ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেস্ট দলে নতুন চমক নাইম

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

টেস্ট দলে নতুন চমক নাইম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৬ সালে ঘরের মাটিতে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজে হুট করেই ডাক পেয়েছিলেন অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার সেই ডাক পাওয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, আলোচনাও হয়েছিল পক্ষে-বিপক্ষে। কিন্তু সেই মিরাজই বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়ে ইংলিশদের বিরুদ্ধে প্রথমবার টেস্ট জয়ের নায়ক হয়ে যান এবং ধামাচাপ দেন সব জল্পনা-কল্পনার। এবার তেমনই একটি কৌশলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের দলে ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হাসানকে ডাকা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আসন্ন দুই টেস্টের সিরিজের জন্য প্রথম টেস্টের ১৪ সদস্যের দল ঘোষণা করে। গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট দলে খেলা সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার এবং দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও শুভাশীষ রায় বাদ পড়েছেন। বিশ্রামে থাকায় খেলেননি সাকিব আল হাসান। তিনি এবার অধিনায়ক হিসেবেই ফিরেছেন। তবে চোখের প্রদাহ কাটিয়ে ফিরেছেন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে ব্যাটে-বলে দুরন্ত এবং ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছিলেন মিরাজ। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা বেশ কমই ছিল। এরপরও ইংল্যান্ডের মতো একটি দলের বিপক্ষে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তার টেস্ট দলে ডাক পাওয়া ছিল অভাবনীয় ব্যাপারই। পরে তিনিই দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নেন এবং প্রথম টেস্টেই ক্রিকেট পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো পরাজিত করেন। এখন মিরাজ টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য। প্রতিপক্ষ এবার শ্রীলঙ্কা যার কোচ এখন চান্দিকা হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশের কোচ থাকাবস্থায় নানাবিধ কৌশলের অংশ হিসেবে তিনি মিরাজকে দলে ভিড়িয়েছিলেন। স্বাগতিক দলের খুঁটিনাটি সম্পর্কে সম্যক ধারণাও রাখেন। সেই চিন্তা-চেতনায় কিছু ঘাটতির সৃষ্টি করতেই এবার বিসিবি নির্বাচকরা হুট করেই দলে ডেকেছেন ১৭ বছর বয়সের কিশোর নাঈমকে। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজকে আমরা এভাবেই অভিষেক করিয়েছিলাম। ও কিন্তু তখন অনভিজ্ঞ ছিল। অনুর্ধ-১৯ থেকে এইচপিতে ছিল। যেহেতু নাঈম হাসানও অনুর্ধ-১৯ দলে আছে। গত ইমার্জিং কাপেও ছিল। তার ধারাবাহিক ভাল বোলিং করার সক্ষমতা আছে। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপেও সে ভাল বোলিং করেছে। আর আমাদের একজন অতিরিক্ত স্পিনার রাখার চিন্তা ছিল। সেই হিসেবেই তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ এটিকে বড় চমকই বলা যায়। কারণ নাঈম বর্তমানে অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে যুব বিশ্বকাপ খেলতে নিউজিল্যান্ডে অবস্থান করছেন। যুব দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য স্পিনার এ চট্টগ্রামের তরুণ। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কিংবা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এখনও খুব বেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ পাননি। ৪টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ৯টি এবং ৮টি ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলে ৫টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এ বিষয়ে নান্নু বলেন, ‘মিরাজ অনেক ম্যাচ খেলেছিল। লঙ্গার ভার্সনও অনেক খেলেছিল। কিন্তু নাঈম তা নয়। যেহেতু আমাদের একটা প্রোগ্রামের মধ্যে ও আছে, সেহেতু আমরা মনে করি যে, ওর কাছে যে যোগ্যতা আছে তাতে আমাদের মনে হয় সে ভাল করবে।’ শুক্রবার টেস্ট দল ঘোষণার দিনেও নাঈম নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউনে ভারতীয় যুব দলের বিপক্ষে খেলেছেন এবং ২ উইকেট নিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিতে দল হেরে যাওয়ায় রবিবার পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ড অনুর্ধ-১৯ দলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে হবে। কিন্তু সেই ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরবেন নাঈম এবং যোগ দেবেন টেস্ট দলে। ৩১ জানুয়ারি তারই জন্মস্থান চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট। ওই টেস্টেই অভিষেক হয়ে যেতে পারে নাঈমের। টেস্ট দলের নতুন যুগ শুরু হয়ে যাবে ওই ম্যাচের মধ্যে দিয়েই। গত ৬ বছর বাংলাদেশকে টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহীম। এবার নতুন করে অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়া সাকিব আল হাসানের অধীনে খেলবে বাংলাদেশ দল। সেই দলে সাকিব সতীর্থ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে পাচ্ছেন নতুন করে। এর মধ্যে নিশ্চিতভাবে তারজন্য বড় চমক নাঈম। সাকিবের ডেপুটি হিসেবে যাত্রা শুরু হবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরও। নাঈমের বিষয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘দেশের মাটিতে যেহেতু সিরিজ এটা চিন্তা করেই দল সাজিয়েছি। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পারফর্মেন্স মূল্যায়ন করা হয়েছে। সবকিছু হিসেব করে বিশেষ করে স্পিনের দিকে নজর দিয়েছি। নতুন মুখ হিসেবে অনুর্ধ-১৯-এর স্পিনার নাঈম হাসানকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। এটা ছাড়া কামরুল ইসলাম রাব্বিকে এনেছি। পুরনো বলে তার সুইং করানোর ক্ষমতা আছে। সেই হিসেবে ওকে আনা হয়েছে। চোখের অসুস্থতার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ মিস করেছিল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তাকে ফেরানো হয়েছে।’ দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে সবসময়ই স্পিনকে গুরুত্ব দিয়েই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নেমেছে বাংলাদেশ দল। এবারও তেমন চিন্তা করা হয়েছে। তবে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনারদের মধ্যে একজন রঙ্গনা হেরাথ আছেন শ্রীলঙ্কা দলে। অভিজ্ঞ হেরাথ বাঁহাতি স্পিনার। সে চিন্তা থেকেও অফস্পিনারদের নিয়ে দল গড়া হয়ে থাকতে পারে। মিরাজ ও নাঈম দু’জনই ডানহাতি অফস্পিনার। এ বিষয়ে নান্নু বলেন, ‘আমরা তো হোমে যত সিরিজ খেলেছি, তাতে স্পিনের ওপরই বেশি জোর দিয়েছি। এ জন্য আমরা একজন স্পিনার ব্যাকআপ হিসেবে রাখছি।’ মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরের দলে ছিলেন পেসার রাব্বি। তবে ফর্মহীনতায় বাদ পড়েছিলেন। এখন আবার ফিরেছেন। কিন্তু ফর্মহীনতায় বাদ পড়েছেন তাসকিন, শুভাশীষ, সাব্বির ও সৌম্য। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ দল ॥ সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (সহঅধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তাইজুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, কামরুল ইসলাম রাব্বি, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন ও নাঈম হাসান।
×