ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের এক হোতা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের এক হোতা গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিনব পন্থায় অপহরণের পর গহীন জঙ্গলে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়কারী সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা অপহরণকারী চক্রের এক হোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মহানগর শাখা। ২৩ জানুয়ারি রাতে পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল মিরপুর থানাধীন ২ নম্বর সেকশনের এফ ব্লকের ১ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়ির নিচতলা থেকে অপহরণকারী চক্রের হোতা শফিকুল ইসলাম ওরফে শামছুল হক ওরফে বাবুল ওরফে মলম বাবু ওরফে ডাকাত লিতুকে (২৮) গ্রেফতার করে। বাবুলের কাছ থেকে অপহৃতদের কাছ থেকে নেয়া দুটি মোবাইল ফোন ও বিকাশের যে নম্বরের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয়েছে, সেই সিম উদ্ধার হয়েছে। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঢাকার শাহআলী থানায় মোঃ আরিফ খান (৩২) নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলায় বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। আরিফের মামলার বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আরিফ রাইনখোলায় রাহাত থাই এ্যালুমিনিয়াম এ্যান্ড গ্লাস হাউস নামের একটি দোকান দিয়ে প্রায় এক বছর ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বেলা পৌনে তিনটার দিকে গ্রেফতারকৃত বাবুল (২৮) তার দোকানে যায়। বাবুল জানায়, তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর চন্দ্রা মহিলা ক্যাডেট কলেজের পেছনে। গ্রামে নির্মাণাধীন পাঁচতলা বিল্ডিংয়ে থাই গ্লাস ও এ্যালুমিনিয়ামের কাজ করা হবে। ভবনের মাপ নিয়ে দোকানে বসে ফিটিং করে দিলে ট্রাকযোগে সেগুলো নিয়ে বাড়িতে লাগানো হবে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে বাবুল তার দোকানে গিয়ে দাম দর ঠিক করে। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুপুরে আরিফ ও তার দোকানের মিস্ত্রি সোহাগ খলিফাকে (২৭) নিয়ে বাসযোগে গাজীপুরের দিকে রওনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চন্দ্রা মহিলা ক্যাডেট কলেজের সামনে নেমে ইজি বাইকযোগে রওনা হয়। কিছু দূর যাওয়ার পর মুন্সী নামের এক ব্যক্তি তাদেরকে রিসিভ করে। সেখান থেকে বাবুলসহ তারা জঙ্গলের দিকে ৮ থেকে ১০ মিনিট হাঁটতে থাকে। এতে করে আরিফ ও তার মিস্ত্রির সন্দেহ হয়। সামান্য দূরেই তাদের সেই বাড়িটি বলে জানায়। এ সময় সেখানে বাবুলের দলের অপহরণকারীরা আরিফ ও তার মিস্ত্রিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের হাত পা, মুখ বেঁধে ফেলে। লোহার রড ও চাপাতি দিয়ে আরিফ আর তার মিস্ত্রিকে আহত করার পর তাদের জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন দুটি ও সাত হাজার টাকা নিয়ে যায়। আরিফের মোবাইল দিয়ে তার বাড়িতে ফোন দিয়ে তাদের অপহরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে আরিফের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৮৬ হাজার টাকা নেয়। টাকা নেয়ার পর তাদের হাত পা বাঁধা অবস্থায়ই ফেলে যায় অপহরণকারীরা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ জানান, বাবুলের পিতার নাম ইউনুস মিয়া। মায়ের নাম দুধ বানু। বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানাধীন কবিরপুরের কাঠাইল্লা গ্রামে। বাবুল মিরপুরের ওই বাসায় ভাড়ায় বসবাস করত। বাড়ির মালিকের নাম আসমা বেগম। অভিনব কায়দায় বাবুল টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের এভাবে অপহরণ করত। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ দিন ধরেই বাবুল এভাবে ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে গভীর জঙ্গলে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করছিল। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের একাধিক মামলা রয়েছে।
×