ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিসিএসআইআরে বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তিমেলা

জঙ্গী আস্তানার ভেতর কি অস্ত্র মজুদ আছে-জানাবে রোবট

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

জঙ্গী আস্তানার ভেতর কি অস্ত্র মজুদ আছে-জানাবে রোবট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন জঙ্গী আস্তানার ভেতর কি ধরনের অস্ত্র মজুদ আছে, মাটির নিচে কোন বিস্ফোরক রাখা আছে কিনা, জঙ্গীদের অবস্থান এবং হামলার প্রস্তুতি জানাবে লাইফ সিকিউরিটি রোবট। এমনকি ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি ছবি ও ভিডিও পাঠাতে পারবে এই রোবট। কোন বিস্ফোরক ধরা পড়লে তাও জানাবে, নির্দিষ্ট মোবাইলে মেসেজ দিয়ে। নিষ্ক্রিয় করতে পারবে বোমা। এই রোবটটি তৈরি করেছেন তিনজন খুদে বিজ্ঞানী। রাজধানীতে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় তারা এই রোবটটি প্রদর্শন করেছেন। মোঃ কৌশিক পাটোয়ারী, মোঃ ফয়সাল উদ্দীন ও সুজন মজুমদার নামের তিন খুদে বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থী। মোঃ কৌশিক পাটোয়ারী জানান, তারা রোবটটি তৈরি করেছেন সামরিক বাহিনীর জন্য। তারা তাদের বিভিন্ন মেশিনে এই রোবট ব্যবহার করে খুব সহজেই শত্রু পক্ষের অবস্থান জানতে পারবেন এবং তাদের কিভাবে আক্রমণ করতে হবে তার পরিকল্পনাও করে নিতে পারবে। আরেক খুদে বিজ্ঞানী মোঃ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, রোবটটি রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। কোথাও কোন কাজে যখন এই রোবট ব্যবহার করা হবে তখন গুগল ম্যাপে রোবটটির অবস্থান দেখা যাবে। রোবটের চলার পথে কোন বাধা আসলে তার ওপর দিয়ে বা বিকল্প পথে চলাচল করতে পারবে। সুজন মজুমদার বলেন, গুলশানে জঙ্গী হামলার পর আমরা চিন্তা করি প্রযুক্তিগতভাবে কিভাবে দেশকে সহযোগিতা করা যায়। এরপর আমরা এ ধরনের একটি রোবট তৈরির পরিকল্পনা করি। এটি তৈরি করতে আমাদের ছয় মাসের মতো সময় লেগেছে।’ শুধু এই তিন খুদে বিজ্ঞানী নয় বরং বিজ্ঞান ক্লাবের প্রায় ৫৫২ বিজ্ঞানীরা তাদের ১৭৭টি প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছেন ধানম-িস্থ বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) প্রাঙ্গণে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও শিল্প-প্রযুক্তি মেলা ২০১৮ উদ্বোধন করেন। ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী মেলায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ স্ব-শিক্ষিত উদ্ভাবকরা তাদের ১৭৭টির অধিক প্রকল্প নিয়ে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও বিসিএসআইআর-এর গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকা- এবং এ প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত প্রসেস নিয়ে গড়ে ওঠা স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন, সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ ফারুক আহমেদ, চেয়ারম্যান, বিসিএসআইআর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান গবেষণার জন্য পরিবেশ ও অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় তহবিল দিচ্ছেন। আধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্বমানের গবেষণা ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা বিশ্বময় বিচরণ করছে। তাদের জ্ঞান, প্রতিভা সর্বময় কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের জন্য আমরা আমাদের উৎসর্গ করছি। সর্বক্ষেত্র আর্দশ মানুষ হয়ে আমাদের অপূর্ণতাকে তারাই পূর্ণ করবে। আমাদের উন্নয়নের জন্য মৌলিক গবেষণার পাশাপাশি বিদেশী প্রযুক্তি আতœীকরণ ও ব্যবহার উপযোগী করে কাজে লাগাতে হবে।’ অধ্যাপক ড. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ছেলে-মেয়েদের বুঝতে হবে বিজ্ঞান কি ? এখন গবেষণার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যা পূর্বে ছিল না। এ সরকার গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল দিচ্ছে। আমাদের প্রয়োজন গবেষকদের উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়া। ক্ষুদে গবেষকদের বলেন, আমাদের অনেক বিখ্যাত গবেষক প্রয়োজন। আর এ দায়িত্ব তরুণদের হাতে রইল। তোমরাই পারবে আমাদের সংকল্পকে সার্থক করতে। মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এ সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপান্তরিত করেছে। আজকের এ ক্ষুদে গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়ে একদিন বাংলাদেশকে প্রযুক্তির শীর্ষে পৌঁছে দিবে। মেলায় প্রদর্শিত প্রকল্পগুলো আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরাই পারি আমরাই পারব আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়তে। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সভাপতির বক্তব্যে চেয়ারম্যান বিসিএসআইআর বলেন, আমরা নতুন প্রজন্মের চিন্তার মধ্যে ভবিষ্যত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমাদের দায়িত্ববোধ থেকেই প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন করছি। এ ধরনের মেলার মাধ্যমে আমরা একদিন বাংলার নিউটন, আইনস্টাইনকে খুঁজে পাব। মেলায় চারটি স্তরে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী, নবম থেকে ১০ম শ্রেণী, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী এবং স্ব-শিক্ষিত উদ্ভাবক/ বিজ্ঞান ক্লাবের প্রায় ৫৫২ জন ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ১৭৭টি প্রকল্প প্রদর্শন করছে। ঢাকার স্বনামধন্য স্কুল কলেজ যেমন- হলিক্রস, সিটি কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদসহ ঢাকা ও ঢাকার বাহিরের প্রসিদ্ধ স্কুল কলেজসমূহ এ মেলায় অংশগ্রহণ করছে। চারটি স্তরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী বিজয়ীদের মোট বারোটি দলের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া অংশগ্রহণকারী সকলকে সার্টিফিকেট দেয়া হবে মেলার সমাপনী দিনে।
×