ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রীর জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন ও প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

অর্থমন্ত্রীর জন্মদিনে আনন্দ আয়োজন ও প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থনীতির জটিল হিসাব-নিকাশে কাটে তাঁর নিত্যদিনের অধিকাংশ সময়। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সূচককে এগিয়ে নিতে চলে তাঁর নিরন্তর কর্মধারা। তাই বলে এত কর্মযজ্ঞের মাঝেও থেমে থাকে না আপন সুকুমারবৃত্তি। সেই সুবাদে লেখালেখিসহ সৃষ্টিশীল নানা কাজের মাঝেই যেন খুঁজে নেন জীবনের আনন্দ। আর সে কারণেই হয়ত দারুণ অর্থবহ হয়ে ওঠে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবনচক্র। বৃহস্পতিবার ৮৫তম জন্মদিনে পদার্পণ করলেন এই অর্থনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক। সহজ-সরল ও সফল মানুষটির সেই জন্মদিনটি উদ্্যাপন করা হলো সাড়ম্বরে। এ উপলক্ষে তাঁকে ঘিরে ছিল আনন্দ আয়োজন। সেখানে কাটা হলো জন্মদিনের কেক। আর জন্মদিনের সে আয়োজনে প্রকাশিত হলো নিজ রচিত গবেষণাগ্রন্থ ‘সংকট ও সুযোগ’। এছাড়াও জন্মদিনে সংবর্ধনার মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীকে ভালবাসা জানিয়েছে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এই জন্মদিন উদ্্যাপন ও গ্রন্থ প্রকাশনার আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইস্ফেন্দিয়ার জাহিদ হাসান মিলনায়তনে। জন্মদিনের এ স্মরণীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা সময় প্রকাশন। অনুষ্ঠানে মুহিতের নতুন গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, প্রাবন্ধিক ও গবেষক নূহ-উল-আলম লেনিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ। অর্থমন্ত্রীর গ্রন্থে নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, এ গ্রন্থের মাধ্যমে সমাজ, অর্থনীতি, প্রকৃতি, সংষ্কৃতি ও ভাষার সকল শাখা স্পর্শ করেছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেও তিনি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে লিখেছেন। মুনতাসীর মামুন বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত হচ্ছেন সৌভাগ্যের বরপুত্র। একদিকে তিনি শেখ হাসিনার চেয়েও ভাগ্যবান। কারণ, শেখ হাসিনাকে অনেক ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। সেদিক থেকে মুহিত আজীবনই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সম্মান ও ভালবাসা নিয়ে টিকে থাকাটা কঠিন ব্যাপার। আমার কাছে মুহিতের গবেষণাগ্রন্থকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। অর্থমন্ত্রীর জন্মদিনে অভিনন্দন জানিয়ে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, এক সময় দেখেছি প্রতিবছর বইমেলায় বৈকালিক পরিদর্শনে আসতেন। স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই সংগ্রহ করতেন। তাঁকে দেখে বিস্ময় জাগে, এই বয়সেও নিজেকে তিনি এতটা প্রাণবন্ত রাখেন কিভাবে। তাঁকে দেখি বয়সকে উপেক্ষা করে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের আসরে রাতের পর রাত জেগে সুরের মাঝে নিজেকে নিমজ্জিত রাখেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রাবন্ধিক সুভাস সিংহ রায়। তিনি বলেন, ৮৫ বছর অর্থমন্ত্রী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমার পক্ষে আড়াই শ’ বছরেও তা সম্ভব নয়। এছাড়া অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম। অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের ফুলের শুভেচ্ছা জানায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পক্ষে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত। এছাড়াও শুভেচ্ছা জানায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন, রবীন্দ্র একাডেমি, আওয়ামী লীগের মুখপত্র উত্তরণ, স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগ, গৃহ করদাতা ইউনিট, এফবিসিসিআই, কাকলী প্রকাশনী, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর’ শীর্ষক গান শোনান লিলি ইসলাম। অর্থমন্ত্রীর জন্মদিনে প্রকাশক সমিতির সংবর্ধনা ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবারের প্রথম আয়োজনটি করে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। জন্মদিন উপলক্ষে অর্থমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানায় প্রকাশক সমিতি। বিকেলে বিশ^সাহিত্যকেন্দ্রের ছোট্ট সেমিনার হলে অর্থমন্ত্রী প্রবেশ করতেই তাকে বরণ করে নেয়া হলো ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে। আর সমবেত কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে ওঠেন ‘ঐ মহামানব আসে’। তারপর পরিবেশিত হয় আরেকটি গান ‘নব আনন্দে জাগো’। এরপর অর্থমন্ত্রীকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। তারপর শুরু হয় কথনপর্ব। এতে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুুরুল ইসলাম। কথনপর্বে অংশ নেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, লেখক ও গবেষক মফিদুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। তার আগে অর্থমন্ত্রীকে ফুলের শুভেচ্ছ জানায় জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, আহমেদ পাবালিশিং, পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস, বাংলা প্রকাশ, চন্দ্রদ্বীপ প্রকাশ, অনিন্দ্য প্রকাশনী সংস্থা, বর্ণ প্রকাশন, রকমারি ডটকম, চয়ন প্রকাশ, উৎস প্রকাশন, ইমপেরিয়াল কলেজ, প্রাইম ইনভেস্ট লিমিটেড। অর্থমন্ত্রী তাঁর জন্মদিনের অনুভূতি প্রকাশে বলেন, আমাদের গ্রুপের (দলের) প্রত্যেকের জীবনে সংস্কৃতি এক বিরাট প্রভাব রেখেছে। সংস্কৃতি আমাদের প্রত্যেকের চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যকে সমৃদ্ধ করেছে। জন্মদিনে এটাই আমার অনুভূতি। হাস্যরসের মধ্য দিয়ে নিজের বিশ^বিদ্যালয় জীবনের সংস্কৃতি চর্চার স্মৃতিচারণ করেন অর্থমন্ত্রী। পরে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের সময়ে সংস্কৃতিজনদের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্কের নানাদিক নিয়েও আলোকপাত করেন তিনি। আনিসুজ্জামান বলেন, ১৯৫৩ সাল থেকে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ। বিশ^বিদ্যালয় জীবনে তিনি আমার দুই বছরের সিনিয়র ছিলেন। স্কুল জীবন থেকেই বরাবর ভাল ছাত্র মুহিত ভাইয়ের প্রতিভা নানাদিকে বিকশিত হয়েছে। নানা গুণের আকর এই মানুষটি তার সমস্ত গুণ সারাজীবন ধরে রেখেছেন। তার নানা বয়সে তিনি যে ডায়েরিগুলো লিখে গেছেন তা ইতিহাসের উপকরণ। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ব্যতিক্রমী মানুষ মুহিত ভাই অসম্ভব প্রাণশক্তির অধিকারী। বলিষ্ঠ মানুষটির জীবন প্রাচুর্যে ভরপুর। রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমরা তাকে ঈর্ষা করি। ৮৫ বছর বয়সেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি লেখালেখি, গবেষণা কাজেও যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন আমরা এত কিছু করেও তার গুণের কাছাকাছি যেতে পারছি না। তিনি প্রচ- স্পষ্টবাদী। তিনি রাবিশকে রাবিশই বলেন। মফিদুল হক বলেন, তিনি আমাদের নতুন জাগরণের পরম্পরার প্রতীক। আমাদের যে অর্থনৈতিক জাগরণ হয়েছে তার নেতৃত্বে অন্যতম তিনি। খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পথনাট্যোৎসব ॥ খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘চাই শিক্ষা ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ সেøাগানে সিরাজউদ্দীন খাঁন স্মরণে তিন দিনব্যাপী কাঙ্গাল কবীর সপ্তম পথনাট্যোৎসব শুরু হলো। রাজধানীর মুরাদপুর সমীরণ নেসা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা এ কে এ কবীর। উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ আলী, নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী, আকতারুজ্জামান, গোলাম সারোয়ার মামুন ও এ্যাডভোকেট মোঃ ফারুক হোসেন। সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠীর ‘বটতলার পাগলা’, গতি থিয়েটারের ‘মামার আগমণ’ ও বাঙলা নাট্যদলের ‘ঘুঘু মুন্সি ও অন্যান্য’।
×