ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে প্রবাসীদের লাশ পেতে ভোগান্তির শেষ নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

শাহজালালে প্রবাসীদের লাশ পেতে ভোগান্তির শেষ নেই

আজাদ সুলায়মান ॥ বিদেশ থেকে আসা প্রিয়জনদের লাশ বুঝে নিয়েছেন মনির গত ২৯ ডিসেম্বর। এখনো পাননি লাশের সঙ্গে দাফনের জন্য দেয়া ৩৫ হাজার টাকার চেক। এ টাকার জন্য মনিরকে আবারও ঢাকায় আসতে হবে। অথচ এ ৩৫ হাজার টাকা কারোর কোন দয়া-দক্ষিণা নয়। এটা মরে যাওয়া শ্রমিকেরই পাওনা টাকা। বিদেশ যাবার আগেই এ টাকা তার কাছ থেকে কেটে নেয়া হয় লাখ টাকার প্যাকেজের সঙ্গে। কিন্তু মনির এখনো চেক পাননি। জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড চেক বিতরণ প্রক্রিয়া এত কঠিন করে রেখেছে যে টাকা ওঠাতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয় স্বজনদের। তবে গত সপ্তাহ থেকে এ ভোগান্তি অনেকটাই নিরসন হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ ভোগান্তিতে লাগাম টেনে ধরার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেন। এটাকে ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেয়ার জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দেন দরবার করে আসছেন। এ বিষয়ে গত ১৫ জানুয়ারি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের এক চিঠিতে প্রবাসে মৃত্যুবরণকারীর নো অবজেকশান সার্টিফিকেট (এনওসি) বিদেশী মিশন থেকে মন্ত্রণালয়ে না পাঠিয়ে সরাসরি বিমানবন্দরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে প্রবাসীর লাশের প্রাথমিক তথ্যাদি সরাসরি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে চলে আসায় লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক স্বজন লাশ পেলেও হাতে পায়নি দাফনের ৩৫ হাজার টাকার চেক। স্বজনের অভিযোগ, লাশ ও টাকার চেক একসঙ্গে দেয়ার নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। নানা অজুহাতে লাশের সঙ্গে চেক দিতে গড়িমসি করা হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- গত নবেম্বর ও ডিসেম্বর যে কয়টা প্রবাসী শ্রমিকের লাশ ঢাকায় এসেছে, তাদের অনেকেরই প্রায় অর্ধেকই ৩৫ হাজার টাকার চেক তাৎক্ষণিক বুঝে পাননি। লাশ নিয়ে বাড়িতে যাবার পর দ্বিতীয় দফায় তাদেরকে বিমানবন্দরে আসতে হচ্ছে চেক নেয়ার জন্য। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম বলেন, আগের চেয়ে এখন ডেডবডি গ্রহণ প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ করা হয়েছে। বলতে পারেন ওয়ানস্টপ সার্ভিস। কিছুটা জটিলতা আগে ছিল। যে কারণে হয়তো কিছুটা ভোগান্তির অভিযোগ ছিল। প্রতিদিনই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ আসে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিগত চার দশক ধরেই বিদেশ থেকে প্রবাসীদের মরদেহ বিনা খরচে দেশে আনছে। বিমানের কার্গো (ইর্ম্পোট) সেকশন থেকে এ লাশ নেয়ার জন্য বৈধ ওয়ারিশ বা স্বজনদের বলা হয়। শাহজালালের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ডেস্ক থেকে খবর পাঠানো হয় মৃত ব্যক্তি বা লাশের স্বজনদের কাছে। তখন স্বজনদের বিমানবন্দরে এসে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। একটি লাশ বুঝে নিতে বড় জোর এক ঘণ্টা লাগারও কথা নয় বলে দাবি করেছেন বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু। কিন্তু ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতার দরুন একটি লাশ বুঝে নিতে সারাদিন দৌড়ঝাঁপ করতে হয় কার্গো হাউস ও টার্মিনাল