ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ বেলায় কেনাকাটা- ক্রেতাকে হাতছাড়া করতে নারাজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

শেষ বেলায় কেনাকাটা- ক্রেতাকে হাতছাড়া করতে নারাজ

ওয়াজেদ হীরা ॥ মেলা শেষের দিকে। পার হয়ে গেছে ২৭দিন। মেলায় একদিকে যেমন ভাঙ্গনের সুর অন্যদিকে হরদম কেনাকাটার হিড়িক। আগত দর্শনার্থী ও বিক্রেতারাও ধরে নিয়েছেন মেলার সময় বাড়ছে না। সে হিসেবে সবাই শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন যারা মেলায় আসছেন তারাও শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার উদ্দেশেই আসছেন। আর ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে সেই কেনাকাটার দৃশ্যটা অন্য দিনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। শনিবার যাদের অফিস বা হাতে কাজ থাকে না মূলত তারাই এসেছেন মেলায়। তবে সেটা শুক্রবারের চেয়ে কম হলেও অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশ বেশি। যারা ভিড় পছন্দ করেন না তারা সকাল সকালেই বেরিয়ে পড়েন মেলার উদ্দেশে। মেলামুখী মানুষের স্রোত ছিল রাত পর্যন্ত। যে যা পেরেছে কিনে ফিরেছে ঘরে। হাজারও মানুষের ভিড়ে কারও হাত ব্যাগ ছাড়া পাওয়া যায়নি। সবাই মেলা থেকে কিছু না কিছু কিনেই ফিরেছেন। মেলায় শেষ পর্যায়ে হওয়ার কারণে বিক্রেতারা ক্রেতা হাতছাড়া করতে নারাজ। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্যে নানা রকমের ছাড়তো আছেই। খাবার পণ্য থেকে ঘরের সৌন্দর্য পণ্য পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শনিবারের আগের দিন শুক্রবারও মেলায় ধাক্কাধাক্কির এক জনস্র্রোত ছিল। দেড় লাখের ওপর মানুষ শুক্রবার মেলায় এসেছিল বলে জানিয়েছেন মেলা গেটের ইজারাদার মীর শহিদুল ইসলাম। তবে শনিবারের বিষয়ে বলেন, শনিবার অনেক সময় দর্শনার্থী অর্ধেকে নেমে আসে। তবে এই শনিবার দর্শনার্থী বেশ। বিভিন্ন প্রবেশ টিকেট কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার ব্যতীত অন্যান্য দিনের চেয়ে এদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণের মতো। ছয় বন্ধু মিলে মেলায় এসেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মেলা নিয়ে বলেন, অন্যদিন আমাদের ক্লাস থাকে। আর মেলাও শেষের দিকে একটু ছাড়ে যদি কিছু পাওয়া যায় তাই সবাই মিলে এলাম। সকালে দিকে তেমন একটা দর্শনার্থীর চাপ না থাকলেও দুপুরের পর পরই দর্শনার্থী বাড়তে থাকে। হালকা শীতল বাতাসে শীতের হালকা পোষাক জড়িয়ে নানা বয়সী মানুষ আসেন মেলায়। ইপিবির সচিব ও মেলা কমিটির পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আজ (শনিবার) পর্যন্ত মেলার সময় বাড়ানোর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাইনি তবে ব্যবসায়ীদের সময় বাড়ানোর আবেদন মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জমা আছে।’ সরেজমিন দেখা যায়, মেলার প্রায় প্রতিটি স্টলই লোকে লোকারণ্য। বিক্রয়কর্মীরা ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বরাবরের মতোই বেশি ভিড় দেখা যায় গৃহস্থালী পণ্য, ব্লেজার, প্লাস্টিকের পণ্যের জুয়েলারি, শুকনো খাবারের স্টলগুলোতে। হাজারও মানুষের ভিড়ে কষ্ট হয়েছে নারী ও শিশুদের। নানা শ্রেণী পেশার মানুষের চাপে মেলায় হাটতে কষ্ট হয়েছে নারী শিশুদের। অনেক শিশু বাবা মায়ের হাত ফসকে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া খবরও মেলা প্রচার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়েছে। এজন্য বার বার নিজের সন্তান ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য খেয়াল রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয় মেলা প্রচার কেন্দ্র থেকে। মেলায় নানা ধরনের হালকা শালের প্রতি নারীদের বেশ ঝোক ছিল। ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় নানা ধরনের শাল বিক্রি হয় মেলায়। এছাড়াও থ্রি-পিস ৫৯৯ থেকে ৯৯৯ টাকায় অফারে বিক্রি হয়েছে। জুয়েলারি ও প্রসাধনী স্টলগুলোতে পুরুষদের প্রবেশ এক প্রকার নিষিদ্ধই বলতে হবে! কেননা নারীদের ভিড়ে অনেক নারীই প্রবেশ করতে পারেনি। দলবেধে বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলায় আগতরা কেনাকাটা পর্ব সেরে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া আর সেলফি উৎসবে মেতে উঠেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের বন্ধু গ্রুপের সোহান বলেন, আমরা ১৮ জন এসেছি মেলায়। কেনাকাট খুব একটা নয়। কেউ ব্লেজার আর আমাদের মেয়ে ফ্রেন্ডরা কিছু জুয়েলারি কিনেছে। মেলায় একটা আলাদা মজা হয়। ছুটির দিনটাকে উপভোগ করলাম। এদিকে শনিবারও মেলার আশপাশের বেশ যানজট সৃষ্টি হয়। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত মানুষের অতিরিক্ত চাপের কারণেই এই জট সৃষ্টি হয়। মেলা প্রবেশ পথে পার্কিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশ অসন্তুষ্ট দেখা গেছে। এদিন বাতাসের কারণে শীত অনুভূত হওয়ায় মেলার অভ্যন্তরের চা বিক্রি ছিল বেশ জমজমাট। ১০ টাকা ১৫ টাকা আর সাত রংয়ের চা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। তবে ১০ ও ১৫ টাকার চায়ে বেশি আগ্রহ ছিল দর্শনার্থীদের। খাদ্যপণ্যের মধ্যে বিস্কুটের প্যাভিলিয়ন ও স্টলে প্রচুর সংখ্যক ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়। অলিম্পিক, কোকোলা, ফু-ওয়াং, হক, নাবিস্কো, প্রাণ, আকিজ ফুড, ইফাদ, কিষোয়ান, সজিবসহ অন্য প্যাভিলিয়ন ও স্টলে মানুষ আর মানুষ।
×