ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুষ্ঠু নদী ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

সুষ্ঠু নদী ব্যবস্থাপনা

বঙ্গোপসাগর তীরের এই দেশটির রয়েছে শত শত নদী। যদিও কালের বিবর্তনে এবং কিছু অপরিণামদর্শী মানুষের দ্বারা দখল-দূষণ ও যত্রতত্র বাঁধ দেয়ার কারণে সেসব খরস্রোতা নদীর অধিকাংশই তার যৌবন হারিয়ে শীর্ণকায়। তবু প্রধান প্রধান সব নদীর নাব্য ফিরিয়ে এনে প্রয়োজনীয় নদীশাসন ও সংস্কার সাধনের মাধ্যমে এবং স্থাপনা অবকাঠামো গড়ে তুলে নৌপথের নবায়ন ও বিস্তার ঘটানো সম্ভব। কেননা নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের প্রাচীনতম যাতায়াত পথ হিসেবে গণ্য করা হয় নৌপথ বা জলপথকেই। নদীপথ এবং সমুদ্রপথ উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ, তবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থায় সমুদ্রপথ ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো নৌচলাচলের জন্য বেশি উপযোগী। এ অঞ্চলেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলো অবস্থিত : ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা প্রভৃতি। নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই (৯৪%) নৌকা ও লঞ্চে এবং বাকিরা (৬%) স্টিমারে যাতায়াত করেন। দেশের সমুদ্রপথ মূলত ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রধান দুটি সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং মংলা সমুদ্রবন্দর এ কাজে ব্যবহৃত হয়। বলাবাহুল্য, আমাদের শত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নৌ-পরিবহনের উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণের কাজটি চলমান। সেক্ষেত্রে নদ-নদীর নাব্যর জন্য খনন ও নদীর প্রশস্ততা ঠিক রাখাও জরুরী। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌপথ উন্নয়নে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এর আওতায় নাব্য রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট নদী বিশেষভাবে খনন করা হবে। ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে নৌ-অবকাঠামোর। এতে নৌ-বাণিজ্যে এবং পণ্য পরিবহনে গতি বাড়বে। আট বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। পরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদ-নদীর নাব্য ঠিক রাখলে তা নৌপথ পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। মৎস্য সম্পদের উন্নয়নেও নদীর গুরুত্ব অপরিসীম- এটাও স্মরণে রাখা চাই। নদীবহুল বাংলাদেশের অসংখ্য নদী দূষণের শিকার হয়ে বিপন্ন বিপর্যস্ত; মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণে বহু নদী ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বিশ্বের আর কোথাও এদেশের মতো এমন নদী হত্যার নজির নেই। বহির্বিশ্বে প্রকৃতির উপহার সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়। নদীকে প্রাণবন্ত, দূষণমুক্ত রাখা এবং তার প্রবাহ অবাধ রাখার জন্য রীতিমতো আইন প্রণয়ন হয়। দেশের অসংখ্য নদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। ফসলি মাঠ আর ইটভাঁটিসহ নানা বাণিজ্যিক-তৎপরতায় যেন রূপান্তরিত হয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলোর দেহবাঁক। নদীকে ‘হত্যা’ করার আত্মহননের পথ পরিত্যাগ করতে হবে। নদীকে নিজের মতো করে বাঁচতে দিতে হবে। নদী খননের কাজে চাই গতি। নদী রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজে সক্রিয়তা জরুরী। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে ‘কম্প্রিহেনসিভ প্লান ফর স্টাবিলাইজেশন অব দ্য যমুনা-পদ্মা রিভার এ্যান্ড পাইলট ইন্টারভেনশন ফর ল্যান্ড রিক্লেমেশন’-এর ওপর এক মডেল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণে আবারও দেশ বাঁচাতে সুষ্ঠু নদী ব্যবস্থাপনার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, নদী দেশের জীবন প্রবাহ হলেও নদী খনন ও ব্যবস্থাপনার অভাবে তা অনেক সময় দুর্দশা বয়ে আনে। এজন্য প্রথমে আমাদের মূল ড্রেজিং এবং পরে প্রতিবছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ড্রেজিং করতে হবে।
×