ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আগামী ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তবে কোন দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে সিইসি তা নির্দিষ্ট করে না বললেও ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, ইসি থেকেই ভোটগ্রহণের দিন তাকে জানানো হয়েছে। এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে ইসি। বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এ সময় তাকে রাষ্ট্রপ্রতি নির্বাচনে ভোটারদের তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটার তালিকা চেয়ে স্পীকারের কাছে চিঠি দেয় হয়। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন সংসদ সদস্যরা। সেই অনুযায়ী এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মোট ভোটার ৩৪৮ জন। তবে নির্বাচনে একমাত্র প্রার্থী হলে সেক্ষেত্রে ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে একজন মাত্র প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে এখনও কারও নাম চূড়ান্ত করা না হলেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদই যে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত। অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি। মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়া হবে। এটা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারক যারা তারা নিশ্চয়ই বসবেন, মনোনয়ন দেবেন। এটার ব্যাপারেও কিন্তু একটা পদ্ধতি আছে। সে পদ্ধতি অনুসরণ করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ঘোষণা করবে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। রাষ্ট্রপ্রতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি এ পদে নির্বাচিত হন। তাঁর ৫ বছরের মেয়াদের শেষ দিন আগামী ২৩ এপ্রিল। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষে পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে যে ৩০ দিন এই ৩০ দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। এ হিসাবে বুধবার ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। আইনী বাধ্যবাধকতা মেনে আজ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে ইসি। এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এদিকে জাতীয় সংসদ ভবনের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আইন অনুযায়ী তারা স্পীকারের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। নির্বাচনের জন্য কমিশন সংসদ সচিবালয় এবং সংসদের কী ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পেতে পারে তা নির্ধারিত আছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তারা এসেছিলেন উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আইনগত বাধ্যবাধকতার একটা অংশ হিসেবে স্পীকারের সঙ্গে দেখা করেছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আইনগতভাবে স্পীকারের কিছু নির্দেশনা থাকে, সেটা নিয়েছি। তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে আগামী ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজকে কমিশনের বৈঠকে শিডিউল চূড়ান্ত হবে। সেটা সংসদ সচিবালয়কে জানিয়ে দেয়া হবে। সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ অধিবেশন চলাকালে যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়, তাহলে স্পীকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে। এর জন্য মঙ্গলবার কমিশন থেকে আমাকে চিঠি দিয়ে সময় চাওয়া হয়েছিল। সে আলোকে বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ একটি প্রতিনিধি দল দেখা করেন। বৈঠকে ইসির প্রস্তাবিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনসহ এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে ৩৪৮ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এই ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছি। এই সংসদ সদস্যদের ভোটেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মোঃ আবদুল হামিদ। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি। সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আইন অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন সাংসদরা। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
×