ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ৪টি নিতে পারলেই ৫০০ উইকেটের বিরল অর্জন

আরেকটি মাইলফলকের সামনে সাকিব

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

আরেকটি মাইলফলকের সামনে সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছেন সাকিব আল হাসান। একই সঙ্গে তিনি ব্যাট হাতে ওপেনার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে রানের প্রতিযোগিতায় আছেন আবার বল হাতে দেশের পক্ষে সর্বাধিক ওয়ানডে উইকেট শিকারি মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গেও আছেন প্রতিযোগিতায়। তবে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তিনি এখন ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরাদের কাতারে। একের পর এক রেকর্ড ছুঁয়ে সেই প্রমাণটাও দিচ্ছেন সাকিব। ইতোমধ্যেই তিন ফরমেটের ক্রিকেটে ১০ হাজার রান ছুঁয়েছেন এবং সবমিলিয়ে ৪৯৬ উইকেট নিয়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নৈপুণ্য বিরল। সাকিবসহ মাত্র চারজনের এমন কীর্তি আছে যারা ব্যাট হাতে ১০ হাজার রান এবং বল হাতে ৪০০ উইকেটের বেশি দখল করেছেন। আজ মাত্র ৪ উইকেট শিকার করতে পারলেই তিনি ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রান করার পাশাপাশি ৫০০ উইকেট শিকারের বিরল অর্জনের অধিকারী হবেন। আর তিনটি উইকেট নিতে পারলেই নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সর্বাধিক উইকেট দখলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে যাবেন ওয়াকার ইউনুসকে ছাড়িয়ে। সবমিলিয়ে ২৯৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্যারিয়ারে সাকিবের ঝুলিতে আছে ৪৯৬ উইকেট। এছাড়া আছে ১০ হাজার ৫২ রান। ক্রিকেট ইতিহাসের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে একই সঙ্গে ব্যাট হাতে ১০ হাজার রান এবং বল হাতে ৪ শতাধিক উইকেটের কীর্তি গড়ার গৌরব অর্জন করেছেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে। সেদিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস সবার ওপরে। তিনি ৫১৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২৫ হাজার ৫৩৪ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৫৭৭ উইকেট। পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি ৫২৩ ম্যাচে ১১১৮৫ রান ও ৫৪০ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয়। তিন নম্বরে আছেন সনথ জয়সুরিয়া। এ লঙ্কান ৫৮৬ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২১ হাজার ৩২ রান করেছেন এবং ৪৪০ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু অলরাউন্ডার হিসেবে যে কীর্তি গড়েছেন সাকিব সেটা করে দেখাতে পারেননি গ্যারি সোবার্স, ওয়াসিম আকরাম, কপিল দেব, ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের মতো অলরাউন্ডাররা। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে হারারেতে অভিষেক হয়েছিল সাকিবের। ১৮৩ ওয়ানডে খেলে করেছেন ৫২৩৫ রান। একই বছর টি২০ ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া সাকিব এ ফরমেটে ৬১ মাচ খেলে ২৩.০৭ গড়ে ১২২৩ রান করেছেন ৬ অর্ধশতকসহ। ২০০৭ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর ৫১ ম্যাচে ৪০.৩৮ গড়ে করেছেন ৩৫৯৪ রান। ৫ সেঞ্চুরি ও ২২ হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে এ ফরমেটে তার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও দুরন্ত সাকিব একসময় তিন ফরমেটেই আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। এখনও টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিনি। এবার যেন ওয়ানডের সেরা হতেই উঠে-পড়ে লেগেছেন। তিন ম্যাচের দুটিতে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এবং তিনটিতেই পেয়েছেন ৩টি করে উইকেট। একটা সময় তিন ফরমেটেই ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে অলরাউন্ড র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিলেন। দীর্ঘ সময় তা ধরেও রেখেছিলেন। এবার যেন আবার তা ফিরে পাওয়ার জন্য নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এছাড়া তার ব্যাট হাতে একটি প্রতিযোগিতা চলছে দুই সতীর্থ তামিম ও মুশফিকের সঙ্গে। তামিম সর্বাধিক ৬ হাজার ১০ রান করেছেন ওয়ানডেতে, মুশফিকের আছে ৪ হাজার ৬৭০ রান। দু’জনের মাঝামাঝি আছেন সাকিব ৫২৩৫ রান করে। আবার উইকেট দখলের ক্ষেত্রে স্পষ্ট লড়াই পেসার মাশরাফির সঙ্গে। একটা সময় দেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বাধিক উইকেট শিকারিও ছিলেন সাকিব। কিন্তু মাঝে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন মাশরাফি। তিন ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে তাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছেন এখন সাকিব। মাশরাফির উইকেট ১৮৫ ম্যাচে ২৩৭। আর সাকিবের ১৮৩ ওয়ানডেতে ২৩৫। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনন্য এক রেকর্ডে নাম লেখানোর মোক্ষম সুযোগ সাকিবের। সেজন্য প্রয়োজন ৪ উইকেট। তাহলে তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস ও পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১০ সহস্রাধিক রানের পাশাপাশি ৫০০ উইকেটের মালিক হয়ে যাবেন তিনি। একই সঙ্গে মাশরাফিকেও ছাড়িয়ে দেশের পক্ষে সর্বাধিক উইকেট শিকারি হয়ে ওঠারও সুযোগ রয়েছে। মাত্র তিনটি উইকেট নিতে পারলে কিংবদন্তি ইয়র্কারের রাজা ওয়াকারকে এক ভেন্যুতে সর্বাধিক উইকেট ছোঁয়ার কীর্তিতে ছাড়িয়ে যাবেন। ওয়াকার শারজায় ১১৪ উইকেট নিয়েছেন ৬১ ওয়ানডে খেলে। আর মিরপুরে ৭৬ ওয়ানডে খেলে ১১২ উইকেট পেয়েছেন সাকিব। এই তালিকায় অবশ্য এক নম্বরে আরেক কিংবদন্তি পাক পেসার ওয়াসিম আকরাম। তিনি শারজায় ৭৭ ম্যাচে ১২২ উইকেট নিয়ে এক ভেন্যুতে সর্বাধিক উইকেট শিকারের রেকর্ড ধরে রেখেছেন গত ১৬ বছর ধরে। আপাতত দুই নম্বরে উঠে আসার সুযোগ রয়েছে সাকিবের। আর আজ ৯৬ রান করতে পারলে এক ভেন্যুতে সর্বাধিক রান করার তালিকায় পাকিস্তানের ইনজামাম-উল-হককে টপকে তিনে ওঠার সুযোগও আছে সাকিবের।
×