ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিলড্রেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল শুরু

শিশুদের জন্য মজার মজার সিনেমা দেখার সুযোগ আগামীর স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

শিশুদের জন্য মজার মজার সিনেমা দেখার সুযোগ আগামীর স্বপ্ন

মোরসালিন মিজান ॥ শিশু কিশোরদের জন্য সত্যি সুন্দর আয়োজন। মজার মজার সিনেমা দেখ। দেখাও। নিজের যা খুশি, ফ্রেমে বন্দী কর। কোন সিনেমাটি সেরা, বড়দের মতো বুড়োদের মতো মাথা খাটাও, পুরস্কারের জন্য নির্বাচন কর। আরও কত কাজ! সবই মনের আনন্দে করছে শিশুরা। চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের এই হচ্ছে সৌন্দর্য। গত ১০ বছর ধরে চলছে। এবার ১১তম আয়োজন। সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো শনিবার। উৎসবে ৫৮টি দেশের ২ শতাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখানো হবে। ৬টি ভেন্যু। এখানেই শেষ নয়, স্কুলের ছেলে মেয়েরা বিনা টিকেটে সিনেমা উপভোগ করার সুযোগ পাবে। একই সুযোগ থাকছে অভিভাবকদের জন্য। এর পর কেউ আর ঘরে বসে থাকে? থাকবে না বলেই আশা আয়োজক চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের। বরাবরের মতোই বর্ণাঢ্য চেহারা পেয়েছে উৎসব। প্রধান ভেন্যুটি জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ছিল এখানেই। প্রাঙ্গণটি এখন চমৎকার সাজানো। এখানে ওখানে সিনেমার ডিজিট্যাল ব্যানার। দেশী-বিদেশী নির্মাতাদের ছবি। অনেকগুলো স্টল। ফেস্টিভ্যাল অফিস, ফেস্টিভ্যাল লাউঞ্জ, ডেলিগেটস, সেলস ইত্যাদি নামে ভাগ করা। বিশেষভাবে চোখে পড়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সমাবেশ। সবার গায়ে কমলা রঙের টিশার্ট। একই রকম দেখতে ছেলে মেয়েরা হৈ হুল্লোড়ে মেতেছে। দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবি তোলছে। এর মাঝেই কাজ। প্রত্যেকের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া। দায়িত্ব পালনে যারপরনাই আন্তরিক তারা। বড়রাও এসেছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। শিশুদের বন্ধু সুহৃদ হয়ে এসেছিলেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। উৎসব উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। আর যার নাম উৎসবের সঙ্গে প্রথম থেকেই জুড়ে আছে তিনি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শিশুদের প্রিয় মানুষ, শ্রদ্ধা ভালবাসার মানুষ উপস্থিত ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর বারবারা উইকহ্যাম। চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ও সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মুনীরা মোরশেদ মুন্নী কাজ করছেন নেপথ্যে। সকলের উপস্থিতিতে শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনের পাশের খোলা জায়গায় উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এ পর্বের শুরুতেই ছিল উৎসব সঙ্গীত। কবিগুরুর ‘আলো আমার আলো’ গানটিকে উৎসব সঙ্গীত হিসেবে বেছে নেয় শিশুরা। নিজেরাই গায়। পরে ছিল জাতীয় সঙ্গীত। জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। কপোত উড়িয়ে দিয়ে শান্তির পৃথিবী কামনা করা হয়। মিলনায়তনের ভেতরেও ছিল কিছু আনুষ্ঠানিকতা। প্রদীপ প্রজ্বালন আলোচনা শেষে শুরু হয় প্রদর্শনী। উদ্বোধনী দিন দেখানো হয় মেক্সিকান চলচ্চিত্র ‘টেসোরস।’ মারিয়া নভারো পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র মুগ্ধ হয়ে দেখেন বড়রাও। আজ রবিবার থেকে পুরোদমে চলবে প্রদর্শনী। উৎসবের অন্য ভেন্যুগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, ধানম-ির অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, গ্যাটে ইনস্টিটিউট, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও শিল্পকলা একাডেমি। প্রতিটি ভেন্যুতে প্রতিদিন ৪টি করে চলচ্চিত্র দেখানো হবে। প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায়। আয়োজকরা জানান, উৎসবের একটি বিভাগে দেখানো হবে কেবল বাংলাদেশী ছেলে মেয়েদের নির্মিত চলচ্চিত্র। এ বিভাগে মোট ৬৮টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছিল। নির্বাচিত ২১টি ছবি উৎসবে দেখানো হবে। প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া নির্মাতাদের মধ্যে পুরস্কৃত করা হবে ৫ জনকে। পুরস্কার হিসেবে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি থাকবে স্মারক ও সনদপত্র। মজার বিষয় হচ্ছে, পুরস্কারের জন্য যারা ছবি নির্বাচন করবে তারাও শিশু। এমন পাঁচ জনকে নিয়ে গঠিত হয়েছে জুরি বোর্ড। এই বোর্ডই বাছাই করবে সেরা চলচ্চিত্র। রয়েছে ‘ইয়ং বাংলাদেশী ট্যালেন্ট’ বিভাগ। এতে অংশ নেবেন ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ নির্মাতারা। সোস্যাল ফিল্ম সেকশনে বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’। এখানেও থাকছে প্রতিযোগিতা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগে দেখানো হবে বিভিন্ন দেশের শিশুদের বানানো চলচ্চিত্র। এর মধ্য থেকে একটি চলচ্চিত্রকে নির্বাচন করা হবে পুরস্কারের জন্য। এসবের বাইরে উৎসবে আসা প্রতিনিধিদের জন্য সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা হবে। আড্ডা দেয়া যাবে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে। কিশোর বয়সে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ রাখা হয়েছে। একাত্তরের হিরোদের সঙ্গে কথোপকথন। খুবই প্রশংসনীয় এই উদ্যোগ। উৎসব শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি।
×