ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মদিন ভাবনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত;###;আজ ৮৫তম জন্মদিন

শেখ হাসিনার আরেক টার্ম দরকার অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

শেখ হাসিনার আরেক টার্ম দরকার অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে

শেখ হাসিনা ইন্টারন্যাশনাল লীগের প্লেয়ার আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা দেশীয় ক্লাবের। খুব বড় নেতাদের যে ধরনের গুণ থাকে শেখ হাসিনার ভেতর সেই গুণগুলো লক্ষ্য করি এবং প্রতি মুহূর্তে তিনি নিজেকে পরিবর্তন করছেন। শেখ হাসিনাকে আরেক টার্ম সুযোগ দিলে দেশ সহজে এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) অর্জন করতে পারবে এবং সেটা ২০২৪-এর আগে হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা যে গতিতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, আরেক টার্ম পেলে গতি আরও বাড়বে। এসডিজি অর্জন সোজা নয়, সকলকে দারিদ্র্যসীমা থেকে ওপরে টেনে তুলতে হবে। অন্য কেউ হলে এ গতি আবার কমে যাবে। তাছাড়া তাঁরা শেখ হাসিনার মানেরও নন। তাই সব মিলিয়ে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে আরেক টার্ম সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া বাস্তবতা হলো ২০১৯ এ শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসবেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। আজ ৮৫তে পা দিলেন চির তরুণ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুুহিত। জন্মদিনের একদিন আগে দেয়া এ সাক্ষাতকারে এভাবে কথাগুলো বলেন। তাঁর এ সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। প্রশ্ন : ৮৫তে যখন পা দিচ্ছেন তখন আপনি একটা দেশের অর্থনীতি বির্নিমাণের কারিগরÑ বিষয়টি কেমন লাগছে? উত্তর: এই যে আমি ৮৫তে পদার্পণ করেও দেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি, এটা আল্লাহর মেহেরবাণী ও জনগণের শুভেচ্ছা ছাড়া সম্ভব হতো না। প্রশ্ন: মন্ত্রী হওয়ার আগে ও পরে আপনাকে আমার খুব বেশি কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আপনাকে দেখেছি, আগেও যেমন কাজ করতেন এখনও সেই একই গতিতে, একই পরিমাণ কাজ করছেন। এই কাজ করার সামর্থ ধরে রাখার মূল রসায়নটা কী? উত্তর: আসলে কাজ করাটা আমার অভ্যাসের ভেতর ঢুকে গেছে। আমি চিন্তাই করতে পারি না, কাজ না করে আমি থাকতে পারব। তাছাড়া আমার বেশিরভাগ কাজই মননশীল কাজ, সৃষ্টিশীল কাজ তাই সে অর্থনীতির কোন দিক হোক বা প্রবন্ধ লেখা, ইতিহাস, সাহিত্যচর্চা যাই বলো না কেন... প্রশ্ন: অনেককে দেখিÑ বয়স হয়ে গেলে কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চান... উত্তর: কাজটা অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন কিছুটা বেশি রেস্ট নেই না তা নয়Ñ আগে চার ঘণ্টা ঘুমাতাম, এখন ৬ ঘণ্টা ঘুমাই। মাঝে মাঝে দু-একদিন অনেক কাজ করার পরে একটু শুয়ে রেস্ট নেইÑ তাও ঠিক রেস্ট হয় না, কোন কিছু পড়তে থাকি... প্রশ্ন: মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন কত দিন? উত্তর: চার ঘণ্টা ঘুমিয়েছি ১৯৭০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত। মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমোতে পেরেছি শুধুমাত্র উইলফোর্স দিয়ে। প্রশ্ন: ২০০৯ থেকে ১৮Ñ আপনার এই অর্থমন্ত্রিত্বের কালে এক নজরের সাফল্য... উত্তর: এই সময়ে অর্থনীতি অনেক উঁচুতে পৌঁছেছে। আমাদের এক্সপোর্ট ছিল ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার। এটা পৌঁছে গেছে ৩৪ বিলিয়নে। আমদানি ১৪ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সব থেকে বড় বিষয়, নিউ মিলেনিয়ামের এক দশক আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ এর মধ্যে আটকে ছিল। সেটা এখন ৭.