ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অশিক্ষা কুশিক্ষা ও সুশিক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

অশিক্ষা কুশিক্ষা ও সুশিক্ষা

শিক্ষা বলতেই সাধারণত মনে আসে সুশিক্ষার কথাই। মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠবে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে। নিজেকেও আলোকিত করে তুলতে সুশিক্ষার নেই বিকল্প। কিন্তু কুশিক্ষা, অশিক্ষা মানুষকে ধাবিত করে অন্ধকারের দিকে। আলোময় জীবন থেকে যাকে রাখে দূরে। শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলে শিক্ষিত জাতি আর সেই সমাজ ও জাতি দেশকে নিয়ে যায় উন্নত স্তরের দিকে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো উন্নতির সোপান পাড়ি দিতে পেরেছে তাদের সুশিক্ষিত মানবের জন্যই। কিন্তু শিক্ষা যদি হয় কুশিক্ষার আবরণে আদৃত, তবে ভয়ঙ্কর মানবের ঘটে বিস্তার। তারা পারে না, হেন কাজ নেই। অশিক্ষা মানুষকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখে। তাতে হয়ত তেমন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু কুশিক্ষার বিস্তার সর্বগ্রাসী প্লাবন নিয়ে আসে সমাজে। বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, কতটা জাতিগত উন্নতির বিস্তার ঘটাচ্ছে, সভ্যভব্য জাতিতে উন্নত করে তুলছে, সে নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে। জ্ঞানহীন সমাজ যদি বিস্তৃত হয়, তবে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অরাজকতার বিষয়টির এমনই বিস্তার ঘটেছে যে, তার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এসব অপকর্ম রোধ করবে, তেমন সাধ্য বুঝি কারও নেই। এমনিতেই শিক্ষা নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা, কোচিং ব্যবস্থার ব্যাপক বিকাশ শিক্ষার্থীদের জীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। শিক্ষার্থীরা পরিণত হয়েছে গিনিপিগে আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিবিধ ঘটনা, শিক্ষার ভবিষ্যতকে করে তুলেছে কণ্টকাকীর্ণ। শিক্ষানীতি আছে, কিন্তু তার প্রয়োগে অজস্র ত্রুটি-বিচ্যুতি নীতিহীনতাকেই প্রাধান্য দিয়ে চলছে যেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় নামক প্রতিষ্ঠানটির হাল হকিকত খুবই করুণ। তার অধীনস্থ ভবনগুলোর ইট, কাঠ, টেবিল, চেয়ার, ফাইলপত্র সর্বত্র দুর্নীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, যেসব পূত ও পবিত্র করে গড়ে তোলা দুঃসাধ্য। খোল নলচে পাল্টে দিয়েও যে রক্ষা করা যাবে, তেমন সম্ভাবনা অতিশয় ক্ষীণ। শিক্ষা খাতে ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই ‘ওপেন সিক্রেট।’ বদলিবাণিজ্য, ভুয়া সনদপত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ, শিক্ষকদের অবসর ভাতা, পাঠ্যপুস্তক ছাপা, শিক্ষক নিয়োগ, পদায়ন, প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের অনুমতিসহ নানাবিধ কাজে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়ে উঠছে হৃষ্টúুষ্ট। এই সিন্ডিকেটটির বাইরে গিয়ে সেবাপ্রার্থীরা মন্ত্রণালয় থেকে কোন কাজ করতে পারেন না। সব মিলিয়ে ঘুষ নামক খাদ্যের আড়তে পরিণত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘ঘুষ’ বন্ধ যাতে না হয়, সে জন্য নানা বিধিবিধান রয়েছে চালু। ঘুষের হাটবাজারে কত কী যে বেচাকেনা হয়, তার হদিস পাওয়া যায় না। শিক্ষামন্ত্রীর পরিচালকরা অর্থবিত্তের বিশাল যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, এক শতকে তাতে ধস নামার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। মন্ত্রীর নির্বিকারত্বের মাত্রা এত সহনীয় পর্যায়ে যে তিনি এসব দেখেও দেখেন না, শুনেও শোনেন না। শুধু গদি রক্ষার জন্য নিজেকে নিষ্কলুষ প্রমাণ করতে এতই উদগ্রীব যে, নানান সময়ে নানান বাক্য উদ্গিরণ করেন, যা তার কর্মদক্ষতা, কর্মকুশলতা, কর্মক্ষমতার প্রমাণ রাখে না। মন্ত্রণালয়জুড়ে অদ্ভুত এক আঁধার বিরাজ করছে বহুকাল ধরেই। তিনি এই অনিয়ম, অযৌক্তির বিরুদ্ধে ন্যূনতম পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেবেন কি। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তার যে কেচ্ছা কাহিনী শিকে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে তাতে মাথা হেঁট হয়ে আসে। জনগণ কি এমন শিক্ষা মন্ত্রণালয় চেয়েছে? যদি না চায়, তবে এই মন্ত্রণালয় নিয়ে দেশবাসী কী করতে পারে? শিক্ষা খাতের সর্বব্যাপী দুর্নীতি রোধে সংসদীয় কমিটিও তৎপর নয়। এই এক বন্ধ্যা অবস্থা। এর থেকে পরিত্রাণ জরুরী।
×