ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

শুষ্ক অঞ্চলে তৃণভোজী মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

শুষ্ক অঞ্চলে তৃণভোজী মাছ চাষ

বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টন মাছের প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে সমুদ্রে মাছ কমে যাচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় মাছের উৎপাদনও কমে আসছে। এই সমস্যা কাটাতে জার্মান গবেষকরা এ্যাকোয়াকালচারে টেকসই পদ্ধতিতে মাছ চাষের মাধ্যমে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন। পুকুরে যেখানে প্রতি ঘনমিটার পানিতে মাছের উৎপাদন মাত্র এক থেকে দুই কেজি, সেখানে ঘরের মধ্যে চাষে উৎপাদন ৬০ কেজি পর্যন্ত! শুনে হয়ত অবাক লাগছে। কিন্তু আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে এসেছে এই সফলতা। স্বল্প জমি, অল্প পানিতে মাছের উৎপাদন হচ্ছে অন্তত ২৫ গুণ। বছরে ১০ টন শিং-মাগুর মাছ উৎপাদনের জন্য অন্তত ১০ বিঘা পুকুর প্রয়োজন। এ প্রযুক্তিতে মাত্র ৬-৭ কাঠা জমিতে সে পরিমাণ মাছ উৎপাদন সম্ভব। কৃত্রিম ব্রিডিং বা প্রতিপালনের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা চলছে। তবে প্রতিপালনের কোন প্রক্রিয়া সবচেয়ে সফল হচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জার্মানির উত্তরে এক গবেষণা কেন্দ্রে এ সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মাছের প্রতিপালন ঘটাচ্ছেন। সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে তাঁরা মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত শিল্পশাখাকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খাদ্য হিসেবে সব মাছের প্রায় অর্ধেকই আসে এ্যাকোয়াকালচার থেকে। তাই এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের চাহিদাও বাড়ছে। কৃষিবিজ্ঞানী প্রো. কার্স্টেন শুলৎস বলেন, ‘গোটা বিশ্বে বেড়ে চলা জনসংখ্যার কারণে মাছের চাহিদাও বাড়বে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। শুধু মাছ ধরে সেই চাহিদা মেটানো যাবে না। এর জন্য এ্যাকোয়াকালচারে উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। এভাবে আমরা মাছের জোগানের গ্যারেন্টি দিতে পারি।’ গবেষকরা জানতে চান, কোন পরিবেশে মাছেরা সবচেয়ে ভালভাবে বেড়ে ওঠে। পানির অবস্থাই বা কেমন থাকা উচিত এবং মাছের ঠিক কতটা জায়গার প্রয়োজন রয়েছে? বিজ্ঞানীরা মাছেদের ওজন ও আকার-আয়তন মাপেন। মনে রাখতে হবে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে মাছেদের বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা কমে যায়। মাছের খাদ্যও অত্যন্ত জরুরি । সেই খাদ্যের কতটা শিরা ও ধমনি পর্যন্ত পৌঁছায়? এখনও পর্যন্ত অনেক এ্যাকোয়াকালচারে খাদ্য হিসেবে মাছে ও মাছের তেল খাওয়ানো হয়। ফলে দেখা যায়, যত মাছ খাওয়ানো হচ্ছে শেষ পর্যন্ত প্রতিপালনের মাধ্যমে তত মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। গবেষকরা এই সমস্যার সমাধান খুঁজছেন। প্রো. শুলৎস বলেন, ‘আমরা নতুন ধরনের খাদ্য ও সাপ্লিমেন্ট নিয়ে গবেষণা করছি। মূল্যবান ও সীমিত সম্পদ হিসেবে খাবারের মধ্যে মাছ ও মাছের তেলের অংশ কমানোর চেষ্টা করছি। এর বিকল্প সৃষ্টি ও কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছি।’ বিজ্ঞানীরা মাছের বদলে উদ্ভিদ পিষে তৈরি গোলা কাজে লাগাচ্ছেন। টার্বট মাছের তা পছন্দ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। একে ‘ঘরে তৃণভোজী মাছ চাষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন গবেষকরা। রেপসিড ও সয়াবিন দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করছেন গবেষকরা । এই উদ্ভিদের মধ্যে যথেষ্ট প্রোটিন রয়েছে, যা মাছের বিকল্প হতে পারে। খাদ্য অথবা বায়োডিজেল উৎপাদনের সময় বর্জ্য হিসেবে এই উপকরণ পাওয়া যায়। সেটিকে নতুন করে এভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মাছের জন্য খাদ্যের মিশ্রণের উন্নতি ঘটিয়ে চলেছেন। কারণ একমাত্র সুস্থ মাছই ভাল আয়ের গ্যারান্টি হতে পারে। প্রো. কার্স্টেন শুলৎস বলেন, ‘বিস্ময়কর ঘটনা হলো, তৃণ উপকরণ ব্যবহার করলে মাছের স্বাস্থ্য সাধারণত খারাপ হয় না। উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিনের কারণে মাছের মধ্যে কোন রকম অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায় না। এই খাবার খেলে মাছের ভাল বৃদ্ধি হয়, ভাল হজম হয়। স্বাদেও তারা কোন তফাত পায় না। তাই আমরা কোন বিবেক দংশন ছাড়াই এই মাছ ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে পারি।’ মাছের সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিষ্কার পানিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবাণুর হাত ধরে জলাধারে দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গবেষকরা তাই নিয়মিত পানির তাপমাত্রা ও উপাদান পরীক্ষা করেন। এ্যাকোয়েরিয়ামে টেকসই মাছ প্রতিপালন সফল হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বড় শহর থেকে শুরু করে শুষ্ক এলাকায়ও এভাবে মাছ চাষ করা সম্ভব। সূত্র : ডয়েচ ভেলে, বিবিসি
×