ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভার্টিক্যাল পাইলে দূর হচ্ছে ১৪ খুঁটির ডিজাইন জটিলতা

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

ভার্টিক্যাল পাইলে দূর হচ্ছে ১৪ খুঁটির ডিজাইন জটিলতা

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর মাঝনদী ও মাওয়া প্রান্তে ১৪টি খুঁটি (পিয়ার) নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাচ্ছে। নদীর তলদেশের গভীরে নরম মাটির স্তর থাকায় খুঁটিগুলোর পাইল স্থাপন বিলম্ব হচ্ছিল। তবে শুক্রবার জাজিরা সার্ভিস এরিয়ায় বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বিতীয় দিনের সভায় সংশ্লিষ্ট সকলে সমস্যা সমাধানের খুব কাছে পৌঁছে গেছেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যবর্গ এবং পরামর্শক সকলের মতামতের ভিত্তিইে নতুন ডিজাইন চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। সভায় উপস্থিত থাকা এক দায়িত্বশীল জানিয়েছেন, শুক্রবারের এই সফল আলোচনা অনুযায়ী ছয়টি পাইল নরম কাদামাটির প্রায় ৭ মিটার ওপরে বালুর উপযোগী স্তরে পর্যাপ্ত গভীরতায় রাখা হবে। আর মাঝখানের একটি বাড়তি পাইল কাদামাটি ভেদ করে ১৪৫ থেকে ১৫০ মিটার পর্যন্ত গভীরে চলে যাবে, যেখানে উযযোগী বালুর স্তর রয়েছে। এতেই ঝুঁকিহীন হবে খুঁটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, শক্ত ও মজবুদ ভিতের জন্যই পদ্মা সেতুর সবগুলো পাইলই একটু হেলিয়ে বা বাঁকা করে ডিজাইন করা। তবে এই ১৪টি খুঁটির নিচে ছয়টি করে বাঁকা খুঁটির মাঝখানের একটি বাড়তি পাইল একেবারেই সোজাসোজি বসবে। তাই সোজা পাইলটিকে বলা হচ্ছে - ভার্টিক্যাল পাইল। অবশেষে এই ভার্টিক্যাল পাইলেই পদ্মা সেতুর বড় চ্যালঞ্জটির সফল সমাধান হচ্ছে। এই ১৪ খুঁটির সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ জামিলুর রেজা চৌধুরী শুক্রবার রাতে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সব কিছু চেক করা হচ্ছে, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, এখন ভাল খবর কাল বা পরশুর মধ্যে দ্বিতীয় স্প্যান বসে যাচ্ছে। দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘কাউই ইউকে লিমিটেড’ এই ১৪ খুঁটির নতুন ডিজাইন তৈরি করছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পিলারের নিচে ৯৮ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীর পাইল বসানো হচ্ছে। বিশ্বে এত গভীরে পাইল বসিয়ে সেতু নির্মাণের নজির নেই বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ১৪টি পিলারের নিচে যে গভীরতায় পাইল বসানোর কথা, এর ৩ থেকে ৭ মিটার ওপরে কাদামাটি পাওয়া গেছে। সাধারণত কাদামাটির স্তরের ওপরে থাকা বালু মাটিতে পাইলের শেষাংশ থাকা বাঞ্ছনীয়। এ জন্যই ডিজাইন অনুযায়ী আলোচিত ১৪টি খুঁটির ৮৪টি পাইল আরও গভীরে বসানো হবে, নাকি গভীরতা কমিয়ে সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হবে, এটা নিয়ে আলোচনা ছিল। মাটি থেকে পানি পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় পিলারের চারপাশে বেড়া দিয়েও এর সমাধান হতে পারে কিনা তা নিয়েও কথা উঠেছিল। তবে দায়িত্বশীল প্রকৌশরীরা