ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সামঞ্জস্য রেখে জনবলের তালিকা হচ্ছে

সরকারী হাসপাতালের রোগীশয্যা ও জনবল সাজানোর পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

সরকারী হাসপাতালের রোগীশয্যা ও জনবল সাজানোর পরিকল্পনা

নিখিল মানখিন ॥ এলাকার জনসংখ্যা অনুযায়ী সরকারী হাসপাতালের রোগীশয্যা ও জনবল সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে পুরনো জনবল দিয়ে নতুন নতুন রোগীশয্যার চিকিৎসাসেবা সামাল দিয়ে আসছে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ সরকারী হাসপাতাল। এতে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা। রাজধানীসহ দেশের অনেক সরকারী হাসপাতালে রোগীশয্যা (বেড) বৃদ্ধি করেছে সরকার। নির্মাণ করেছে নতুন নতুন হাসপাতাল। কিন্তু শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এ কারণে হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়লেও সেবার মান খুব বেশি বাড়েনি বলে অভিযোগ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেরও করুণ চিত্র। গত ১০ বছরে বিভিন্ন সময়ে ঢামেক হাসপাতালকে ১ হাজার ১শ’ থেকে ২ হাজার ৬শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু এক হাজার ১শ’ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ২ হাজার ৬শ’ শয্যার এই হাসপাতাল। ৩৭৫ চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন ২৯৬ জন। ৭৯ পদ শূন্য রয়েছে। নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যাও ১ হাজার ১শ’ শয্যার। অথচ এতসংখ্যক শয্যার হাসপাতাল চালাতে গেলে কমপক্ষে ১ হাজার চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন। ঢামেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, স্থায়ী পদের বাইরেও বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হওয়া চিকিৎসক, ইন্টার্নি, অবৈতনিক চিকিৎসকদের দিয়ে রোগীর চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট, আয়াসহ কর্মচারী সঙ্কটের কারণে হাসপাতালের রোগী সেবা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে কিছু পদ সৃষ্টি করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। তাই রোগী সেবার মান বাড়াতে হলে শয্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনবল বাড়াতে হবে বলে মনে করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান । শুধু ঢামেক নয়, দেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ডবয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনবল সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এক যুগ আগে থেকে পর্যায়ক্রমে সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদর হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হলেও এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়নি। এ কারণে হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়লেও সেবা বাড়েনি। জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট সঙ্কটের কারণে সরকারী হাসপাতালে কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না। বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারী প্রতিটি হাসপাতালেই জনবল সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন পদ সৃষ্টি না করেই হাসপাতালগুলোতে পর্যায়ক্রমে শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এসব শয্যায় রোগী ভর্তি থাকলেও সেবার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। এতে করে রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাজধানীর কোন কোন হাসপাতালে সৃষ্ট পদের বাইরে অতিরিক্ত কিছু চিকিৎসক দিয়ে সেবা চালানো গেলেও জেলা শহরে চিকিৎসা ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এর ওপর হাসপাতালগুলোতে শয্যার বাইরে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থায় তারা শয্যাসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হাসপাতালে জনবল বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, রাজধানীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে পরিমাণ জনবল দিয়ে সাড়ে ৮শ’ শয্যার হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে, তাতে সঠিকভাবে রোগী সেবা নিশ্চিত করা অনেকটা কষ্টসাধ্য। বর্তমানে বিদ্যমান চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীসহ জনবল দ্বিগুণ করা গেলে রোগী সেবা নিশ্চিত করা সহজ হতো। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক বলেন, শর্তানুযায়ী ৫০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ১৯ জন, একশ’ শয্যার জন্য ৪২ জন, দেড় শ’ শয্যার জন্য ৪৮ জন এবং আড়াই শ’ শয্যার জন্য ৫৮ জন চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন। নার্স সংখ্যা থাকবে দ্বিগুণ হারে। সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীও থাকতে হবে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলেই নতুন জনবল নিয়োগ দিতে পারে না। এর সঙ্গে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় জড়িত। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব বলেন, শুধু শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে রোগী সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শয্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ও আনুষঙ্গিক সহায়তা বাড়াতে হবে। অন্যথায় রোগী সেবা নিশ্চিত করা যাবে না। সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে। বিএমএ সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন কয়েক বছর ধরে সরকারকে এ বিষয়টি অবগত করে আসছে। বিএমএর পক্ষ থেকে শয্যাসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনবলের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্স না থাকলে শুধু শয্যা বাড়িয়ে কোন লাভ হবে না। বাড়তি শয্যায় ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও অন্যান্য সহায়তা বাড়াতে হবে।
×