ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ফাইনাল আজ

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ফাইনাল আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আজ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ১২টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়েই সিরিজের শিরোপা ফয়সালা হয়ে যাবে। কোন্ দল জিতবে শিরোপা? এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। সিরিজে বাংলাদেশ যেভাবে দাপটের সঙ্গে খেলছিল, তাতে চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ। তা ভেবেই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে যেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ তাতে করে ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাসই মিলছে। শ্রীলঙ্কাকে শুরুতে শক্তিশালী দল মনে করা হয়নি। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লঙ্কানরা তাতে বাংলাদেশ ফেভারিট তা এখন আর বলা যাচ্ছে না। সিরিজে বাংলাদেশ প্রথম তিন ম্যাচে দাপট দেখিয়েছে। জিম্বাবুইয়েকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দেয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দেয়নি। ১৬৩ রানে হারিয়ে দিয়েছে। এরপর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৯১ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে উড়ছিল বাংলাদেশ। সেই ওড়া চতুর্থ ম্যাচে এসে থেমেছে। প্রথম দুই ম্যাচে জিতেই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর লক্ষ্য ছিল, ফাইনালের আগে চার ম্যাচের চারটিতেই জেতা। তা সম্ভবও ছিল। যেভাবে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখাতে থাকেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান ও বোলাররা, তাতে চারটি ম্যাচেই জিতবে, এমনকি ফাইনালেও জিতবে; তা ধরেই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে এসে বাংলাদেশ এমনই বাজে খেলা দেখায় তাতেই শঙ্কা জেগে যায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮২ রানে অলআউট হওয়ার পর ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। ২২৯ বল বাকি থাকতে হারে। দেশের মাটিতে এত বড় হার কখনই হজম করতে হয়নি বাংলাদেশকে। যে শ্রীলঙ্কা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়েছিল, তারাই কিনা বাংলাদেশকে এমন লজ্জার হার উপহার দিল। তখনই শঙ্কা জাগা শুরু হয়ে যায়। ফাইনালে তাহলে বাংলাদেশের জন্য জয় পাওয়া সহজ হবে না। অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই জিততে হবে। সেই কঠিন পথ যে বাংলাদেশের সামনে আছে তা শ্রীলঙ্কা শেষ ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়েছে। দলটি প্রথম দুই ম্যাচে এমনভাবে হেরেছে, মনে হয়েছিল বিদায় নেবে। ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাকবে জিম্বাবুইয়েই। কিন্তু প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের কাছে ১২ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ১৬৩ রানে হারের পরই ঘুরে দাঁড়ায়। তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে টিকে থাকে। যখন বাংলাদেশের কাছে বড় ব্যবধানে হারলে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়ার মতো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে শ্রীলঙ্কা, এমন সময়ই ধামাকা দেখায়। পুরো বদল হয়ে যাওয়া একটি দলকে দেখা মিলে। বাংলাদেশকে পাত্তাই দেয়নি। উল্টো বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে যে নৈপুণ্য উপস্থাপন করে শ্রীলঙ্কা তা বজায় থাকলে তো বাংলাদেশের আজ বিপদই আছে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সেই শিরোপা জেতার আশা অপূর্ণই থেকে যাবে। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিকে আমলে নিতে রাজি নন। তিনি ম্যাচটির স্মৃতি ভুলে যেতে চান। একটা বাজে দিনের হিসেব মাথায় রেখে তা বাদ দিয়ে দিতে চান। ভুল যা হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফাইনালে ছেলেদের ভাল খেলা দেখতে চান। যে করেই হোক শিরোপা জিততে চান মাশরাফি। আজ ফাইনালের আগে শুক্রবার বলেছেন, ‘ফাইনাল ম্যাচে জেতার জন্য আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে আছি। এটা সত্যি কথা। যদি হতে পারি তবে প্রথমবারের মতো হবে। আসলে হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে থাকলে আমার কাছে মনে হয় বেশি চাপ এসে দাঁড়াবে। বিশেষ করে ফাইনাল ম্যাচে একটা চাপ থাকেই। যদি বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি জিততাম তাও থাকতো। আমার কাছে মনে হয় গতকাল (বৃহস্পতিবার) হারাতে চাপটা আরও কমে যাওয়ার কথা। চাপ সবসময়ই একটা থাকে যা থাকবেই এবং জয়টা আমরা অবশ্যই চাই।’ শ্রীলঙ্কা দলে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস নেই। ওপেনার কুশল পেরেরাও ইনজুরিতে। দুই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছাড়াও জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ভালভাবেই জয় তুলে নিয়েছে। গত বছর টানা হারের পর ত্রিদেশীয় সিরিজেও প্রথম দুই ম্যাচে হেরেছে। জিম্বাবুইয়ের কাছে হেরেছে। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা অসাধারণ। অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল এখন ফাইনাল ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণভাবে খেলতে হবে। তাহলেই কেবল ভাল ফলাফল সম্ভব। কালকের (বৃহস্পতিবার) ম্যাচের জন্য আমাদের বিশেষ কিছু পরিকল্পনা আছে। আমরা যদি তা প্রয়োগ করতে পারি তাহলে ভাল ফলাফল পাওয়া কঠিন হবে না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ফাইনালের আগে জয়টা সত্যিই অসাধারণ ছিল। আমরা আসলে ফাইনালে খেলার বিষয়টি মাথায় রেখে এদিন খেলিনি। আমরা দল হিসেবে খেলেছি। আমি শেষ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেছি যে আমরা একটি ম্যাচকে মাথায় রেখে খেলব। তাই করেছি। ফাইনালেও তেমনি খেলব। কিছু মৌলিক বিষয় এখানে আছে। আমাদের উচিত হবে ম্যাচের পরিকল্পনায় অটুট থাকা এবং তার সফল বাস্তবায়ন ঘটানো।’ শিরোপা এখন কার হাতে ধরা দেয় সেই অপেক্ষাতেই আছেন সবাই। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর বিপক্ষে কোন ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ। সেই প্রত্যাশাই সবার। আজই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ফাইনাল ম্যাচ শেষে সেই শিরোপার ফয়সালা হয়ে যাবে।
×