ বিনিময়েও সমস্যা রয়েছে। যথাশীঘ্র প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ এসব সমস্যার জরুরী সমাধান না হলে ঢাকা চিড়িয়াখানার পরিবেশ-পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাব সর্বত্র প্রকট। সর্বত্রই যেন বিরাজমান অব্যবস্থা, অনিয়ম, এমনকি দৃষ্টিকটু পরিবেশ-পরিস্থিতি। উদাহরণত হাতিরঝিলের কথা বলা যেতে পারে। রাজধানীর ফুসফুস বলে খ্যাত এই এলাকাটি বহু আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন নিয়ে বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। তবে দুঃখজনক ও হতাশার খবর হলো, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে মাত্র চার বছরেই প্রায় বিলীন হতে বসেছে হাতিরঝিলের নানা স্থাপনা ও সৌন্দর্য। লেকের পানি হয়েছে বিবর্ণ, দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনায় পরিপূর্ণ। লেকের দু’পাশের দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষগুলো গেছে শুকিয়ে, কোন কোনটি পড়েছে ভেঙ্গে। বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসের আস্তরণ আজ আর চেনা যায় না। পরিচর্যার অভাবে ফুলের বাগান শ্রীহীন, পুষ্পহীন প্রায়। লাল-নীল-সবুজ-হলুদ বাতিগুলো একদা লেকের পানিতে দৃষ্টিনন্দন আলোর ফোয়ারা ছড়িয়ে দিলেও বর্তমানে অনেক বাতি বিকল হয়ে পড়েছে। স্থাপনার নানা কিছু ইতোমধ্যে চুরি হয়ে গেছে অথবা অকেজো। অনেক স্থানে সন্ধ্যার পর বিরাজ করে ভুতুড়ে পরিবেশ। হয়ে ওঠে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। আগের ড্যাপ প্লান অনুযায়ী বহুতল ভবন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরে তা শিথিল করায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। এতেও সৌন্দর্য হারাচ্ছে হাতিরঝিল। যেমন হয়েছে মিরপুর চিড়িয়াখানায়। সে জন্য সবার আগে সর্বত্র চাই নিয়মিত পরিচর্যা, দেখভাল, রক্ষণাবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা।
×