ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের একমাত্র বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন ও সাফল্য অনেক

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

দেশের একমাত্র বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন ও সাফল্য অনেক

সমুদ্র হক ॥ মসলা সরাসরি খাবার নয়। আবার মসলা ছাড়া কোন খাবার তৈরিও হয় না। খাদ্য পণ্যের এক ধরনের নিরাপত্তা দেয় এ মসলা। মসলার ফসল অনেক। তবে গরম মসলা গঠিত তিনটি মসলা নিয়ে-দারুচিনি, লবঙ্গ (লং) ও এলাচ। দেশের সকল অঞ্চলে সব ধরনের মসলা আবাদ হয় না। যে কারণে বহু যুগ থেকে মসলা আমদানি করতে হয়। এ অবস্থার উত্তরণে বগুড়ায় স্থাপিত হয় মসলা গবেষণা কেন্দ্র। দেশের একমাত্র এ কেন্দ্রটি মসলার বহুমুখী উদ্ভাবনে তাক লাগিয়েছে। এখন ঘরেই আদার চাষ করা যাবে। যা প্রতিটি বাড়ির বছরের আদার চাহিদা মেটাতে পারে। সাদা এলাচও দেশেই উৎপাদন সম্ভব। গবেষকগণ বলছেন, বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে কৃষকরা আবাদ করলে মসলা আমদানিতে বহু কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে না। মসলা চাষ ও গবেষণায় দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে মহাস্থানগড়ের অদূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭০ একর প্লটের ওপর এই মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয় প্রায় দুই যুগ আগে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) নজরদারিতে এ গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত। এ কেন্দ্র এ পর্যন্ত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) নানা জাতের মসলা উদ্ভাবন করেছে। ইতোমধ্যে ১৫টি মসলা ফসলের উফশী ৩৪টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাত হলো : পিঁয়াজের ৫টি, মরিচের ৩টি, রসুনের ৪টি, আদার ৩টি, হলুদের ৫টি, ধনিয়া মেথি পান, মৌরির ২টি করে জাত। কালোজিরা, গোলমরিচ, পাতা পিঁয়াজ, আলুবোখারা, বিলাতি ধনিয়া ও দারুচিনিরি একটি করে জাত। এ ছাড়াও গবেষণাধীন রয়েছে ৪২টি মসলা ফসল। এর মধ্যে ৬টি প্রধান, ২৬টি অপ্রধান, এবং ১০টি বিদেশী জাতের মসলা। চলতি মসলার সঙ্গে গবেষণাধীন মসলাগুলো হলো : শলুক, তেজপাতা, রাঁধুনী, জোয়ান, ফিরিঙ্গি, চুঁইঝাল, একাঙ্গি, পিপুল, শঠি, দই রং, বচ, পুদিনা, পোলাও পাতা, লেমনগ্রাস, আম আদা, মিঠা তুলশি, পান সুপারি, জিরা, কাবাবচিনি, চিভস, অলস্পাইস, কারিপাতা, পান বিলাস, লবঙ্গ, পেস্তা, বাদাম, জয়ফল-জৈয়ত্রী। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের চিফ সায়েন্টেফিক অফিসার কলিম উদ্দিন জানালেন, দেশের একেক এলাকার মাটি একেক ধরনের মসলা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র যা উদ্ভাবন করছে তা মাঠ পর্যায়ের কৃষকের কাছে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনকে (বিএডিসি) জানানো হয়েছে। বগুড়া কেন্দ্রে বিদেশ থেকে নমুনা (স্যাম্পল) এনেও গবেষণা করা হচ্ছে। এমন একটি মসলা সাদা এলাচ। দেশে বর্তমানে সবুজ কালো নীল সাদা বেগুনিসহ ১৩ জাতের এলাচ আমদানি হয়। সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মোঃ আশিকুল ইসলাম জানান, বিদেশ থেকে সাদা এলাচের জাত এনে দেশের মাটি ও আবহাওয়ায় কিভাবে উৎপাদন করা যায় তার গবেষণা চলছে। তিনি আশাবাদী সাদা এলাচ এ দেশেই উৎপাদন সম্ভব। এ কেন্দ্রের বড় সাফল্য আদা উৎপাদনে। আদা চাষে মাটি না হলেও চলবে। বাড়ির আঙিনায়, ছাদে পলিব্যাগ বিছিয়ে তার ওপর নারিকেলের ছোবড়া, ধানের গুঁড়া (তুষ) কাঠের গুঁড়া একত্রিত করে চাষের ছোট্ট প্লট বানিয়ে কয়েকদিন রেখে দিয়ে তার মধ্যে আদা বুনতে হয়। একটি সল্যুশন প্রয়োগ করতে হয় সারের পরিবর্তে। আদা বপনের উপযুক্ত সময় এপ্রিল মাস। বপনের দশ মাসের মধ্যেই আদা ফলে। দেশে আদার চাহিদা বছরে দেড় লাখ মে. টন। উৎপাদিত হয় ৬০ হাজার মে. টন। বাকিটা আমদানি। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে ৩টি আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র ও ৪টি উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। আঞ্চলিক মসলা কেন্দ্র মাগুরা কুমিল্লা ও গাজীপুরে। উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র লালমনিরহাট, ফরিদপুর, সিলেট ও খাগরাছড়িতে। প্রতিটি কেন্দ্রের গবেষণালব্ধ ফলাফল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বারি) নিয়মিত জানানো হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমিতে মসলা আবাদ করে উৎপাদিত হচ্ছে অন্তত ২৯ লাখ মে. টন। দুই যুগ আগে মসলার উৎপাদন ছিল ৩ লাখ মে. টন। মসলা প্রযুক্তি হস্তান্নতরসহ গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অঞ্চলের ৫ হাজার ৬ শ’জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ কেন্দ্রে বিশাল পরিসরে গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য কর্মরত বিজ্ঞানীর সংখ্যা অপ্রতুল। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ফেলোশিপ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সিরিয়াল ফুড ও ভেজিটেবল চাষের আধিক্যের কারণে মসলা চাষের জমির স্বল্পতা রয়েছে। এ কেন্দ্রটি এ পর্যন্ত যত জাত উদ্ভাবন করেছে মাঠ পর্যায়ে তার পৌঁছানোর দায়িত্ব কৃষি উন্নয়ন করপোরশেন হয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। যার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি।
×