ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আঙ্গুলে ইনজুরি, ফ্র্যাকচার ধরা না পড়লেও সেলাই দিতে হয়েছে

ইনজুরিতে প্রথম টেস্টে নেই সাকিব

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

ইনজুরিতে প্রথম টেস্টে নেই সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফাইনালগুলো হয়তো এমন দুর্ভাগ্যেরই হয় বাংলাদেশ দলের জন্য। ২০০৯ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচে ২ উইকেটে হার, ২০১২ এশিয়া কাপে জিততে জিততে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হার এবং ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপে ঝড়বৃষ্টিতে ঝঞ্ঝামুখর কার্টেল ওভারের ফাইনালে ভারতের কাছে হার। এবার চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে দলকে রাউন্ড রবিন লীগের তিনটি ম্যাচেই জিতিয়েছিলেন। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে যেন ভাগ্যদেবী মুখ ফিরিয়ে নিলেন শুরুতেই। টস জিতে আগে ব্যাটিং করছিল শ্রীলঙ্কা। ফিল্ডিং করার সময় ৪২তম ওভারে বল আটকাতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন সাকিব, বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এক্স-রে করার পর আঙ্গুলে সেলাই দিতে হয়েছে। তাই ফাইনালে ব্যাটিং করতে পারেননি তিনি। এমনকি আগামী ৩১ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টেও খেলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী। কারণ সেরে উঠতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে সাকিবের। ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা তিন ম্যাচ বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এ তিন ম্যাচেই ৩টি করে মোট ৯ উইকেট শিকার করেন সাকিব। আর ওই তিন ম্যাচে রান করেন ৩৭, ৬৭ ও ৫১। তবে শেষ ম্যাচে ৮ রান করেন এবং কোন উইকেটও পাননি। ফাইনালে তারদিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ দল। ফাইনালে গিয়েও না জেতার পুরনো দুঃখটা ভোলার এবারই ছিল মোক্ষম সুযোগ। আগে ব্যাটিংয়ে নামে লঙ্কানরা। ৫ ওভার বোলিং করে ২০ রান দিয়েছিলেন। শেষদিকে হয়তো আবার বোলিংও করতেন। কিন্তু ইনিংসের ৪২তম ওভারেই ঘটে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা যা কাঁপিয়ে দেয় পুরো বাংলাদেশ দল এবং স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের অন্তর। মুস্তাফিজুর রহমান বোলিং করছিলেন। দিনেশ চান্দিমালের শট এক্সট্রা কাভারে ঝাঁপ দিয়ে ধরতে গিয়ে মাটিতে পড়ার পর ব্যথায় কাতরাতে থাকেন সাকিব। সবাই ছুটে আসেন। দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকার পর ফিজিও মাঠে এসে শুশ্রƒষা করছিলেন। পরে সাকিবের হাতটি তোয়ালেতে পেঁচিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। কনিষ্ঠ আঙ্গুলে বরফ দিয়ে কিছুক্ষণ সেবা দেয়ার পর তাকে স্ক্যান করাতে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এরপর বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘সাকিব চোট পেয়েছেন বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে। প্রথমে তার এক্স-রে করা হয়। কসমেটিক সার্জন তার আঙ্গুলের স্ক্যান রিপোর্ট দেখে কোন ফ্র্যাকচার পাননি। তবে আঙ্গুলটির সংযোগস্থলে মচকে যাওয়ায় সেলাই দিতে হয়েছে। ফলে সপ্তাহ খানেক লাগবে তার পুরোপুরি সেরে উঠতে। তাই প্রথম টেস্টে খেলতে পারবেন না তিনি।’ বড় দুঃসংবাদ হচ্ছে দেবাশীষের সেই শঙ্কাটা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়। সাকিবের বদলে ফিল্ডিং করেন নাসির হোসেন। কিন্তু তার ব্যাটিংয়ে বদলি কাউকে নামানোর নিয়ম নেই। ফলে ব্যাটিং করতে পারেননি। হাসপাতাল থেকে ফিরে বাঁ হাত স্লিংয়ে ঝুলিয়ে ড্রেসিং রুমে বসে বসে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখেছেন। এ বিষয়ে বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল বলেন, ‘এক্স-রে করানোর পর কোন ফ্র্যাকচার ধরা পড়েনি, তবে সেলাই লেগেছে। এই ম্যাচ তো খেলতেই পারবে না।’ এই অনিশ্চিয়তা নিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে খেলানোর চিন্তা কখনই করবে না বিসিবি। হয়তো দ্রুতই ব্যাটিং করার মতো অবস্থায় পৌঁছাবেন কিন্তু যে হাত দিয়ে বোলিং করেন সেই হাতেই তো সমস্যা। এবার নতুন করে শুরু হতো সাকিবের ক্যারিয়ার। কারণ গত ডিসেম্বরেই তিনি আবার টেস্ট দলের নেতৃত্ব পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টে সিরিজে তার প্রথম মিশন হতো এই নতুন শুরুর। ২০০৯ সালে টেস্ট দলের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজার ইনজুরির কারণে ২০১১ সালের আগস্টে জিম্বাবুইয়ে সফর শেষ হওয়ার পর। এবার নতুন করে ফিরেছিলেন নেতৃত্বে। কিন্তু শুরুটাই করতে পারবেন না হয়তো তিনি। টেস্ট দলে তার নতুন সহকারী হয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। হয়তো চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের অধিনায়কত্ব তিনিই করবেন স্বাভাবিক নিয়মে। উল্লেখ্য, সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলেননি সাকিব, নিয়েছিলেন বিশ্রাম। এবারও ফেরা হচ্ছে না তার শুরু থেকে। দ্বিতীয় টেস্টে ফিরবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
×