ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমছে

তিনটি উট পাখি ছাড়া ৭ বছরে নতুন কোন প্রাণী আনা হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

তিনটি উট পাখি ছাড়া ৭ বছরে নতুন কোন প্রাণী আনা হয়নি

ওয়াজেদ হীরা ॥ জাতীয় চিড়িয়াখানায় দীর্ঘদিন ধরে আনা হচ্ছে না নতুন কোন প্রাণী। বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছরে মারা গেছে অনেক প্রাণী। একই সঙ্গে অনেকগুলো বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছে। আর এসবের মধ্যে গত সাত বছরে নতুন প্রাণী আনা প্রায় বন্ধ। দর্শকদেরও নতুন প্রাণীর চাহিদা ও দাবি রয়েছে। আর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রাণী আনা না হলেও এর সংখ্যা বেড়েছে এবং একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। খুব শীঘ্রই নতুন প্রাণী আসবে বলেও আশা দেখিয়েছেন। মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় বিনোদনের জন্য দর্শনার্থীরা পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন। বছরের পর বছর ধরে একই ধরনের বাঘ, সিংহ, হরিণ কিংবা ময়ূর দেখে কিছুটা অরুচি ধরেছে দর্শনার্থীদের মনেও। মিরপুরের চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বের প্রাণীদের অবস্থান ও কর্মকান্ড। দর্শনার্থীও তেমন একটা নেই। হরিণ ও সাপ দেখতে কিছু দর্শক পাওয়া গেলেও বাঘের ডেরায় প্রায় শূন্য। বন্ধুদের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় আসা হামিদুল বলেন, আমরা প্রায়ই একটু ঘুরতে আসি তবে এখানে বিশেষ কিছু নেই, নতুনত্ব নেই। তবুও একটু সময় কাটাতে এর ভিতরে হাটি। হামিদুলের মতো আরও একাধিক দর্শনার্থীও প্রকাশ করেছেন হতাশা। চিড়িয়াখানার দেয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ১শ’ ৩৭ প্রজাতির ২ হাজার ৬শ’ ৯১ প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে জিরাফসহ উচ্চতায় বড় প্রাণী রয়েছে ১৮ প্রজাতির, বাঘ ও সিংহসহ মাংশাসী প্রাণী ১১ প্রজাতির, ৫৬ প্রজাতির পাখি এবং ম্যামালস রয়েছে ১৭ প্রজাতির। বছরের পর বছর একই প্রাণী থাকায় দর্শনার্থী কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ২০১১ সালের পর গত বছরের নবেম্বরে তিনটি উট পাখি আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম। চিড়িয়াখানার কিউরেটর জনকণ্ঠকে আরও জানান, বাজেট না থাকা একটা কারণ। তবে প্রক্রিয়া চলমান আছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড এ্যাসোসিয়েশন অব জু এ্যান্ড এ্যাকুরিয়ামস-ওয়াজা’র সদস্য না হওয়ায় বিদেশ থেকে প্রাণী আনতে সমস্যায় পড়ছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তবে শিগগির এ সমস্যা কাটিয়ে নতুন প্রাণী আনা হবে বলে আশ^াস দিয়ে বলেন, আমরা এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যও হতে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী ১ থেকে দেড় বছরের মধ্যে অনেক প্রাণী আনতে পারব। স্কুলের শিক্ষার্থী আরফান। কখনও চিড়িয়াখানা দেখেনি তাই খুবই ভাল লেগেছে তার। তবে সঙ্গে থাকা বন্ধু সুমনের কোন প্রাণীই ভাল লাগেনি। সে বলল, আমি আরও চারবার এসেছি এখানে। শুধু ময়ূরের পেখম মেলানো দেখা ছাড়া কিছুই ভাল লাগে না। এদিকে, হরিণ ও সাপ দেখতে বেশকিছু দর্শক দেখা গেছে। সাপের একাধিক বাচ্চা দেখতে দর্শকদের উপস্থিতিও ছিল বেশ। চিড়িয়াখানার কিউরেটর জানান, গত কয়েক বছর ধরে প্রাণী আনা না হলেও আমাদের এখানে প্রাণীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে অনেক। চিড়িয়াখানার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শীতকালে দর্শনার্থীদের বেশ আগমন থাকে চিড়িয়াখানায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে প্রাণী দেখাতে। তবে দিন দিন দর্শনার্থী কমে যাচ্ছে। ছুটির দিনগুলোতে আগের মতো তেমন একটা ভিড় হয় না বলেও জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা বৈচিত্র্য আনার পক্ষে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। আর এজন্য নতুন প্রাণী অবশ্যই প্রয়োজন বলেও সংশ্লিষ্টদের মত। এদিকে, দীর্ঘ সাত বছর পর গত বছরের শেষের দিকে উট পাখি আনা হয়। বিশালদেহী পাখি পরিবারের সদস্য আলেকজান্ডার, সোফিয়া ও রানী নামের ঐ তিন উটপাখি কিছুদিন মনভরে দেখেছেন দর্শকরা। এখন সেখানেও তেমন একটা আগ্রহ নেই। এদের মধ্যে একটি পুরুষ ও অন্য দুটি স্ত্রী প্রজাতির। এ পাখির বসবাস সাধারণত মরু অঞ্চলে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এ তিন উটপাখি সাড়ে চার লাখ টাকায় কেনা হয় বলে জানা যায়। উটপাখি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পাখি কিন্তু উড়তে পারে না। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানীবাসীর বিনোদনের জায়গা কম। চিড়িয়াখানা, বিভিন্ন পার্কই বিনোদনের ভরসা। বৈচিত্র্য না থাকলে সেখানেও যেতে নিরুৎসাহিত হবে। এসব উন্নয়নে কিছুটা বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। কারণ মানুষের কাছে বিনোদনও একটা গুরত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আইনুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বাজেট বরাদ্দ নিয়ে কাজ করছি। খুব শীগ্রই আশা করছি কিছু নতুন প্রাণী আনা হবে। এছাড়াও জাতীয় চিড়িয়াখানা নিয়ে আমাদের মহাপরিকল্পনা আছে। চিড়িয়াখানাও বিশ^মানের করার জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলেও জানান মহাপরিচালক। দর্শনার্থীরা মনে করছেন, নতুনত্ব আসলে দর্শনার্থী বৃদ্ধির পাশাপাশি চিড়িয়াখানা নিয়ে মানুষের বৈরী মনোভাবও পাল্টে যাবে। আর চিড়িয়াখানার ঐতিহ্য সুনাম রক্ষার্থে উন্নত পরিকল্পনার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
×