শুক্রবার জানান, এই ১৪ খুঁটির নিচে মাটির তলদেশে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন গভীরতায় কাদামাটির লেয়ার রয়েছে। পাইলগুলো ১১৪ থেকে প্রায় ১২০ মিটার পর্যন্ত গভীরতায়। পাইলের নিচের অংশ নরম কাদামাটির ওপর রাখা হলে দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাইলের বটম সেকশনের মাথার অংশ পর্যাপ্ত বালুর স্তরে রাখতেই হবে। তাই সাধারণত খুঁটির বটমের মাথার ১৪ মিটারের মধ্যে কাদামাটি গ্রহণযোগ্য নয়। সূত্রগুলো জানায়, খুঁটিগুলোর ১৩০ মিটার পর্যন্ত তলদেশের পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২৭ মিটারে নরম মাটির স্তর থাকলেও পরে রয়েছে বালুর উপযোগী স্তর। তাই এর পরের আরও ১১ মিটার পর্যন্ত এমন বালুর স্তর থাকলেই ডিজাইন পরিবর্তন ছাড়াই খুঁটির পাইল বসানো সম্ভব। কারণ ১২৭ মিটারের মাথায় যেহেতু বালুর স্তর রয়েছে তাই এর নিচে ১৪ মিটার বালু থাকলেই সমস্যা সমাধান সম্ভব। একারণেই ১৪৫ মিটার পর্যন্ত গভীরতায় নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪টি পয়েন্টে পরীক্ষায় ভাল ফল পাওয়া গেছে। এসব কিছু বিবেচনায়ই বিশেষজ্ঞরা এগুচ্ছেন। দ্বিতীয় স্প্যান সমাচার পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) ৭বি স্থাপন হচ্ছে আজ শনিবার। পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, দ্বিতীয় স্প্যান বসানোর ৮০ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছেন। এর আগে কয়েকদফা এটি বসানোর কথা থাকলেও বসানো সম্ভব হয়নি। প্রকৌশলীরা জানান, দ্বিতীয় স্প্যানটি বসছে ৩৮ নম্বর এবং ৩৯ নম্বর খুঁটিতে। এটি ৩৮ নম্বর খুঁটির প্রথম স্প্যানের সঙ্গে স্থায়ীভাবে ওয়েল্ডিং করে দেয়া হবে। কিন্তু এই ওয়েল্ডিংয়ের আগে এর লোড বহনের জন্য লিফটিং ফ্রেম তৈরি করা হয়েছে। যা ১৮শ’ টন ওজন বহন করবে। কিন্তু এটি এই ওজন বহনে সক্ষম কিনা তা পরীক্ষার টেস্ট পাইল স্থাপন করা হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই টেস্ট সম্পন্ন হয় এবং সফল রিপোর্ট এসেছে। এরপরই তা অপসারণ শুরু হয়। শুক্রবার অপসারণ সম্পন্ন হয়ে নৌপথটি চলাচলযোগ্য হয়েছে। তাই শনিবার সকালেই স্প্যানবাহী জাহাজটি যথাযথ স্থান অর্থাৎ ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির মাঝামাঝি নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর ৩৬শ’ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেনের জাহাজ ‘তিয়ান ই’ স্প্যানটি পাঁজা করে নিয়ে বসিয়ে দিবে খুঁটি দু’টির ওপর। শুক্রবার প্রায় ৩২শ’ টন ওজনের স্প্যানটি ক্রিনে করেই পদ্মা সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর খুঁটির মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করছিল ‘তিয়ান ই’। এদিকে পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের তিন দিনব্যাপী সরেজমিন সভা আজ শানিবার শেষ হচ্ছে। এই সভায় পাঁচ বিদেশী বিশেষজ্ঞসহ ১১ জন বিশেষজ্ঞ অংশ নিচ্ছেন। সেতুটির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে বিশেষজ্ঞরা সভা শেষ করবেন। তাই এই সভার শেষ দিনটিও বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ।
×