ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিতাড়ন দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিতাড়ন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতে ওঠার জন্য কতিপয় অসৎ ব্যক্তির সহযোগিতায় রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপচেষ্টায় নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ সংগঠনের আহ্বায়ক লেখক ও গবেষক আবীর আহাদ। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তর সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি আত্মপ্রকাশ করার ঘোষণা জানায়। মুক্তিযোদ্ধার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বিতাড়নের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলায় এ সংগঠনের লক্ষ্য। সংবাদ সম্মেলনে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিল ও মুক্তিযোদ্ধার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন আবীর আহাদ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কোন অবস্থাতেই দেড় লাখের বেশি হবে না। ইতোমধ্যে ভারতীয় তালিকা ছাড়া লাল মুক্তিবার্তা, গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তালিকায় প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজারের ঊর্ধ্বে। অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি নতুন প্রায় পৌনে দু লাখ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করে জামুকাতে সুপারিশ করেছে। যার ৯৯ শতাংশই ভুয়া। এছাড়া যাছাই বাছাই কমিটি আগের ষাট হাজার ভুয়া মুক্তিাযোদ্ধাদের বিতাড়নের পরিবর্তে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে তাদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করেছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করার জন্য ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত সংজ্ঞা উল্লেখ করে আবীর আহাদ বলেন, সেই সংজ্ঞায় বলা হয়েছিলো- ‘মুক্তিযোদ্ধা মানে যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত যেকোন সংগঠিত দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।’ কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত সংজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গোঁজামিলের সংজ্ঞা দিয়ে হাজার হাজার অ-মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ফেলেছে। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে বর্তমান মন্ত্রীর নেতৃত্বে জামুকা একটি নির্দেশিকা তৈরি করে। ভারতীয় তালিকা ও লাল মুক্তিবার্তা তালিকা বাদ রেখে, গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সনদধারীসহ অনলাইলে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করে, ভুয়া বাতিল ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করে। আবীর আহাদ বলেন, জামুকার নির্দেশিকায় ভারতীয় ও লাল মুক্তিবার্তার মুক্তিযোদ্ধা-এমন তিনজনের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে যেকোন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবেন বলে একটি আত্মঘাতী ফর্মুলা নির্দেশিকায় জুড়ে দেয়া হয়। ফলে যাচাই বাচাই কমিটির অধিকাংশ সভাপতি/সদস্য ও সুযোগ সন্ধানীরা এটিকে বাণিজ্যিক হাতিয়ার বানিয়ে ফেলে। এ মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ, তারা দুই থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে অ-মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর নামে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। এর ভাগ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জামুকা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডসহ ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ ও পাতি নেতারা পেয়েছেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার বিষয়ে বহুবার রেডিও টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পরও কোন মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে রয়েছেন বলে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারপরও কেউ কেউ যদি বাদ পড়ে থাকেন, অন্য প্রক্রিয়ায় তাদের বিষয়ে বিবেচনা করা যেত। প্রশ্ন রেখে রণাঙ্গনের এই যোদ্ধা বলেন, এতো বছর পর এমন কী হলো যে, ঢাক ঢোল পিটিয়ে, ‘কারা কারা মুক্তিযোদ্ধা হতে চান’ এ জাতীয় ঘোষণা দেয়া হল? আসলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুর্নীতিবাজচক্র বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি নিয়ে এমন কিছু পদ্ধতি বের করে ওই সব অপকর্ম করেছে। মূলত মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা, তাদের সন্তানদের চাকরির কোটা ও অন্যান্য কিছু সুযোগ হাতিয়ে নেয়া এবং রাজাকাররা জাতে ওঠার সুযোগ পেয়ে অর্থকড়ি নিয়ে নেমে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেন এ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অপসারণ করেন। স্বাধীনতার এতো বছরেও ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ এ শব্দ দুটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি না পাওয়া বিস্ময় প্রকাশ করে, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দ দুইটা সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানেরও দাবি জানান আবীর আহাদ। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক- মোঃ রুস্তম আলী মোল্লা, মোঃ ফজলুল হক, মোঃ সারওয়ার হোসেন, শেখ মোঃ কাশেম, মোঃ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ শরীফ, মোঃ কামালুজ্জামান, সদস্য সচিব-মোঃ আবুল বাশারসহ নতুন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ঢাকার বাইরে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা যাছাই-বাছাইয়ে অভিযোগ ওঠা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি করে দেয়া হবে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ইতোমধ্যে প্রায় ছয় হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ে যেসব এলাকায় ১০ ভাগের বেশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাবদ্ধ হয়েছে, সেসব এলাকায় অনিয়ম হয়েছে। সেখানে নতুন কমিটি করে পুনরায় যাচাই বাছাই করা হবে।
×