ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের কর হ্রাসের বিরুদ্ধে আইএমএফ প্রধানের হুঁশিয়ারি

মারাত্মক ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

মারাত্মক ঝুঁকিতে বিশ্ব অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর হ্রাস নীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে হুমকিতে ফেলতে পারে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দ। চলমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে অস্থিতিশীল করতে পারে এমন তিনটি ঝুঁকির মধ্যে ট্রাম্পের কর সংস্কার অন্যতম বলে তিনি মন্তব্য করেন। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের ট্রাম্পের কর সংস্কারের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে লাগার্দ বলেন, গত বছরে স্টক মার্কেটে যে উর্ধগতি দেখা গেছে, এটা তাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে ট্রাম্পের কর সংস্কার স্বল্প মেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও তা দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ঝুঁকি রেখে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে ক্রিস্টিন লাগার্দ এসব কথা বলেন। তার মতে, এটা বিশ্বের অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়াবে। বিশেষ করে সম্পদের উচ্চ দাম এবং সহজ অর্থনৈতিক তৎপরতায় প্রভাব ফেলবে। ডাভোসে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভাষণে বলেন, তার কর সংস্কার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তিনি এটাকে খুবই সুন্দর জলপ্রপাতের সঙ্গে তুলনা করেন। মার্কিন কোম্পানিগুলো এই কর হ্রাসকে স্বাগত জানিয়েছে। ট্রাম্পের ভাষণের কিছুক্ষণ পর বক্তব্য রাখেন আইএমএফ পরিচালক। কর হ্রাস যুক্তরাষ্ট্রকে বড় ধরনের বাজেট ঘাটতির দিকে নিয়ে যাবে বলে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছে মুদ্রা তহবিল। এতে রাজস্ব বিভাগ থেকে অতিরিক্ত অর্থ ধার নিতে হবে। যেটা সুদের হার বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী করে দেবে। ফলে প্রবৃদ্ধিও ব্যাপকহারে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্টক মার্কেটও অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উর্ধমুখী। আইএমএফের মতে, এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই। কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর হ্রাস নীতিতে বৈষম্য বাড়বে এবং বিশ্ব বাজারেও উত্তাপ ছড়াবে। চলতি বছর ও আগামী বছরের জন্য মুদ্রা তহবিলের পূর্বাভাষ ছিল, বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩.৯ শতাংশ বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় অঞ্চল ও জাপানের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভাল করবে। লাগার্দ বলেন, আমাদের কাজ শেষ হয়েছে বলে আমরা মনে করছি না। বিভিন্ন দেশে বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ায় একটা বিশাল ফাটল দেখা দেবে। লাগার্দের মতে, প্রবৃদ্ধির হার ও উৎপাদন বাড়লে তা অবশ্যই ভাল। কিন্তু এসব যথাযথভাবে বণ্টিত হচ্ছে কিনা, নীতিনির্ধারকদের সেদিকেও নজর রাখতে হবে। লাগার্দ বলেন, অনেক উন্নত অর্থনীতি ও সম্ভাবনাময়ী মার্কেটেও বৈষম্য বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈষম্য বাড়তে পারে। ডাভোসের সপ্তাহব্যাপী বৈঠকের সর্বশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ক্রিস্টিন লাগার্দ। এ সময়ে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গবর্নর মার্ক কার্নিও কথা বলেন। কার্নি বলেন, সম্পদের মূল্য পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। কিন্তু দশ বছর আগের চেয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটা ভাল অবস্থার মধ্যে ছিল। কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত পুঁজি ধরে রাখতে বাধ্য করেছিল। তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিস্তার আরও শক্তিশালী হচ্ছিল। বিনিয়োগ ও নিট বাণিজ্যের কারণে জি-৭ দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি উর্ধমুখী ছিল। এই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ভোক্তারা নেতৃত্ব দেয়নি। শীঘ্রই শ্রমিকদের মজুরি বাড়তে যাচ্ছে। যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রের মজুরি ব্যবস্থার দিকে তাকান, তবে দেখতে পাবেন, তা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর হিরোশিকো ক্রুডো বলেন, জাপানী মুদ্রাস্ফীতি তার টার্গেটের খুব কাছাকাছি অবস্থায় আছে। এখানে মজুরি বাড়তে যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্যও বাড়বে। এক দশক আগে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করতে নজিরবিহীনভাবে টাকা ছাপাতে হয়েছিল।
×