ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ প্রায় ৩১ বছর ধরে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে কোন টুর্নামেন্ট খেলে তা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেও জিততে পারেনি। আজ ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলেই সেই স্বপ্ন সফল হবে। ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ। পারবে মাশরাফিবাহিনী শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা জিততে? ইতিহাস গড়তে? আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে যখন পা দেয় বাংলাদেশ তখন সালটি ছিল ১৯৮৬। সেই বছর ৩১ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলা দিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা শুরু হয়। তিন দলের এশিয়া কাপ খেলা দিয়েই আবার বাংলাদেশ সেই পথে পা রাখে। এই এশিয়া কাপে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলে বাংলাদেশ। এরপর এক এক করে ১২বার তিন দলের সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট হিসেব করলে পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে পাঁচবার। এশিয়া কাপ খেলে মোট ১১ বার। কোনবারই শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে পারেননি বাংলাদেশের কোন অধিনায়ক। শুধু একবার ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে বারমুডা, কানাডার সঙ্গে এ্যাসোসিয়েটস ট্রাইসিরিজ খেলে হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেটি আইসিসির ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের একটি ওয়ানডে সিরিজ ছিল। সেখানে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন টেস্ট খেলুড়ে দল ছিল না। এছাড়া আর কোন ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ১৯৯০ সালে আবারও তিন দলের (ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ) এশিয়া কাপে খেলে বাংলাদেশ। ১৯৯৭ সালে প্রেসিডেন্টস কাপ (বাংলাদেশ, কেনিয়া, জিম্বাবুইয়ে), ১৯৯৮ সালে সিলভার জুবিলি ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান), একই বছর কোকাকোলা ট্রায়াঙ্গুলার সিরিজ (বাংলাদেশ, ভারত, কেনিয়া), ১৯৯৯ সালে মেরিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট (বাংলাদেশ, জিম্বাবুইয়ে, কেনিয়া), ২০০৩ সালে টিভিএস কাপ (বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা), ২০০৫ সালে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ (বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া), ২০০৭ সালে এ্যাসোসিয়েটস ট্রাইসিরিজ (বাংলাদেশ, বারমুডা, কানাডা), ২০০৮ সালে কিটপ্লাই কাপ (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান), ২০০৯ সালে ট্রাইনেশন টুর্নামেন্ট (বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুইয়ে), ২০১০ সালে ট্রাইনেশন টুর্নামেন্ট (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা), ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ড ট্রাইনেশন সিরিজ (বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড) খেলে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যে ট্রাইনেশন টুর্নামেন্ট খেলে বাংলাদেশ সেই টুর্নামেন্টে ফাইনালে খেলে দল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে যায়। প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে দল থাকা ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। সিরিজটি দেশের মাটিতেই হয়। কিন্তু শিরোপা জিততে পারেনি। এবার যখন টেস্ট খেলুড়ে দল থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বারের মতো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলছে তখনও প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাই। এবার বাংলাদেশ যে শক্তিশালী দল তাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ জন্য সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে যেভাবে খেলেছে বাংলাদেশ সেভাবে খেলতে হবে। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৮ উইকেটে, দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে ও আবার জিম্বাবুইয়েকে ৯১ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়েছে। ব্যাটিং-বোলিং নৈপুণ্য দুর্দান্তভাবে চোখে পড়েছে। ফাইনালে বাংলাদেশকে জিততে হলে একই ধরনের খেলা খেলতে হবে। তাহলেই শিরোপা জয়ের সুযোগ রয়েছে। ইতিহাস গড়ার সুযোগও রয়েছে। কিন্তু যদি চতুর্থ ম্যাচের মতো খেলা হয় তাহলে আবারও শিরোপা স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ফাইনালের আগে সিরিজের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। ৮২ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যানরা বাজেভাবে আউট হয়েছেন। এমনই করুণ অবস্থা হয়েছে ব্যাটসম্যানদের যে এক শ’ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। এমন অবস্থা হলে তো শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যাবে। শ্রীলঙ্কা দলটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর টানা হারের মধ্যে ছিল। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও হেরেছে। জিম্বাবুইয়ের কাছে ১২ রানে হারের পর বাংলাদেশের কাছে ১৬৩ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে। তখন ফাইনালের দল হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে জিম্বাবুইয়েকেই দেখা হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে যেই জিম্বাবুইয়েকে ৫ উইকেটে হারাল, ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। হাতুরাসিংহের দল এমনই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশকে শেষ ম্যাচটিতে পাত্তাই দেয়নি। শ্রীলঙ্কা যে খেলা দেখায় তাতে ফাইনালে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কারণ রয়েছে। চন্দিকা হাতুরাসিংহে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। এখন শ্রীলঙ্কার কোচ। এই সিরিজের আগেই শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের শক্তি-দুর্বলতা খুব ভাল করে জানেন। শেষ ম্যাচটিতে হাতুরাসিংহের পরিকল্পনাতেই খেলে জিতে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতাগুলোতে ভালভাবে আঘাত হানেন। তাতেই শ্রীলঙ্কা এত দুর্দান্তভাবে সিরিজে ফিরেছে। ফাইনালেও খেলা নিশ্চিত করেছে। এখন আজ ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে যদি না ঠেকানো যায় তাহলে আফসোসই পুঁজি হয়ে থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের। এত সুন্দরভাবে এবং দাপটের সঙ্গে সিরিজে খেলে যদি শিরোপা জেতা না যায় তাহলে আর কখন যাবে? সেই প্রশ্নই উঠবে। ক্রিকেটাররা অবশ্য শিরোপা জেতায় বদ্ধপরিকর। অনেক সতর্ক। যে ভুল শেষ ম্যাচটিতে হয়েছে তা আর করতে চান না। সেই ভুলগুলো না হলেই তো হয়ে যায়। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে দল থাকা ত্রিদেশীয় সিরিজে জিতে যায়। যে ইতিহাস কখন গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও মিরপুরেই ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলেও পারেনি। আজ জিতলে মাশরাফির নেতৃত্বে সেই ইতিহাস গড়া হয়ে যায়। এমনকি মিরপুরেই এশিয়া কাপ ওয়ানডে ও টি২০তে একবার করে ফাইনালে খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেই ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?
×