ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রিয়া দেবীর মৃত্যুতে টালিউডে শোক

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

সুপ্রিয়া দেবীর মৃত্যুতে টালিউডে শোক

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ কলকাতার বালিগঞ্জের বাড়িতে শুক্রবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর জীবনাবসান হয়। তাঁর প্রয়াণে ওপার বাংলার চলচ্চিত্র মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজন হারানোর ব্যথায় অনেকটাই কাতর গোটা টলিউড। জানিয়েছেন গভীর শোক। সুপ্রিয়া দেবীর মৃত্যুতে কিংবদন্তী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন দীর্ঘ দিনের বন্ধুকে হারালাম, অনেক চলচ্চিত্রে এক সঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমি কথা বলার অবস্থায় নেই। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন ভাবতেই পারছি না। আর কিছু বলার অবস্থায় নেই আমি। অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় বলেন, খুবই দুঃখের খবর। তাকে আমি দিদি বলে ডাকতাম। আত্মীয়ের মতোই সম্পর্ক ছিল আমাদের। খুবই প্রাণবন্ত ব্যবহার ছিল দিদির। আমি মর্মাহত। এ কষ্ট বলে বোঝানো যাবে না। শুধু এটুকু বলতে পারি, কাজ দিয়েই মানুষ ওঁকে মনে রাখবেন। চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই ক্ষতির কোনও পরিমাপ হয় না। আমি ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, খারাপ খবর দিয়ে দিন শুরু হল। মায়ের মতো ছিলেন। আমার ভালবাসার মানুষ। অনেক সৌভাগ্য আমার যে ওঁর স্নেহ পেয়েছি। অনেক স্মৃতি, অনেক গল্প, অনেক আদরের কথা মনে পড়ছে। উনি সকলের কথা ভাবতেন। অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন। যা রেখে গেলেন, যা শিখিয়েছেন তার একটুও করতে পারলে খুশি হব। ওঁর আরও সম্মান পাওয়া উচিত ছিল। অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদার বলেন, ঘুম থেকে উঠে খবরটা পেলাম, শকিং নিউজ। ওর সঙ্গে কোটি কোটি স্মৃতি রয়েছে। পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, আমার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয় ছিল ওঁর। সকালে শুনলাম উনি আর নেই। এ তো ভাবতেই পারছি না। বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। তরুণ অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, কী বলব বলুন? একজন অভিভাবককে হারালাম। অভিনেত্রী নন্দিতা রায় বলেন, বেণুদির রান্নাঘর নামের একটা শো করতাম ওঁর সঙ্গে। আমার মনে হয় ওটা ফার্স্ট কুকারি শো যা তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সারাক্ষণই দাদার গল্প করতেন। আজ খবরটা পেয়ে প্রথমেই মনে হল, এ বার দাদার সঙ্গে দেখা হবে। প্রবীণ অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রিয়জনদের মৃত্যুর খবর নিয়ে রোজ বেঁচে আছি আমরা। আজও তেমন এক সকাল। ওর কাছে তো পৌঁছতেও পারলাম না। খুব সুন্দর সম্পর্ক ছিল আমাদের। আমি, উত্তম বাবু, সুপ্রিয়া দেবী। তখন শিল্পীদের মধ্যে একটা আন্তরিক হৃদ্যতা ছিল। এখনকার মতো না। এখন তো সব ওপর ওপর। যন্ত্র নির্ভর। এমন কত দিন গেছে আমার আর উত্তম বাবুর শুট চলছে, সুপ্রিয়া দেবীর কোনও ভূমিকাই নেই। তাতে কী! উনি হাজির প্রচুর রান্না করে। আর রান্না করে এনেছেন যখন, খেতে তো হবেই! রেঁধে খাওয়াতে পারলে আর কিছু চাইতেন না। আমি, উত্তম বাবু, সুপ্রিয়া দেবী শুটের ফাঁকে তিনজনে গল্প করতে করতে খেলাম! এখন এ সব কেউ ভাবতে পারে? খেলাচ্ছলে, রসিকতায় দিন কেটেছে। সোনালি সব ঝলমলে দিন। কয়েক দিন আগেই ওর নাতির বিয়েতে গেলাম। খুব খুশি হয়েছিল। তার বেশ কিছু দিন পরে অসুস্থ শুনে দেখতে গেলাম। মনে হল যেন চোখের মধ্যে এক বিন্দু জল। সবটাই তো চোখের সামনে দেখা। ৩ নম্বর ময়রা স্ট্রিটের বাড়ির সেই রোশনাই ঢালা সুপ্রিয়া দেবী আর আজকের ফ্ল্যাটের সুপ্রিয়া দেবীর অনেক অনেক তফাত। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তা আর সম্মান তিনি পেয়েছেন এটা ঠিক। চিকিৎসা থেকে বাসস্থান সব ক্ষেত্রেই সরকার ওর পাশে ছিলেন। কিন্তু মনের হাহাকার তো আর কিছুতেই মেটে না। গ্ল্যামার দুনিয়ার ঝকঝকে ঐশ্বর্য থেকে একলা দুনিয়ার আলো আঁধারির রাস্তা কেমন করেই বা পেরোতেন উত্তম প্রিয়া? আমার তো মনে হয়, ওর নিঃসঙ্গতা ওকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল! একটু যদি গ্ল্যামার দুনিয়ার বাইরে এসে, সাধারণের সঙ্গে যদি নিজেকে মেলে ধরত, আমার মনে হয় ওর জীবনের পরিবর্তনগুলো সহজে নিয়ে আরও কিছু দিন আমাদের সঙ্গে থাকতে পারতো। আবার মনে আসছে আর এক মজার গল্প। একবার শুটের জন্যই আমি আর অনুভা ঘোষ একটা ঘরে আছি আর উত্তম বাবু, সুপ্রিয়া দেবী আমাদের ঠিক পাশের ঘরে। ওদের হাব ভাব দেখে বুঝলাম ওরা দুজনে ঘরে একটু বেশি ঠিকঠাক আছে। আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। পাশেই নয়নতারা গাছ ছিল। সেখান থেকে খান কতক ফুল পেড়ে ওদের জানলা দিয়ে ছুড়তে ছুড়তে বললাম, তোমার পতি সেবায় তুষ্ট হয়ে দেবতা পুস্প বৃষ্টি করছেন! সুপ্রিয়া দেবী তেড়ে এসে বললেন, উফ! এই মাধুটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। এত দুষ্টু ওটা! ফুরিয়ে যাচ্ছে অধ্যায়। খাতার পাতা ফুরিয়ে যাচ্ছে, মৃত্যু নামক জীবনের ডাকে।
×