ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার সরকারের ভূয়সী প্রশংসা, পাশে থাকার ঘোষণা

মাদ্রাসা শিক্ষা জাতীয়করণ দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

মাদ্রাসা শিক্ষা জাতীয়করণ দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল মহাসমাবেশ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন লাখো আলেম ওলামাসহ মাদ্রাসা শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাশে রেখে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, সুপার, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, মসজিদের ঈমাম, পীর-মাশায়েখরা মাদ্রাসা শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি তুলে বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য চলবে না। আলেম সমাজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের অভুক্ত রেখে দেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ টেকসই হতে পারে না। মাদ্রাসায় জঙ্গীবাদের স্থান নেই দাবি করে তারা বলেছেন, যারা মাথায় কোরান ধারণ করেন তারা কখনও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিতে পারেন না। মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত এ মহাসমাবেশে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সরকারের প্রশংসা করে শিক্ষকরা বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য অনেক কিছু করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ইসলামী চিন্তা চেতনার কারণে শিক্ষামন্ত্রী সুযোগ পেলেই মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল। এজন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। সংগঠনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মহাসমাবেশ উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলের ড. মোঃ আহসানউল্লাহ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফ উল্লাহ, মাওলানা মোসাদ্দেক আল মাদানী, অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা হুসামুদ্দিন (ফুলতলী), সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জৈনপুরি, মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, প্রিন্সিপাল মোকাদেসুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল আবুল ফজল মোঃ শরিফউদ্দিন, অধ্যক্ষ মাওলানা হাসান মাসুদ, মাওলানা এ কে এম মনওয়ার আলী, মাওলানা ইদ্রিস খান, অধ্যাপক শরাফত উল্লাহ প্রমুখ। মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বীর আহমদ মমতাজী। মহাসমাবেশে সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় ১৭ হাজার মাদ্রাসার লক্ষাধিক শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। শিক্ষকদের সবার দাবি ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আলেম সমাজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য অনেক কিছু করেছেন। এখন তিনি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করতে ইবতেদায়ি থেকে কামিল পর্যন্ত সকল মাদ্রাসার শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করবেন। মহাসমাবেশ সফল করতে সারাদেশ থেকে ভোরেই গাড়িতে করে শিক্ষকরা হাজির হন। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি রাস্তার দুই ধারে সারিবদ্ধভাবে বাস রাখা হয়। অনেকেই সকাল বেলায় মঞ্চের সামনে গিয়ে বসেন। পুলিশের প্রহরায় সারিবদ্ধভাবে উদ্যানের সমাবেশস্থলে হাজির হন। ওলামারা ‘নারায়ে তকবির—আল্লাহু আকবর’ সহনানা রকম স্লোগান দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ইসলামী শিক্ষার সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন হয়েছে, যা বিগত সরকারের আমলে হয়নি। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে অধিদফতর তৈরি করা হয়েছে। এ শিক্ষায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ৩০ একর জমির ওপর ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সাধারণ বিষয়ের মতো আইসিটি ও বিজ্ঞান বিষয় চালু করা হয়েছে। অনেকে বলে থাকেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে। যাদের ইমান দুর্বল তারাই এসব প্রচারণা চালায় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদ্রাসা শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এ কারণে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, দেশে কোরআন-হাদিসের পরিপন্থী কোন আইন প্রতিষ্ঠা হবে না। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রতি বছর মেধা ও সাধারণ কোটায় সাড়ে সাত হাজার মাদ্রসা শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। কওমি মাদ্রাসাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। মাদ্রাসা জঙ্গীবাদের কারখানা নয়। দেশকে ধ্বংস করতে অনেকে ইসলামের নামে অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের সন্তানকে জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলছে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের সন্তানদের জঙ্গীবাদের সহিংস কর্মকা- থেকে রক্ষা করতে হবে। শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনাদের দাবি আমি কখনও ভুলিনি। চাকরি জাতীয়করণ ছাড়াও যে দাবিগুলো রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব। আশা করি তিনি সংশ্লিষ্ট অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলে বিবেচনা করবেন। মাদ্রাসা শিক্ষকদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় মাদ্রাসা ও ইসলাম শিক্ষার প্রতি আন্তরিক। যার দৃষ্টান্ত আপনারা অতীতে পেয়েছেন আগামীতেও পাবেন। আমি গোনাহগার বান্দা। কিন্তু ভাগ্যবান। কারণ দেশের বিপুলসংখ্যক আলেম সমাজের সঙ্গে চলাফেরা করি। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য সরকারের নানা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, সারাদেশে আমি যাই। কিন্তু এত বড় সমাবেশ দেখিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। মানুষ জঙ্গীবাদ পছন্দ করে না, প্রশ্রয় দেয় না। আজান পড়লেই মানুষ মসজিদের পথ ধরে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা ধর্মের কথা বলেন নবীর কথা বলেন। তারা ইসলামী শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে আলোকিত করছেন। যারা মাথায় কোরান ধারণ করেন তারা কখনও সন্ত্রাসী হতে পারেন না। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রোপাগা-া করা হচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলছি মাদ্রাসায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়। যারা জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত তারা ইসলাম ধর্মের ওপর কালিমালেপন করতেই এসব করছে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় মাদ্রাসা শিক্ষা ও আলেম ওলামাদের প্রতি সম্মান দেখান। বর্তমান সরকার সব সময় মাদ্রাসার উন্নয়নে আন্তরিক। আশা করি আপনাদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে তিনি পূরণ করবেন। আমিও আপনাদের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরব। এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, দেশের মাদ্রাসাগুলোতে প্রায় ৮০ লাখ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছেন। মাদ্রাসার ছাত্র মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। শিক্ষায় নৈতিকতার অভাব ও মাদকের কারণে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে আনতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইসলামী চিন্তা চেতনার কারণে শিক্ষামন্ত্রী সুযোগ পেলেই মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল। এজন্য তাদের অভিনন্দন জানাই। ইবতেদায়ি থেকে কামিল পর্যন্ত সকল মাদ্রাসার শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যদি মাদ্রাসা শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করে তাদের রুটি রুজির সহায়তা করেন তাহলে আলেমরা সুন্দর সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময় বলছি সরকারের ভাল কাজের সঙ্গে আমরা ছিলাম-আছি- থাকব। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা ছাত্র শিক্ষকদের ভোটের সংখ্যা দেড় কোটি। রাজনীতি না করলেও এই ভোট রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিএইচ হারুন বলেন, সত্য ন্যায় ও সঠিকভাবে সুন্দর সমাজ গঠনে মাদ্রাসাগুলো ভূমিকা পালন করছে। এদেশে কওমি মাদ্রাসা অবহেলিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মূল্যায়ন করেছেন। মাওলানা সাব্বীর আমমেদ মমতাজী বলেন, আমরা শেখ হাসিনার উন্নয়নের সঙ্গে আছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কা-ারি হিসেবে কাজ করতে পারেন। আমাদের নেতা এ এম এম বাহাউদ্দীন মাদ্রাসা শিক্ষক ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছেন। শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য যে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন তাতে তাদের সবার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
×