ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাসিনার নেতৃত্বে ফের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্য দূর হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

হাসিনার নেতৃত্বে ফের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্য দূর হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে দেশের দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অন্য কোন দল বা কেউ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে উন্নয়ন কাজের গতি ধীর হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দারিদ্র্য নিরসন। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দেয়া উচিত। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে নিজের ৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুহিত এসব কথা বলেন। জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রিয় মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। শুভেচ্ছা জানানো হয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও। নিজ দফতরে কেক কাটার পাশাপাশি সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার খেতাব অর্জন করা এ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে দাঁড়ানোর ইচ্ছে নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে প্রার্থিতার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন বলেও জানান তিনি। মুহিত বলেন, দেশের সেবা করতে হলে মন্ত্রী থাকার দরকার হয় না। তবে মন্ত্রী থাকলে বেশি সেবা করা যায়। ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও কথা বলেছেন মুহিত। অর্থমন্ত্রীর বর্ণাঢ্য জীবন ॥ ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীর তৃতীয় সন্তান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত, দুই ছেলে ও মেয়ে সামিনা মুহিত নিয়ে নিয়ে তাঁর সংসারজীবন। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-সহ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে তৎকালীন সারা প্রদেশে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগদানের পর মুহিত তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। মুহিত পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চীফ ও উপসচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিরাজমান ছিল তার ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন। সংবিধানের বাধ্যবাধকতা পালনে পাকিস্তান ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলিতে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনৈতিক সমস্যা বিষয়ক গ্রন্থসহ বিভিন্ন বিষয়ে মুহিতের ২৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের তিনি একজন পথিকৃৎ। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবং এর পূর্বসূরি ‘পরশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৮২-৮৩ সালে অর্থমন্ত্রী মুহিত প্রথম বাজেট পেশ করেন। তখন রাজস্ব আয় ছিল মোট ২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা আর মোট সরকারী ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। অতঃপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার। অর্থমন্ত্রীর স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন।
×