ভবনে। এতে কেউ কেউ লাশের সঙ্গে নগদ ৩৫ হাজার টাকার চেক বুঝে পেলেও অনেকেই বঞ্চিত হন। এমনই একজন চাঁদপুরের মতলব ফারাজি কান্দির মনির হোসেন। গত ১৭ ডিসেস্বর রিয়াদে তার ভাই জাকির সরকার মারা যান। তাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্র্জাতিক বিমানবন্দরের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ফোন করে জানানো হয়-ঢাকায় লাশ আসবে আগামী ২৯ ডিসেম্বর। সে হিসেবে তিনি একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ঢাকায় আসেন। কার্গো হাউসে গেলে তাকে আধাঘণ্টার মধ্যেই বিমানের পক্ষ থেকে লাশের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তুু কাস্টমস আর কল্যাণ বোর্ডের প্রক্রিয়াগত জটিলতার দরুন সারাদিন ভুগতে হয়। সেদিন লাশ পেলেও নগদ ৩৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি ওই চেক পাননি। কেন পাননি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের লোকজন যদি আগেই জানিয়ে দিত, লাশের সঙ্গে ৩৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হবে এবং এজন্য ওয়ারিশ সার্টিফিকেট লাগবে তাহলে আমরা সেইভাবেই কাগজপত্র নিয়ে ঢাকায় যেতাম। সেটা আগে থেকে জানানো হয়নি। ঢাকায় যাওয়ার পর কল্যাণ বোর্ড থেকে একটি ফরম পূরণ করার জন্য দেয়া হয়। সেটা পূরণ করা খুবই জটিল। গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত সাধারণ মানুষের পক্ষে সেটা পূরণ করা সহজ ব্যাপার নয়। যে কারণে সেদিন ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সঙ্গে না নেয়ায় ওই ৩৫ হাজার টাকার চেক আজও আনা হয়নি। হয়তো আগামী সপ্তাহে আবার যাব। মনিরের মতো এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নাজিম, খুর্শিদ ও মাহবুবসহ অসংখ্য স্বজন বা অভিভাবক। সম্প্রতি কার্গো হাউসে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, আট বছরের মুনিরা সেই সকাল থেকেই ফুপিয়ে কাঁদছে। বাবার লাশ নিতে আসা এই এতিম তখনো জানে না- লাশ এলেই সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায় না। এজন্য অপেক্ষা করতে হয়, হয়রান হতে হয়, ছুটতে হয় এ গেট থেকে ও গেটে। শাহজালাল বিমানবন্দরের ৮নং গেট থেকে টার্মিনালের প্রবাস কল্যাণ বোর্ডে বারবার ছুটতে হয়। মুনিরার প্রশ্ন একটাই- কখন বাবার লাশ নিয়ে বাড়ি যাবে। তার দাদা বারবার সান্ত¡না দিচ্ছিল, এটা সরকারী আইনে চলে, ইচ্ছে করলেই তাড়াহুড়ো করে নেয়া যায় না। তাতেও থামেনি মুনিরার কান্না। পাল্টা প্রশ্ন, “দেরি করলে তো লাশ পচে যাবে।” লাশ বেশিক্ষণ রাখলে নষ্ট হবে পচন ধরবে, এটা আট বছরের মুনিরা বুঝতে পারলেও বুঝতে পারে না কেবল প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের জ্ঞানীগুণী কর্তকর্তারা- যারা এ লাশ প্রকৃত অভিভাবকের কাছে সোপর্দ করার দায়িত্বে রয়েছেন। বিমান বন্দরের সিএন্ডএফ কর্মী বাদল বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের মরদেহ বা লাশ যেটাই বলেন, এটা নিতে হলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ঘাটে ঘাটে ভোগান্তি। হোক এসব শ্রমিক ওয়েজ আর্নার কিংবা সর্বোচ্চ রেমিটেন্স অর্জনকারী। তাতে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের কিছু আসে যায় না। অথচ দ্রুত দাফন করার জন্য প্রতিটি প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহের বিপরীতে তাৎক্ষণিক নগদ ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধের বিধান রয়েছে। দেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এ টাকা বিতরণের দায়িত্বে। কিন্তুু দায়িত্ব কেমন পালন করা