ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকরা ঘুষের বিনিময়ে এ কাজে সহযোগিতা করেন

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ ভাগ পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ না করেই বেতন পান!

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

 দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ ভাগ পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ না  করেই বেতন পান!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৪ নং ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের একজন আজমত আলী। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন ভোর ৩টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সড়ক পরিচ্ছন্নতাসহ বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত থাকার কথা তার। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তিনি কাজে অনুপস্থিত। ডিএসসিসির মোবাইল ট্রাকিং বলছে, গত বছরের নবেম্বরে তার অবস্থান ছিল কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে। কিন্তু, কাজ না করেই নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছেন আজমত আলী! অথচ তার মতো পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়মিত তদারকির জন্য ডিএসসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে পরিদর্শক আছেন। পাশাপাশি কর্মীদের ফাঁকিবাজি রোধে গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় চালু করা হয়েছে ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম। ফলে সহজেই জানা যায় কারা সক্রিয় আর কারা অনুপস্থিত। শুধু আজমত আলী নন, ডিএসসিসির ৩০ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা কর্মীই দায়িত্বে অবহেলা করেন। প্রতি মাসে মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেমে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কাজ না করেই এই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নিয়মিত বেতনভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু ফাঁকিবাজ কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতি মাসেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ৩০ শতাংশ অনুপস্থিত থাকেন কাজে। কিন্তু কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না। এখানে বিশাল একটি সিন্ডিকেট আছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিতে সাহস পান না।’ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটির ৫৭টি ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ৫ হাজার ২১৭জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ৫৭জন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক (সিআই) রয়েছেন। এসব কর্মীর প্রত্যেককেই গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় একটি করে সিমকার্ড দেয়া হয়েছে। তাই মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেমের মধ্যে হাজিরা নিশ্চিত হলেই কেবল তাদের বেতন দেয়ার কথা। ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বারবার এমন নির্দেশ দিলেও অনুপস্থিত কর্মীদের হাজিরা গণনা না করেই বেতন দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েক মাস ধরে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে হাজিরা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেমের জন্য প্রতি মাসে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে প্রায় তিন লাখ টাকা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তাদের অনেকেই রাস্তাঘাটে না এসে অন্যকে বদলি হিসেবে পাঠিয়ে কাজ করাচ্ছেন। মাস শেষে নিজের বেতন থেকে বদলি কর্মীকে নামমাত্র টাকা দিচ্ছেন তারা। কাজ না করা এসব কর্মী বেশ প্রভাবশালী। তাদের ‘ভিআইপি ক্লিনার’ ও বলে থাকেন অনেকেই। তাদের দাপটে অতিষ্ঠ নিয়মিত কাজ করা অন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। তাদের অনেকেই আবার কাজ করে থাকেন বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তারা প্রভাব খাটিয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে এসব চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তবে নিজের পরিবর্তে অন্যকে দিয়ে কাজ করানোর ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শককে (সিআই)। বেতন ভেদে ঘুষের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অন্যথায় বেতন আটকে দেন সিআই। কারণ তখন হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেখান হয় পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে। এ কারণে তারা এই লেনদেন মেনেও নেন বলে জানা গেছে। ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, এই সংস্থার ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একজন করে পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক রয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে আয়তন ভেদে ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকেন। তাদের মধ্যে মাঠে থাকেন না এক-তৃতীয়াংশ কর্মী। উর্ধতন কর্মকর্তার মাঠপর্যায়ের পরীক্ষায় বেশ কয়েকবার ধরা পড়েছে বিষয়টি। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী মাস থেকে মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের হাজিরা নির্ধারণ হবে। বিভিন্ন সমস্যা ও কারিগরি ত্রুটির কারণে এতদিন তা কার্যকর করা যায়নি।’ কাজে অনুপস্থিত থেকেও বেতন নেয়া প্রসঙ্গ তুলে ধরলে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘এ অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বললেই চলে। তারা পড়াশোনা জানেন না। মোবাইল ফোনও ব্যবহার করেন না। আবার ফোন ব্যবহারে অনেকে অজ্ঞ। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণফোনের মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম সফট্ওয়্যারে ত্রুটি ধরা পড়েছে। তারাও বিষয়টি সমাধানে সহযোগিতা করছেন।’
×