ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ও না’গঞ্জ থেকে ৪ জঙ্গী গ্রেফতার ॥ অস্ত্র ও জঙ্গীবাদী বই উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

ঢাকা ও না’গঞ্জ থেকে ৪ জঙ্গী গ্রেফতার ॥ অস্ত্র ও জঙ্গীবাদী বই উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকার কাকরাইল এলাকা থেকে পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত দু’টি জঙ্গী সংগঠনের চার জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১ সদস্যরা। এদের মধ্যে রেজাউর রহমান ওরফে শাওন ওরফে হোসেল ও হাসান (২৭), মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদ (৩৩) ও আবু রায়হান চৌধুরী (২৮) এ তিনজন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাাহ বাংলা টিম) দাওয়াতী সদস্য ও শায়খ কামাল হোসেন (৪৫) হচ্ছেন জেএমবি’র দাওয়াতী শাখার শীর্ষস্থানীয় নেতা। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৩ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি বিদেশী পিস্তল, চারটি দেশীয় অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ জঙ্গীবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত র‌্যাব-১১ একটি দল এ অভিযান চালায়। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগর এলাকায় র‌্যাব-১১’র প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কামরুল হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানায়। র‌্যাব-১১ সিও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ঢাকার কাকরাইল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় জেএমবির দাওয়াতী শাখার শীর্ষস্থানীয় নেতা শায়খ কামাল হোসেনকে। একটি বেসরকারী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তিনি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। তিনি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়েরকৃত একটি মামলার পলাতক আসামি। তিনি আরও জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে র‌্যাব-১১’র অপর একটি দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার জিন্দা পার্ক এলাকায় গোপন বৈঠক চলাকালে সেখান থেকে গ্রেফতার করে আনসার আল ইসলাম ওরফে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তিন সক্রিয় সদস্য রেজাউর রহমান, মোবারক হোসেন ও আবু রায়হান চৌধুরীকে। ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ জঙ্গীবাদী বই ও লিফলেটগুলো। এরা দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে সংগঠনের জন্য নতুন কর্মী সংগ্রহ করাসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে আসছিল। র‌্যাবের সিও আরও জানান, রেজাউর রহমান ২০১৩ সালের শুরুর দিকে সে জসিমউদ্দিন রাহমানী ও আনোয়ার আওলাকীর বয়ান শুনে উগ্রবাদে আগ্রহী হতে থাকে। পরে তার ইউনিভার্সিটির বন্ধু জাবির ওরফে রনির সঙ্গে বসিলায় জসিমউদ্দিন রাহমানীর মসজিদে যাতায়াত শুরু করে। রনির মাধ্যমে তার পরিচয় হয় আবু রায়হান চৌধুরী, জুন্নুন শিকদার, সোহেল এবং সিফাতের সাথে যারা সবাই জঙ্গী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিল। রেজাউর পর্যায়ক্রমে আনসার আল ইসলামের একজন মাসুল হিসেবে দায়িত্ব পায়। তার অধীনে মিঠু, তাউসিন, সাগর ও সাব্বির কাজ করত। ২০১৭ সালের মে মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষিতে সাংগঠনিক নির্দেশে রেজাউর বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায়। এসময় কলকাতা পুলিশ ভারতে রেজাউর রহমান ওরফে শাওনের সহযোগী আনসার আল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ওমর ফারুক, সাদাত হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম ও শামসুদ মিয়াকে গ্রেফতার করলে, সে পুনরায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তিনি আরও জানান, মোবারক হোসেন ২০১৩ সালে জসিমউদ্দীন রাহমানীর মসজিদে যাতায়াতের মাধ্যমে সে পুরোপুরি উগ্রবাদে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এসময় তার সঙ্গে রেজাউর রহমানের পরিচয় হয়। জসিমউদ্দীন রাহমানী গ্রেফতার হলে সিরিয়ায় হিজরতকৃত জুন্নুন শিকদার এর অধীনে সে দাওয়াতী কাজ করতে থাকে। পরে জুন্নুন শিকদার সিরিয়ায় হিজরত করলে মোবারক জসিমউদ্দীন রাহমানীর একান্ত আস্থাভাজন মাওলানা ইসহাকের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করে। মাওলানা ইসহাক গ্রেফতার হলে সে নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে পুনরায় আনসার আল ইসলামের জন্য দাওয়াতী কাজ করতে থাকে। রায়হান চৌধুরী ২০১২ সালের শেষ দিকে জসিমউদ্দীন রাহমানীর মসজিদে যাতায়াতের মাধ্যমে সে উগ্রবাদী চিন্তা-চেতনা ও কথিত জিহাদের দিকে ধাবিত হয়। ২০১৬ সালে সে আনসার আল ইসলামের সদস্য আহমেদ উল্লাহ পাটোয়ারী ওরফে ইমরান ওরফে শ্যামল এবং সৈয়দ রায়হানুল কবির ওরফে বাবুর মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করে বলে জানায়। পরে সংগঠনের মাসুল হোসেন আহমেদের অধীনে থেকে আনসার আল ইসলামের দাওয়াতী শাখায় একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করতে থাকে। সে গুলশান এলাকায় একটি দোকানে কাজ করত। সে মূলত গুলশান এলাকায় আনসার আল ইসলামের একজন মাসুল। সিও আরও জানান, শায়খ কামাল ২০০৮ সালে জসিমউদ্দীন রাহমানীর মাধ্যমে হানাফি থেকে সালাফি মতাদর্শে প্রবেশ করে এবং উগ্রবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
×