ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দশ বছরে ৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে ৮৭৯১ প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

দশ বছরে ৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে ৮৭৯১ প্রতিষ্ঠান

সংসদ রিপোর্টার ॥ গত দশ বছরে দশ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে আট হাজার ৭৯১ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। দেশের ৯১টি তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের মোট ছয় লাখ ছয় হাজার ৫০৩ কোটি ঋণ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৬৫ হাজার ৬০২ কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ তথ্য জানান। একইসঙ্গে তিনি বেসিক, সোনালী, ফারমার্সসহ বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকের ব্যাপারে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো বর্ণনা করেন। এ ছাড়া তিনি সংসদে জানান, বর্তমান সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের অর্থপাচারের ঘটনা ভোলেনি। মোঃ রুস্তুম আলী ফরাজীর খেলাপী ঋণ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদে ঋণদাতাদের পাশাপাশি এক হাজার ৯৫৬ শীর্ষ ঋণখেলাপীর নাম সম্বলিত তালিকা উপস্থাপন করেছেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খেলাপী ঋণ রোধ করতে সরকার খেলাপী গ্রাহকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবগুলো ব্যাংকের ঋণ আদায়ের ইউনিটকে শক্তিশালী করতে বলা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি সম্পূরক প্রশ্নর প্রশ্ন করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো এবং ভাই সাঈদ ইস্কান্দারসহ তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশ থেকে ৯৮০ কোটি দুই লাখ টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন এই সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। জবাবে অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও তাদের সহযোগীরা বহু অনাচার করে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সব সময়ই মামলাগুলো প্রলম্বিত করার একটা চেষ্টা চলে। আর আমাদের আইন ব্যবস্থা সহজ বিধায় তা সম্ভবও হয়। তবে সরকার তাদের দুর্নীতি-অর্থপাচারের কথা ভোলে নাই। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মিলন তার প্রশ্নে অভিযোগ করেন, বিগত তিন বছর ধরে আমরা বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের বহু দুর্নীতির কথা শুনেছি। ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালকরা সাইনবোর্ড সর্বস্ব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে সেই অর্থ নিজেরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। ব্যাংকটি খেলাপী ঋণ গ্রহীতাকে বার বার ঋণ দেয়ার নজিরও স্থাপন করেছে। একইভাবে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকেও সীমাহীন অনিয়ম হচ্ছে। অনুপস্থিত পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়েছে। এবি (আরব-বাংলাদেশ) ব্যাংকের যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার হয়েছে। প্রায় হাজার বাংলাদেশী মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে। একই সময়ে এ দেশীয়রা সুইচ ব্যাংকে খুলেছে নতুন ৫০০ একাউন্ট।’ এ ব্যাপারে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ জানানোর দাবি জানান কুমিল্লার এই সংসদ সদস্য। একই দলের সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ফেনীর সংসদ সদস্য বেগম শিরীন আখতারও ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও অব্যস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো সংসদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে সংঘটিত দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকে সংঘটিত দুর্নীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে একজন পর্যবেক্ষকও নিয়োগ দিয়েছে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এক পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অপসারণ করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি ফারমার্স ব্যাংকের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভায় ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ও নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণ পুনরুদ্ধারে বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়ে আমানতকারীদের আস্থা অর্জনে তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমডিকেও অপসারণের পাশাপাশি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও জানান, এবি (আরব-বাংলাদেশ) ব্যাংকের যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়ার ঘটনাও দুদক তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ক তথ্যাদি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ডহোম তৈরি করা বাংলাদেশীদের ব্যাপারেও বিএফআইইউ দুদক-কে তথ্য দিয়েছে। সংরক্ষিত আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সানজিদা খানমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ঋণ খেলাপী বা অনিয়মে জড়িতদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন। অনেকে জেলে আছেন। আরও অনেকের বিচার চলছে। তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, আমি কয়েক দিন আগেও সংসদে বলেছি- ব্যাংক ব্যবস্থায় এখনও কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে।
×