ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এই ধাক্কা ফাইনালের আগে সতর্কবার্তা ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

এই ধাক্কা ফাইনালের আগে সতর্কবার্তা ॥ মাশরাফি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মাত্র ৬ দিন আগে যে দলটিকে একেবারে নাজেহাল করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল, সেই শ্রীলঙ্কার কাছেই লজ্জার মালা বরণ করতে হয়েছে বৃহস্পতিবার। অথচ টানা তিন ম্যাচ জিতে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ে এবং শ্রীলঙ্কার কাছে সাক্ষাত দানব ও হিমালয়তুল্য বিরাটাকৃতি ধারণ করেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। সেই দলটির এভাবে ছন্দপতন? একেবারে আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসা। দলটি কি অধিক আত্মবিশ্বাসী ছিল? তেমনটা অবশ্য শিকার করেননি অধিনায়ক মাশরাফি। তিনি বরং এটাকে ক্রিকেট মাঠে হুট করে চলে আসা একটা বাজে দিন হিসেবেই দেখছেন। আর এটিকে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের আগে সতর্ক সঙ্কেত বা জেগে ওঠার আহ্বান হিসেবেই মনে করছেন মাশরাফি। তবে আক্ষেপ জানিয়েছেন দলের মিডলঅর্ডারের ব্যর্থতার জন্য। ফাইনালের আগে বৃহস্পতিবার ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে ১০ উইকেটে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মাশরাফি। বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগেরদিন কোন অনুশীলন করেনি বাংলাদেশ দল। টানা খেলা থাকার কারণে একটা দিন বিরতি নিয়ে টিম হোটেলেই ছিলেন ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন দাবি করেছিলেন- টানা খেলার মধ্যে থেকে পরিশ্রান্ত ক্রিকেটারদের ফাইনালের আগে বিরতি নেয়ার সুযোগ নেই। এ কারণেই সিরিজে প্রথমবার একটাদিন অনুশীলন বিহীন থাকছে দল। তবে কি বেশিই ফুরফুরে ছিল বাংলাদেশ? টানা তিন ম্যাচ দাপুটে জয় পাওয়া দলটি নাস্তানাবুদ হলো লঙ্কানদের কাছে। আত্মবিশ্বাস অধিক হওয়াটাও হয়তো বড় প্রভাব ফেলেছে। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি কাল রাতে বলেন বা আজকেও সবাই যখন এক সঙ্গে ছিলাম। কাল রাতেও যখন মিটিং হয়েছে। কারও ভেতর এমন দেখিনি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এমন থাকার (অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী) সুযোগ ছিল না, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তো না-ই। যেটা বলতে পারেন আমরা খুবই বাজে ক্রিকেট খেলেছি। আমার কাছে মনে হয় এটা বলাই ঠিক। আবার এটা বলতে পারি যে একটা বাজে দিন গেছে। আমি বলব বাজে ক্রিকেট খেলেছি।’ বাজে ক্রিকেট খেলতেই পারে একটা দল। তবে এরচেয়ে মাশরাফি মনে করছেন শ্রীলঙ্কা এমন একটি দল যাদের কাছে যে কোন প্রতিপক্ষ হারতে পারে। মাশরাফি বলেন, ‘আমরা জানি যে শ্রীলঙ্কা আমাদের হারাতে পারে। কিন্তু এভাবে আমরা হারব সেটা কেউই প্রত্যাশা করিনি। এটাতো সত্যি। ড্রেসিং রুমের কেউই এটা বিশ্বাস করবে না যে আমাদের শ্রীলঙ্কা হারাতে পারে না। শেষ তিন ম্যাচ এভাবে খেলার পর এভাবে হারব সেটা হয় না।’ তবে দেশের মাটিতে সবচেয়ে লজ্জাজনক হার এমন সময়ে এসেছে যখন ক্রমেই অন্যতম বড় দলে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। এর আগে দেশের মাটিতে কখনই ১০ উইকেটের হার দেখতে হয়নি। যদিও ওয়ানডেতে এর আগে ১১ বার ওই ব্যবধানে হারতে হয়েছিল। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যেভাবে আমরা শেষ তিন ম্যাচ খেলেছি সেভাবেই আমাদের চিন্তা করতে হবে। এখনও আমাদের ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে। হয়তোবা এটা আমাদের জন্য ফাইনালের আগে ভাল একটা জেগে ওঠার আহ্বান কিংবা সতর্ক সঙ্কেত। হয়তো অমাদের ¯œায়ুটা আরেকটু শক্ত হবে।’ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েই আসলে হারটা নিশ্চিত হয়েছে। দীর্ঘদিন এত বাজে ব্যাটিং করেনি দল। ১০০’র নিচে ২০১৪ সালে আগস্টের পর (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট জর্জেসে ৭০) এই প্রথম অলআউট হওয়ার কলঙ্কটা ছোবল হেনেছে। তবে টপঅর্ডাররা ব্যর্থ হওয়ার পর মাশরাফি আশা করেছিলেন মিডলঅর্ডাররা হাল ধরবেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টপঅর্ডারে যারা আউট হয়েছে তারা কিছু সময় হলেও পার করেছে। কোন অভিযোগ করিনি। দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে মিডলঅর্ডারে যারা ব্যাটিং করছিল তারা আরেকটু সেট হয়ে বেশি রানের দিকে না যেয়ে তারপর হয়তো রানটাকে আরেকটু নির্মাণ করা যেত। যেহেতু চারটা দ্রুত উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ওখান থেকেও আমাদের ১৮০ বা দুই শ’ রান করার মতো সামর্থ্য ছিল। তো আমার কাছে মনে হয় ওখানে প্রয়োগটা আমরা ঠিকমতো করতে পারিনি। উইকেটে সেট হয়ে আত্মবিশ্বাস আরেকটু বাড়িয়ে আমাদের ব্যাটিং ইনিংসটাকে স্বাস্থ্যবান করার দরকার ছিল।’ তিন ম্যাচেই এনামুল হক বিজয়, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তবে মাশরাফি আশা করছেন ফাইনালে তারা জ্বলে উঠবেন। তিনি বলেন, ‘আজকে হয়তোবা তাদের জন্য আরও ভাল কিছু করার ছিল। উইকেটে আরও সময় কাটাতে পারত। ২০-২২ ওভারে অলআউট হয়েছি। যাদের নাম বলেছেন তাদের মধ্যে একজন-দুজন অনেকদিন ধরেই খেলছে। এ ধরনের পরিস্থিতিটা পার করেছে। কঠিন সময়ে তারা বেরও হয়ে এসেছে। আমি আসলে প্রত্যাশা করছি তারা এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।’ কিন্তু জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেও মিডলঅর্ডাররা ছিলেন চরমভাবে ব্যর্থ। অবশ্য এসব নিয়ে না ভেবে ফাইনালে সতর্কই থাকতে চান মাশরাফি, ‘আজকেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের একটু দায়িত্ব নিতে হবে। এমন না যে তারা অনুশীলনে যেটা চাচ্ছে সেটা হচ্ছে না। হয়তো করছে ঠিকই কিন্তু মূল জায়গায় এসে প্রয়োগটা ঠিকমতো হচ্ছে না। আমার কাছে মনে হয় মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। ভাগ্যও প্রসন্ন হতে হবে। আমি চাইব যে ফাইনালের আগে এটা নিয়ে তারা চিন্তা করুক।’
×