হচ্ছে জানতে চাইলে মনির নামের একজন তো বলেই ফেললেন, লাশ নিয়েও মানুষ এত হয়রানি করে তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। কেন এত বিড়ম্বনা জানতে চাইলে বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সে বসে ডিউটি করার সময় কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ইচ্ছে করলেই মরদেহের টাকা যারতার কাছে দেয়া যায় না। যিনি বৈধ উত্তরাধিকারী, তিনিই এ টাকার দাবিদার। অনেক সময় দেখা যায় মৃতের নিকটজনের কেউ এয়ারপোর্টে না এসে অন্য কেউ আসে। তার হাতে তো লাশ দেয়া গেলেও টাকা দেয়া যায় না। কারণ লাশ চুরি করা যায় না, আত্মসাৎও করা যায় না, এ নিয়ে কেউ ব্যবসা বা ফায়দাও লুটতে পারে না। টাকা কিন্তুু যে কেউ ইচ্ছে করলেই আত্মসাৎ করতে পারে। সেজন্যই মরদেহের সঙ্গে নগদ ৩৫ হাজার টাকা প্রকৃত দাবিদার ব্যতীত অন্য কাউকে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, বিদেশগামী মানুষ এয়ারপোর্টের কোন পথ দিয়ে প্রবেশ করে এবং বিদেশ ফেরত মানুষ কোন পথ দিয়ে বের হয় তার কোন দিকনির্দেশনা নেই। কেউ জানে না -বিদেশফেরত বাক্সবন্ধী মানুষকে কোন পথ দিয়ে বের করে আনতে হয়, কিভাবে রিসিভ করতে হয়। কাগজে কলমে যেই আইন বিদ্যমান তাও ততোটা সুবিধার নয়। অথচ এয়ারপোর্টে প্রবাসী কল্যাণের মোট ২৭/২৮ জনের মতো কর্মচারী শিফ্টিং ডিউটি করে। এর মধ্যে ২০/২১ জন বিএমইটি’র কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৭/৮ জন প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের। বিএমইটি’র কর্মচারীদের দায়িত্ব হলো, ম্যান পাওয়ার ক্লিয়ারেন্স কার্ড চেক এবং ডিপোর্টি প্যাসেঞ্জারদের হিসাব সংগ্রহ। প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের কাজ হলো প্রবাসীদের মরদেহের যাবতীয় বিষয়টি সমন্বয় করা। এ্যাম্বাসি ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লাশ ও রিসিভারের যাবতীয় তথ্য কল্যাণ বোর্ডের কর্মচারীদের কম্পিউটারে আগেই চলে আসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, লাশ হস্তান্তরের স্থানে (৮ নং হ্যাংগার গেট) কল্যাণ বোর্ডের কোন বুথ বা অফিস এতদিন ছিল না। গত সপ্তাহ থেকে তা চালু হয়েছে। এর আগে লাশের পরিবারকে ফোন করে বলারও কোন সিস্টেম ছিল না। জানা যায়, ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স কার্ড করার সময় প্রত্যেক প্রবাসী ২৫০ টাকা সার্ভিস চার্জের পাশাপাশি কল্যাণ বোর্ডে ৩৫০০ টাকা চাঁদা দেন। এ চাঁদার প্রধান খরচের খাত হলো এ অনুদান বা সহায়তা! প্রত্যেক প্রবাসী চাঁদা দেয়। কিন্তুু হাজারে একজন মারা যায়। সবার চাঁদায় এ তহবিল গঠিত হয়, যে কয়জন মারা যান, কেবল তারাই এই অনুদান পান। আক্ষরিক অর্থে লাশ সংক্রান্ত যাবতীয় সার্ভিসই প্রবাসীদের প্রিপেইড সার্ভিস। তারপরও লাশের সঙ্গে এই ৩৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণের গলদঘর্ম হতে হয়। লাশের ভুক্তভোগী স্বজনরা বলছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক থাকলেও তা প্রবাসীর লাশ বুঝে পেতে কোনও কাজে আসছে না। লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ৩৫ হাজার টাকা করে দেয়ার বিধান থাকলেও নানা জটিলতায় ওই টাকা সময়মতো পাওয়া যায় না। কার্গো ভিলেজে লাশ সরবরাহের কাজে সহায়তায় থাকা ডেস্কটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় স্বজনদের ভোগান্তি ছিল সীমাহীন। সম্প্রতি ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান জাকির হোসেন। গত ১৩ ডিসেম্বর ওই শ্রমিকের স্বজনদের নিয়ে চাঁদপুর থেকে বিমানবন্দরে আসেন