ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ পথিকৃৎ শিল্পী হাশেম খান। বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন শিল্পীদের শিল্পী। এখন অনেক বয়স। তবে ক্লান্তিহীন। অবাক বিস্ময়ে আমরা দেখি, তিনি কাজ করে চলেছেন। বহু আগেই গড়ে নিয়েছেন নিজস্ব শিল্পভাষা। এর পরও যেন সাধ মেটে না। আরও আরও নতুনের সন্ধানে ছুটে চলেন তিনি। ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে যান। নীরিক্ষাধর্মী কাজের সর্বশেষ উদাহরণ হতে পারে তার ‘জোড়াতালির চালচিত্র।’ হাশেম খানের শিল্পকর্ম নিয়ে সম্প্রতি এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। ৭১টি শিল্পকর্ম দিয়ে চমৎকার সাজানো এখন নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারি। যারা দীর্ঘকাল ধরে হাশেম খানের শিল্পকর্ম দেখে আসছেন, কাজের ধরন পর্যবেক্ষণ করেছেন, পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানেন যারা; তারাও এবারের আয়োজন দেখে চোখ একটু কচলে নিয়েছেন। ক্যানভাসে নরম তুলির আঁচড় নয়। এ্যাক্রেলিক বা তেল রঙের খেলাটি নয়। শুকনো কাঠ শ্রমিকের দক্ষতায় খুঁড়েছেন তিনি। ‘জোড়াতালি’ দিয়েছেন। ‘জোড়াতালি’ শিল্পীর ভাষা। ফাঁকি দিয়েছেন বলে মনে হতে পারে। আদতে তা নয়। রসিকতার ছলে কাজের ধরনটি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন হাশেম খান। শুকনো কাঠের গায়ে প্রাণের সঞ্চার করেছেন তিনি। আরও একটি সত্তা, আরও একটি জীবন দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এভাবে গড়ে উঠেছে এক একটি শিল্পকর্ম। ভাস্কর্য ম্যুরাল কোলাজÑ সবই কাঠে। নিত্য দেখা সেগুন কাঠের বিশিষ্টার্থক গঠন নির্মিতি মুগ্ধ করে রাখে। কাঠ চিঁড়ে, টুকরো জোড়া দিয়ে, অমসৃণ গা ঘঁষে নিয়ে তাতে নিজের চিন্তার বিস্তার ঘটিয়েছেন শিল্পী। গ্যালারির দেয়ালজুড়ে কাঠচিত্র। সেখানে সুন্দর রিলিফ ওয়ার্ক। লোক চেতনার প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। কিছু বিমূর্ত উচ্চারণও কান পাতলে শোনা যায়। কাঠের ভাস্কর্যে ফুটে উঠেছে বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস। ঐতিহাসিক ৬ দফা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণসহ উত্তাল সময়ের স্মৃতি ধারণ করেছে কাঠ। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এসব ভাস্কর্য বাঙালীর প্রতিবাদের জেগে উঠার স্মারক হয়ে আছে। এ্যাক্রিলিক মাধ্যমেও কিছু কাজ করা হয়েছে। কাঠ, কাগজ ও এ্যাক্রেলিকে গড়া শিল্পকর্মগুলোর দিকেও তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। সব মিলিয়ে অনবদ্য। লিখে বোঝানো মুশকিল। বরং ঘুরে আসুন। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। এবার লালবাগ কেল্লা প্রসঙ্গ। ঢাকার অন্যতম প্রাচীন এই স্থাপনা রক্ষায় বিশেষ মনোযোগী হয়েছে বিষয়টাকে গুরুত্ব সহকারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে কেল্লার সীমানার মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দুটি বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সকালে এই অভিযান পরিচালিত হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসীম কুমার দে জানান, কেল্লার ৬ দশমিক ২ শতক জায়গা দখল করে সেখানে বাড়ি দুটি নির্মাণ করা হয়। দুটো বাড়ির বেজমেন্টেই লালবাগ কেল্লার দেয়ালের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছিল। ২০১৭ সালের ৩১ মে সুপ্রীমকোর্ট প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের পক্ষে রায় দেয়। রায়ে তিন মাসের মধ্যে স্থাপনা দুটি অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। উচ্ছেদ করার আগে সুপ্রীমকোর্ট বাড়ি দুটির মালিক হাজী মোঃ আবুল হাশেম ও মোঃ হারুনুর রশীদকে ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর আবুল হাশেমকে তার ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেয়। তিনি উচ্ছেদ কাজে সহযোগিতাও করেন। কিন্তু হারুনুর রশীদ ক্ষতিপূরণ বাবদ তার ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪ টাকার চেক গ্রহণ করেননি। তার বাড়িটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকুক। বেঁচে থাকুক শহর ঢাকার ঐতিহ্য।
×