ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্ক্র্যাপ ঘোষিত জাহাজ চলছে নৌবাণিজ্য দফতরের অনুমোদনে

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

স্ক্র্যাপ ঘোষিত জাহাজ চলছে নৌবাণিজ্য দফতরের অনুমোদনে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিআইডব্লিউটিসির স্ক্র্যাপ ঘোষিত নৌযান জলপথে বৈধভাবে চলছে সমুদ্র বাণিজ্য দফতরের অনুমোদনে। জোড়াতালি দেয়া আনফিট যাত্রীবাহী জাহাজ পতিত হচ্ছে নানা ধরনের দুর্ঘটনায়। কখনও ইঞ্জিন বিকল, আবার কখনও নিয়ন্ত্রণহীনতায় সেগুলো আটকা পড়ছে চরে। চলাচলের অনুপযোগী ঘোষণার পরও কোন্ অলৌকিক কারণে নৌবাণিজ্য দফতরের ফিটনেসবিহীন এগুলো চলাচল করতে পারছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে এ ধরনের জলযানকে ফিটনেস প্রদান করায় সংশ্লিষ্ট দফতরের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ আসার পথে দুটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে মাঝ সাগরে আটকে যায় এলটিসি কাজল নামের একটি জাহাজ। ঠিক এক বছর আগে গত বছরের ১২ জানুয়ারি সাত শ’ পর্যটক নিয়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ডুবোচরে আটকা পড়েছিল জাহাজ কাজল। সেবার জাহাজটির গন্তব্য ছিল টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন। ওই বছরে আরও একটি ঘটনায় জাহাজটি বিকল হয়ে সাগরে ভাসমান অবস্থায় ছিল দুইঘণ্টা। এমন বেশকিছু জাহাজ রয়েছে যেগুলোর সাগরে চলাচলের উপযুক্ততা নেই। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ঠিকই এই জলযানগুলো নৌবাণিজ্য দফতরের অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে। নৌবাণিজ্য অধিদফতরের এক পত্রে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচলকারী ‘এলসিটি কুতুবদিয়া’ এবং ‘এলসিটি কাজল’ নামের দুটি জাহাজের চলাচল নিয়ে। এর মধ্যে এলসিটি কুতুবদিয়া জাহাজে প্রথমে ১৯টি এবং পরবর্তীতে ১২টি ত্রুটি চিহ্নিত হয় সার্ভেতে। আর এলসিটি কাজল জাহাজে প্রথমে সাতটি এবং পরে আরও ১২টি মেজর ত্রুটি ধরা পড়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আলোচ্য নৌযান দুটিকে কীভাবে চলাচলের অনুমতি প্রদান করা হলো সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে অধিদফতরের রিপোর্টে। শুধু তাই নয়, জাহাজ দুটিকে স্ক্র্যাপ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিসি। কিন্তু তা সত্ত্বেও নৌবাণিজ্য অফিস ঠিকই অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে চলাচলের জন্য। অধিদফতরের নির্দেশনায় এ দুই জাহাজের অনুকূলে সার্ভে সনদ জারির পূর্বে সরেজমিনে প্রদর্শনপূর্বক হাল, মেশিনারি সরঞ্জামাদি, যাত্রী ও ক্রু একোমোডেশন সঠিক পর্যায়ে আছে কি-না এবং যাত্রীবাহী নৌযান দুটি সার্বিকভাবে উপকূলে চলাচলে উপযোগী কি-না তা নিশ্চিত হয়ে সার্ভে করার, অন্যথায় স্ক্র্যাপ ঘোষিত জাহাজকে স্ক্র্যাপ করার ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে। সার্ভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসটিসি কাজল নামের জাহাজটির ৩১টি ত্রুটির মধ্যে কয়েকটি ত্রুটি বেশ মারাত্মক। এর মধ্যে রয়েছে জাহাজের খোলে অসংখ্য ছিদ্র, খোলের প্লেট কোন রকমে জোড়াতালি দেয়া, ইঞ্জিনের ভাল্বসমূহ মরচে ধরা, প্লেট পাতলা হওয়া, ইঞ্জিনের স্ট্রাকচার দুর্বল, ম্যানহোল কভারে মরচে ধরা ইত্যাদি। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও নৌবাণিজ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এটিকে তিনমাস মেয়াদে চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন, যা বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশ ধরার পরিপন্থী। নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটিও হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই গঠিত তিন সদস্যের কমিটি অনিয়ম ও অভিযোগ তদন্তে চট্টগ্রামে আসেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ তদন্ত রিপোর্টও হিমাগারে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় কোন জাহাজের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে এর ফিটনেস বা চলাচলের উপযুক্ততা বিবেচনায় নেয়া জরুরী।
×