শাহরাস্তি পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তুষার চৌধুরী। লাশ বহনকারী এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ঢাকায় আসেন তারা। দুপুর ১টার দিকে লাশ এলেও প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে বুঝে পান। লাশ বুঝে পাওয়ার পর দাফনের টাকা পেতে তাদের কার্গো ভিলেজ থেকে যেতে হয় টার্মিনাল ভবনে। তবে বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রেও বিপত্তিতে পড়তে হয় তাদের। একাধিক ব্যক্তি বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না বলে বাধা দেন নিরাপত্তাকর্মীরা। যদিও টাকা বুঝে নিতে সঙ্গে একজন সাক্ষী রাখার বিধান রেখেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ভেতরে প্রবেশের পর ডেস্কে গিয়ে ৩৫ হাজার টাকার চেক বুঝে নিতে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করতে হবে বলে জানায় ডেস্ক। জানতে চাইলে তুষার চৌধুরী বলেন, ‘জাকির হোসেনের লাশ নিতে তার ভগ্নিপতিকে নিয়ে ঢাকায় আসি। তবে সেখানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনও সহযোগিতা পাইনি। বরং দাফনের জন্য যে টাকা দেয়া হয়, সেটি পেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। লাশ দেয়া হয় কার্গো ভিলেজ থেকে, চেক দেয় টার্মিনালে। লাশবাহী গাড়ি নিয়ে আমাদের সেখানে যেতে হয়েছে। সেখানে তারা অনেক ধরনের কাগজপত্র চান। তবে, সেটা আগে থেকেই জানালে সঙ্গে নিয়ে আসা যেত। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কেউ আমাদের জানাননি। যদিও পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফের সহযোগিতায় আমরা টাকা বুঝে পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশে ২৮টি দূতাবাসে শ্রম উইং রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। কোনও প্রবাসী শ্রমিক মারা গেলে তার লাশ দেশে আনার ক্ষেত্রে দূতাবাসের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। দূতাবাসের ছাড়পত্র পাওয়ার পর লাশ দেশে পাঠানো হয়। এ ছাড়পত্রে অনুলিপি মন্ত্রণালয়ে আসলেও তা জানে না বিমানবন্দরে মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক। ফলে প্রবাসী শ্রমিকদের লাশ সরবরাহের ক্ষেত্রে আগাম সহযোগিতা করতে পারে না হেল্প ডেস্ক। বিভিন্ন সময়ে লাশ বুঝে নিতে আসা স্বজনরা সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ গত বুধবার বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ স্ব উদ্যোগে কার্গো হাউসেই ওয়ানস্টপ সার্ভিসের পুরো ব্যবস্থা করেছেন। গত সপ্তাহ থেকে এ সার্ভিস কার্গো হাউজের একটি ডেক্সেই দেয়া হচ্ছে। এখন সেটা দিবারাত্রি খোলা রাখা হচ্ছে। কাস্টমসের কর্তারাও এখন সার্বক্ষণিক থাকছেন। সেখানে আগত স্বজনদের জন্য বসার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে ৮নং গেট দিয়ে লাশ বের করা হলেও এখন সেটা কার্গো হাউজ দিয়েই বের করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জনকণ্ঠকে বলেন, ভোগান্তি যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। এখন সে কথা বলে আর লাভ কি। এখন আগের তুলনায় এই প্রক্রিয়া অনেক সহজ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশে থাকা মিশন থেকে এখন লাশের সবধরনের আগাম তথ্য একটি বিশেষ ফরমেটে বিমানবন্দরের কল্যাণ বোর্ডের ডেস্কে দেয়া হচ্ছে। এখান থেকে লাশের স্বজনের কাছে তাৎক্ষণিক তথ্য পাঠানো হয়। কি কি কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হয় সেটাও বলে দেয়া হচ্ছে। এটাকে আরও সহজ করার উপায় খোঁজা হচ্ছে।
×