ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩০ বছরেও বিচার হলো না চট্টগ্রাম গণহত্যার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

৩০ বছরেও বিচার হলো না চট্টগ্রাম গণহত্যার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ যথাযথ কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বুধবার পালিত হয়েছে ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস।’ ১৯৮৮ সালের এ দিনে নগরীর লালদীঘি এলাকায় তৎকালীন আটদলীয় জোটনেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছিলেন ২৪জন। বিশেষ এ দিবসে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশ পথে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ, আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এ দিকে, ৩০ বছরেও এই হত্যাকা-ের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ এবং কষ্টবোধ রয়েছে নিহতদের পরিবারে। আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ রুহুল আমিনের আদালতে। তবে মামলার দুই আসামি বাদী, সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ সাক্ষী ইতোমধ্যেই প্রয়াত হয়েছেন। আগামী ২৮ জানুয়ারি মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য্য রয়েছে। এ দিন ১১ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে গত দশ জানুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এক বছরের মধ্যে মামলাটির বিচার কাজ সম্পন্ন হবে এমন আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকটি লালদীঘি মাঠে জনসভায় যাওয়ার সময় আদালত ভবনের প্রবেশপথ পর্যন্ত এলে শুরু হয় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ। এতে প্রাণ হারান ২৪জন। ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনা না করে সকলের মরদেহ বলুয়ারদীঘি শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এরশাদ সরকার আমলে সংঘটিত এ ঘটনায় তখন মামলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯২ সালের পাঁচ মার্চ এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করেন আইনজীবী মোঃ শহীদুল হুদা বাদী হয়ে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় স্থবির হয়ে থাকে মামলাটির বিচার কার্যক্রম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সচল হয় এ মামলা। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, মামলার আসামি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদা, পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন, মামলার বাদী মোঃ শহীদুল হুদা এবং সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি আবদুল কাদের মারা গেছেন। এ মামলায় সাক্ষী রাখা হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমীর হোসেন আমু, বেগম সাজেদা চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল জলিল, এমএ মান্নান, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এবং আতাউর রহমান খান কায়সার। এর মধ্যে শেষ পাঁচজন বর্তমানে বেঁচে নেই। আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলাটি সচল হওয়ার পর ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে আদালতে সাক্ষ্য গৃহীত হয়েছে ৪৬জনের। এর মধ্যে ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে যাওয়ার পর সাক্ষ্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনসহ ১১জন। দু’দফা তদন্ত শেষে দাখিল করা চার্জশিটে মামলার আসামি আটজন। এ মামলা আগামী এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হতে পারে এমনই আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। অকুস্থলে নির্মিত হবে স্মৃতিসৌধ ॥ চট্টগ্রামে লালদীঘি মাঠ সংলগ্ন আদালতের প্রবেশ পথে যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতিসৌধও নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ঘটনার পর সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছিল, যা অবহেলিত পড়ে আছে। এই সৌধকে সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে চউক। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানান, আমরা শহীদদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। স্মৃতিসৌধ ঘিরে একটি মুক্তমঞ্চও স্থাপন করা হবে। নির্মাণ কাজও শুরু হবে শীঘ্রই।
×