ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীন, ভারত ও রাশিয়ার প্রতি এপিএইচআর ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে পাঁচ সুপারিশ

মিয়ানমারকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দেয়া বন্ধ করুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

মিয়ানমারকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দেয়া বন্ধ করুন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা নিধনের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের নিকট অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ না করার জন্য চীন, ভারত ও রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান পার্লামেন্ট ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগের জন্য আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এপিএইচআর এই আহ্বান জানায়। রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ শেষে এপিএইচআর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য ও এপিএইচআর- এর চেয়ারপার্সন চার্লস সান্টিয়াগো। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট সদস্য লুইস নেগ ও থাইল্যান্ডের সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য রাচাডা ডেইনডেরেক। সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য চার্লস সান্টিয়াগো বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে নিরপরাধ রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে। তারা রোহিঙ্গা নিধনে অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করেছে। হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে। তবে মিয়ানমারের এই সেনাবাহিনীকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে ভারত, চীন ও রাশিয়া। আমরা এসব দেশের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন মিয়ানমারকে আর সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ না করে। কেননা এসব সরঞ্জাম রাখাইনের নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাখাইনে নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে এমন নির্মম কাজ হতে পারে তা কেউ ভাবতে পারে না। বর্মী সেনারা ইতোমধ্যেই রাখাইনের ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এটি একটি অসুস্থতার লক্ষণ। সে কারণে মিয়ানমার সেনাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। রাখাইন অঞ্চলে মিয়ানমার বাহিনীকে নিরস্ত্র করতে হবে। মিয়ানমারের যে তিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এ হত্যাযজ্ঞে জড়িত, সবাই তাদেরকে চেনে। তাদের অপরাধ যুদ্ধাপরাধ। এজন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করে চার্লস সান্টিয়াগো বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনের সময় তিনি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমরা তার সাহসের প্রশংসা করি এবং তার পাশে থাকতে চাই। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যায় কীভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি আসিয়ানের পক্ষ থেকে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে । আমরা তাদের মুখ থেকে তাদের অবস্থা শুনতে চেয়েছি। মালয়েশিয়ার এই পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, আমরা কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সমস্যা অনুধাবন করতে চেয়েছি। তারা প্রকৃতপক্ষেই রাখাইনে ফিরে যেতে চায়। কেননা সেখানে তাদের বাড়ি-ঘর, জমিজমা রয়েছে। তবে তারা নির্ভয়ে ফিরতে চায়। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এই ভয় কাটাতে হবে। এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন তারা আর ভয় না পায়। এক প্রশ্নের উত্তরে চার্লস সান্টিয়াগো বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আমরা আসিয়ানের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। তবে আসিয়ানের নিয়ম অনুযায়ী এক দেশ আরেক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে কাজ করছি। কেননা এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা না থাকলে, সকল দেশের ওপরই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট সদস্য লুইস নেগ বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে বলে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন সেখানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে সেটা দেখতে হবে। তাই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় এসব বিষয় ও যুক্ত করা জরুরী বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। থাইল্যান্ডের সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য রাচাডা ডেইনডেরেক বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান না হলে এই সমস্যা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যেই থাইল্যান্ডে বিশ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। অন্যান্য দেশেও রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছে। তাই সকলের স্বার্থেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে এপিএইচআর-এর পক্ষ থেকে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সম্পদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। নিজ দেশে নাগরিকত্ব দিতে হবে। রোহিঙ্গারা যখন দেশে ফিরে যাবে তখন সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং তাদের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা দিতে হবে। উল্লেখ্য, এপিএইচআর এর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা গত ২২ জানুয়ারি কক্সবাজারে কুতুপালং ও বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। ঢাকায় ফিরে কমিটির সদস্যরা এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
×