ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল সিটি নির্বাচন

আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ বিএনপিতে মতানৈক্য

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ বিএনপিতে মতানৈক্য

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে শীতের মাঝেও উষ্ণতা বাড়ছে রাজনীতিতে। যেকোন মুহুূর্তে ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনী তফসিল। তাই নগর পিতার আসনে বসতে দলীয় মনোনায়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে প্রার্থীদের। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনায় রয়েছেন ২০ দলীয় জোট ও মহাজোটের প্রার্থীরা। তবে লড়াইটা যে ক্ষমতাসীনদের জন্য সহজ নয়, তা বলে দেয় ২০১৫ সালের বিসিসি নির্বাচনের ইতিহাস। আধুনিক বরিশালের রূপকার ও জননন্দিত মেয়র হয়েও শওকত হোসেন হিরণ সেই নির্বাচনে ১৬ হাজার ৯৪৬ ভোটে হেরে যান বিএনপির প্রার্থী ও বর্তমান সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের কাছে। ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী বাছাইয়ে বরিশালে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু এর বাইরেও প্রয়াত সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের স্ত্রী সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম, যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন দলীয় সমর্থন পেয়ে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াই করতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ের পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লবিং করে যাচ্ছেন। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রত্যেক ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ অভিযান করেছেন। প্রত্যেকটি কর্মসূচীতে তার সমর্থকেরা মহানগর আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়েছেন। এছাড়াও ৩০টি ওয়ার্ডের স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল জানান, মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পর মেয়র পদে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সাদিক আব্দুল্লাহ দিন-রাত সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভূমিকা রেখে দলকে শক্তিশালী করছেন। পাশাপাশি মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখে চলছেন। নগরীর একাধিক ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদকরা জানান, শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুতে দল কঠিন সঙ্কটের মধ্যে পরেছিল। আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ওই সময় মহানগর আওয়ামী লীগের কোন পদ-পদবিতে না থাকলেও তখন সকলকে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বর্তমানে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে সকল কোন্দল নিরসন করে সকলকে নিয়ে কাজ করছেন। প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ মেয়র থাকাকালীন নগরীর উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছিলেন গত সাড়ে চার বছরে বিএনপির মেয়র কামাল তার শিকিভাগও পারেননি। বিসিসিতে আয়ের চেয়ে ব্যয় কয়েকগুণ বেশি থাকায় কামালের পুরো সময়টা জুড়ে ছিল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতা। সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ বলেন, তার স্বামীর অসমাপ্ত কাজ একমাত্র তিনিই সমাপ্ত করতে পারবেন। কেননা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে নিয়ে হিরণের যে পরিকল্পনা সেটা তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। ওই পরিকল্পনা তিনি বাস্তবায়ন করতে চান। মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, আমি বিগত নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। ছাত্র রাজনীতি থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর দলের জন্য শ্রম দিয়েছি। বিরোধীদলে থাকাকালীন দলকে সংঘটিত করতে কাউকে তখন পাওয়া যায়নি। মামুন বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিবেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। অপরদিকে সেরনিয়াবাত পরিবারের সন্তান সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছোট ছেলে এবং আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সর্বশক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগ যখন সিটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত তখন বিএনপিতে নেই কোন নির্বাচনী আমেজ। বিএনপি দলীয় বর্তমান সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল পূর্বে জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতির পদে থাকলেও বর্তমানে দলে তার কোন পদ-পদবি নেই। নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে গত চার বছর সারাদেশে কেবল আহসান হাবিব কামালই সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন সুকৌশলে। এ নিয়ে খোঁদ বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝেই আহসান হাবিব কামালকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। তবে পৌরসভার প্রশাসক, চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়রের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দলের পাশে থাকা এ নেতা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বর্তমান সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, আমি বিগত সময়ে দলের প্রার্থী ছিলাম। দলের হয়ে কাজ করেছি। এখনও দলের সঙ্গে আছি। আশা করি বিএনপির হাইকমান্ড আমাকে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করবে। সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব পদে রয়েছেন। সিটি নির্বাচনে বিএনপির একক নিয়ন্ত্রণ কর্তা মজিবর রহমান সরোয়ারের দিকেই তাকিয়ে আছেন প্রথম সারির নেতাকর্মীরা। কেননা কোন্দল কাটিয়ে মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে এখানকার নেতারা ঐক্যবদ্ধ। দলের হাইকমান্ড সরোয়ারের সিদ্ধান্ত ছাড়া সিটি নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণ করবেন না বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এমনকি দলের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত মজিবর রহমান সরোয়ারই প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন সরোয়ারের ঘনিষ্ঠজনরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, দলের স্বার্থে তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বরাবরের ন্যায় এবারও বিএনপি প্রার্থীরই বিজয় হবে। সরোয়ার-কামালের পাশাপাশি জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁনও প্রার্থী হতে আগ্রহী। দলের এ ত্যাগী নেতা একাধিকবার মেয়র পদে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বহিষ্কার হয়েছেন। সর্বশেষ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তা প্রত্যাহারে তাকে জেলা বিএনপির সভাপতির পদে ফিরিয়ে আনা হয়। চাঁন জানান, বিগত নির্বাচনগুলোতে আমি দলের মনোনয়ন না পেলেও প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব পালন করেছি। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলের শীর্ষ মহল তাকেই মনোনয়ন দিবেন বলে তিনি আশাবাদী। এছাড়াও প্রার্থীর খাতায় যুক্ত হয়েছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ বিলকিস জাহান শিরিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন, বর্তমান প্যানেল মেয়র ও মহানগর বিএনপির সহসভাপতি কেএম শহিদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদার ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেত্রী আফরোজা খানম নাছরিনের নাম।
×