ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ ফেব্রুয়ারীর জাপার মহা-সমাবেশ স্থগিত!

ক্ষুদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা

প্রকাশিত: ০১:০০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

 ক্ষুদ্ধ দলের নেতাকর্মীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্তের পর এবার ১৫ ফেব্রুয়ারির মহা-সমাবেশ স্থগিত করল বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একুশে বইমেলার কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত কর্মসূচী স্থগিত করা হয়। নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের গ্রীণ সিগন্যাল না পাওয়া ও পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দিতে রাজী না হওয়ায় সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। শনিবার দলের পক্ষ থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ‘অনিবার্য কারণবশত জাতীয় পার্টির পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। এই উদ্যানের এক অংশে একুশের বই মেলার স্টল থাকবে বলে মেলার স্বার্থে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পূর্বঘোষিত ১৫ই ফেব্রুয়ারির মহাসমাবেশ স্থগিত করেছেন। বইমেলা শেষে মার্চ মাসের সুবিধামতো সময়ে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে তারিখ ঘোষণা করা হবে। মার্চ মাসে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের সাংগঠনিক প্রস্তুতি অব্যাহত থাকবে বলেও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহা-সমাবেশ করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি জাতীয় পার্টি। যদিও এক জানুয়ারী দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এই আয়োজন হবার কথা ছিল। পরবর্তীতে আবারো তারিখ পেছানো হয়। তবে ১৫ ফেব্রুয়ারীকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মাঠ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। দেশের সকল জেলা-উপজেলায় চিঠি পাঠানো হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছিল, প্রতি জেলা থেকে কমপক্ষে তিন হাজার মানুষের জমায়েত নিশ্চিত করতে। এছাড়া পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে আয়োজিত সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে দলের নেতাদের চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে মহা-সমাবেশ করার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না আওয়ামী লীগ। তাই আয়োজন স্থগিত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরশাদ তা শোনেননি। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নেয়া হয়। পুলিশের অনুমতিও মিলেছিল। কিন্তু বিধি বাম। সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বইমেলা ও সমাবেশের নিরাপত্তা একসঙ্গে দেয়া সম্ভব হবে না। তাই সমাবেশ পেছানোর পরামর্শ দেয়া হয়। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। কর্মসূচী থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে বিশেষ দিক- নির্দেশনা আসারও কথা ছিল। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কি হবে তাও খোলাসা হত। পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের নামের তালিকাও প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল দলটি। নেতারা জানান, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনকালী সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংলাপ চায়। দলটির প্রধান খালেদা জিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ি। সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না। আওয়ামী লীগ সংলাপে বসার বিষয়টিও নাকোচ করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে এরশাদের অবস্থান সংবিধানে পথে নির্বাচনে অংশ নেয়া। অর্থাত একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ি নির্বাচনে অংশ নিতে জাপার আপত্তি নেই। তাছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথাও বারবার বলছে দলটি। ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে জাপার পক্ষ থেকে। ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই কাজ শেষ। হেভিওয়েট প্রার্থীদের নিজ এলাকায় কাজ করারও আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসনের তালিকাও দেয়া হয়েছে জাপার পক্ষ থেকে। সেইসঙ্গে একক নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। বিএনপি নির্বাচনে এলে আবারো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার মহাজোট গঠন করে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি অনেকটা চূড়ান্ত। এমন বাস্তবতায় জাতীয় পার্টিকে মহা-সমাবেশ করতে না দেয়ার বিষয়টি দুই দলের রাজনৈতিক ঐক্যে ফাঁটল ধরাবে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। তবে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, ঐক্য নষ্ট হবার কোন সুযোগ নেই। কারণ যে দল ক্ষমতায় যাবে তাদের সঙ্গেই থাকবে জাতীয় পার্টি। তাদেরই সমর্থন দেয়া হবে। দলটির রাজনীতি এখন ক্ষমতা কেন্দ্রীক। তাই রাজনৈতিক সুসময়ের মধ্যে আরেকটি শো-ডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছিল জাপা। বিশেষ করে রংপুর সিটি নির্বাচনে জাপার বিজয়ের পর দলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই চাঙ্গা। এই সুযোগ মহা-সমাবেশ করে নিজেদের জনপ্রিয়তার জানান দিতে চেয়েছিল। যা নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করত। এরি ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ-নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চেয়েছিল দলটি। আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার আগের দিন রাত বিশেষ কারণে সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়। যদিও পরবর্তীতে নির্বাচন ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে উচ্চ আদালত।
×