ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিরে দেখা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

ফিরে দেখা

এমন ভোটই চাই শরীফুল ইসলাম ॥ ২০ জানুয়ারি, শনিবার, দুপুর দেড়টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দিতে টিএসসিতে যাই। ভোট কেন্দ্রের বাইরে একপাশে আওয়ামী লীগ সমর্থক গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদ, অন্যপাশে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক জাতীয়তাবাদী পরিষদ এবং মাঝখানে বামপন্থী দল সমর্থক প্রগতি পরিষদের প্যান্ডেল। প্রতিটি প্যা-েলের সামনেই অসংখ্য মানুষের ভিড়। প্যান্ডেলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভোটারদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে নিজ নিজ পরিষদের প্যানেল। ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের সময় দেখা যায়, সকল প্যানেলের প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। মাঝে মধ্যে এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করছেন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো টিএসসি ও আশপাশের এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে পরিচিতজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে এক প্রবীণ ভোটার টিএসসি থেকে বের হওয়ার পথে তার পরিচিত একজনকে বলেন, আমরা তো এমন ভোটই চাই। জাতীয় নির্বাচনেও এমন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হওয়া দরকার। জাহাজ্যার চর এখন স্বর্ণদ্বীপ ফিরোজ মান্না ॥ বঙ্গোপসাগর আর মেঘনার মোহনায় জেগে উঠা ‘জাহাজ্যার চর’ ছিল দুর্ধর্ষ জলদস্যুদের অভয়াশ্রম। দস্যুতা করে নিরাপদ আশ্রয় জাহাজ্যার চরেই থাকত তারা। এখানেই গড়ে তুলেছিল অস্ত্রের বিশাল ভা-ার। আনন্দ বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল তাদের। লোকালয় থেকে যখন যাকে খুশি তুলে নিয়ে যেত চরে। বিশাল ওই চরের রাজা তারাই ছিল। সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল চরটিতে। ভয়ে কেউ যেতেও সাহস করতেন না। যারা মহিষ ‘বাথান’ চড়াতেন তারাও ছিল তাদের কাছে জিম্মি। যখন খুশি তখনই মহিষ-বাথান বা দল থেকে মহিষ নিয়ে যেত। এই মহিষগুলোর মালিকরা আবার থাকতেন নোয়াখালীর মূল ভূখ-ে। তারাও সশস্ত্র দস্যুদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারত না। পুলিশকেও কখনও তারা নালিশ করার সাহস পায়নি। বছরের পর বছর ধরে জেগে উঠা জাহাজ্যার চরের গল্পটা এমনই ছিল। শিশুদের ঘুম পাড়ানি ভয়ের এই দ্বীপ চরটি এখন দস্যুমুক্ত নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান। অল্প কিছুদিন ধরে চরের দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করেছে। মাত্র পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চরটিতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার কাজ শুরু করে। অল্প দিনের মধ্যে চরের চেহারায় নানা রং লাগে। যখন সেনা সদস্যরা চরটিতে প্রশিক্ষণ করতে যায় তখন থেকেই দস্যুরা পালাতে শুরু করে। কেউ আবার সেনা সদস্যদের হাতে আটকও হয়। এখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল। সেনা সদস্যরা চরটি পাওয়ার পর এর নামকরণ করে ‘স্বর্ণদ্বীপ’। সেই থেকেই জাহাজ্যার চর নামটি ঢাকা পড়তে শুরু করে। এখন স্থানীয় লোকজনও দ্বীপটিকে ‘স্বর্ণদ্বীপ’ হিসাবেই চেনে ও ডাকে। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও স্বর্ণদ্বীপের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। চরটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকা- চালানো হচ্ছে। নির্মাণ করা হচ্ছেÑ রাস্তা আর নানান অবকাঠামো। ইতোমধ্যে ময়নামতি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ৩১ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের সব প্রস্তুতি শেষ। নির্মাণকাজ শুরু হবে যে কোনদিন। রড সিমেন্ট ইট বালু সব সেখানে স্তূপাকরে রাখা হয়েছে। ঝাঁউবন ঘেরা দ্বীপে লাগানো হচ্ছে নানা রকমের বৃক্ষ। ইতোমধ্যে সেখানে নারিকেল বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। ময়নামতি ক্যাম্পের সামনে লাগানো হয়েছে বটবৃক্ষসহ অনেক জাতের গাছ। এখনও গাছগুলো ছায়া দিতে শুরু করেনি। তবে তর তর করে বেড়ে উঠছে লাগানো বৃক্ষরাজি। এটেল ও দোঁআশ মাটির সমন্বয়ে জেগে উঠা চরে জ্বলছে বিদ্যুতের বাতি। স্থাপন হয়েছে মোবাইল টাওয়ার। কিছুদিন আগেও অন্ধকারে থাকা ওই চরে শহরের সুবিধা তৈরি করা হচ্ছে। চারদিকে নির্মাণ কর্মযজ্ঞের শব্দই বলে দিচ্ছে ২৮ কিলো মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ কিলোমিটার প্রস্থ চরে মানব সভ্যতা গড়ে উঠছে।
×