ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

শিম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

শিম চাষে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। শিমের ফুল আসার সময় কৃষকরা শিমের ফলন নিয়ে কিছুটা দুশ্চিতা থাকলেও শিমের মাত্রাতিরিক্ত ফলন পেয়ে খুব খুশি। দীর্ঘকাল থেকে সীতাকুন্ড উপজেলা শিমের জন্য বিখ্যাত। এ শিম চাষে ফলন পেতে তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয় না, শিমের ৫টি বিচি রোপণ করতে হয় প্রথমে। এরপর শিম গাছ বড় হলে একটি বাঁশের লাঠি লাগিয়ে শিমের ফলন ভোগ করা সম্ভব। যা অন্য কোন ফসলে কৃষক এত কম পরিশ্রম ও খরচে পেতে পারে। শিমের রাজ্য সীতাকুন্ড। ক্ষেতে শিম। জমির আলে শিম। খালের পাড়ে শিম। এমনি বাদ পড়েনি বেড়িবাঁধ আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশও। মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির কারণে ফুল ঝরে যাওয়ায় কৃষকরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় থাকলেও শিমের ফলন ভাল হয়েছে। সীতাকুন্ডের বিভিন্ন বাজারে কৃষক ক্ষেত থেকে শিম তুলে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসছে। কৃষকরাও ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সীতাকুন্ডের মোহন্তের হাট, ছোট দারোগারহাট, বড় দারোগারহাট, শুকলাল হাট, কুমিরা হাট ও মাদামবিবিরহাট প্রতিটি হাটে চাষীরা জমি থেকে শিম তুলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। আর সেখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা কম মূল্যে কিনে ট্র্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ জানান, এবার সীতাকুন্ডে ২হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রতি হেক্টরে ৩০টন করে প্রায় ৮৪ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। এখানে ল্যাইটা, বাইট্যা, পুঁটি ও ছুরি এ চার প্রকার জাতের শিম হয়। তবে এদের মধ্যে ল্যাইটা শিম এখানে বেশি ফলন হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, উপজেলার পাঁচ হাজারের বেশি চাষী শিম চাষ করে থাকে। সর্বাধিক শিম উৎপাদন হয় উপজেলার উত্তরে নুনাছড়া থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান ছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে শিম চাষ করে আরও পাঁচ হাজার মে.টন অধিক উৎপাদন করে। যার হিসাব কৃষি বিভাগে নেই। বারৈয়াঢালা পূর্ব রহমতনগর এলাকার কৃষক মো. মাসুম সিদ্দিকী বলেন, শিম চাষ করে আমরা প্রচুর লাভবান হয়েছি। এই চাষে মাত্র তিন মাস সময় দিয়ে ভাল আয় করা যায়। আমি দু’একর জমিতে শিম চাষ করেছি। প্রতিটি শিম গাছে বাঁশের খুঁটি দেয়া, কীটনাশক ওষুধ ও লেবারসহ ৫ হাজার টাকা খরচ করে ২৫ হাজার টাকার মত লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ উপজেলার বাড়বকু- শুকলালহাট উত্তর মাহমুদাবাদ এলাকার মোঃ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘অগ্রাহায়ণ মাসের শুরুতেই দুই একর জমির আমন ধানের আইলে শিম বীজ বপন করেন। দেড় মাসের মাথায় শিম পরিপক্ব হয়ে ওঠে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কাঁচা শিম বাজারে বিক্রি করছি। সপ্তাহে দুই দিন আমি শিম তুলি এবং শিম ও শিমের বিচি বিক্রি করি।’ সীতাকুন্ড পৌরসদর নামার বাজারের হোসনে আরা জানান, ‘ছোটকাল থেকে শিম লাগানো হতো ভিটে বাড়িতে। জমিতে হতো ধান। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে তাই জমি, ভিটা, রাস্তাঘাট, খাল কিছুই বাদ নেই। শিমের নানা পদ ঘরে ঘরে জনপ্রিয়। বিশেষ করে শিমের ভর্তা চট্টগ্রামসহ সারাদেশে জনপ্রিয়। - জাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী, সীতাকু- থেকে
×