৫। মানুষের মাথাপিছু ইনকাম ৬০০ ডলার থেকে বেড়ে ১৬১০ ডলার হয়েছে। প্রশ্ন: আপনারা ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরে আপনি বলেছিলেন, অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়াবেন... উত্তর: আমরা যখন ক্ষমতায় এলাম তখন বিশ্বমন্দা চলছে। বিশ্বমন্দা হলে এক্সপোর্ট কমে যায়। এ সময়ে অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর জোর দিতে হয়। সে জোর দিয়ে আমরা সফল হই। তাছাড়া যাই বলি না কেন, আমাদের এক্সপোর্ট ৩৩ পার্সেন্ট। আমরা এখনও মূলত এগ্রিকালচার বেসড কান্ট্রি। যে কারণে কৃষির ওপর গুরুত্ব দেই। কৃষির কারণে প্রবৃদ্ধি বেড়ে যায়। অর্থনীতির কাঠামো শক্ত হয়। মন্দার ধাক্কা আমাদের ওপর পড়ে না। প্রশ্ন: বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার কি... উত্তর: কমপক্ষে ৬০ বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন: অভ্যন্তরীণ বাজার আরও বাড়বে? উত্তর: অভ্যন্তরীণ বাজার আরও বাড়বে। নিজ দেশে খাবারের পরিমাণ বেড়েছে, প্রসাধনী বেড়েছে, কাপড়-চোপড় অনেক সুন্দর হয়েছে। এসবই তো অভ্যন্তরীণ বাজারের ফল। আমাদের যে সব মেয়েরা অফিসে যায়, হাল্কা করে সামান্য প্রসাধনী নেয়, সবই তো দেশীয় প্রসাধনীÑ সুন্দর। প্রশ্ন: আমাদের কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বয়স্ক লোকের সংখ্যাও বাড়ছে। অর্থনীতি এটা সমন্বয় করবে কীভাবে? বয়স্ক লোককে কি খুব বেশি কাজে লাগানো সম্ভব হবে? উত্তর: এটা একটা বড় সমস্যা। তবে শেষ অবধি আমাদের অর্থনীতি এটা বহন করতে পারবে। বয়স্ক লোককে অবশ্য খুব বেশি কাজে লাগানো সম্ভব হবে না। এখন অনেক বয়স অবধি মানুষ কাজকর্ম করছে। তবে বয়স বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার কনজারভেটিভ। দুই বছর বাড়িয়েছি। বেসরকারী ক্ষেত্রে তো ৬৫, ৬৭ অবধি কাজ করছে। তাছাড়া বয়স্কদের জন্য আমরা সোশ্যাল সিকিউরিটি দিচ্ছি অনেক বেশি। টোটাল গ্রোস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের ৩% ব্যয় হচ্ছে সোশ্যাল সিকিউরিটিতে। প্রশ্ন: আপনি সম্প্রতি বলেছেন এসডিজি বাস্তবায়নের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে আরেক টার্ম সুযোগ দেয়া উচিত... উত্তর: শেখ হাসিনার বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আমাদের ২০২৪ সালের আগে হয়ে যাবে। সুতরাং আরেক টার্ম হলে ওই টার্মে তিনি এসডিজি অর্জন করে ফেলবেন। এসডিজি অর্জন অনেক কঠিন কাজ, প্রত্যেককে দারিদ্র্যসীমার ওপরে ওঠাতে হবে। প্রশ্ন: আপনি কেন মনে করছেন অন্য কেউ হলে বাধাগ্রস্ত হবেÑ শেখ হাসিনারই দরকার? উত্তর: অর্থনীতিতে যে গতিটা তিনি অর্জন করতে পেরেছেন, এই গতিটা তিনি থাকলে আর শিথিল হবে না। যেমন ২০১৪-১৫তে গতি বাধাগ্রস্ত হয়নি। বরং অর্থনীতির গতির একটা ধারাবাহিকতা ছিল। কোন পরিবর্তন হলে এই গতি বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন একজনকে এটা বুঝে এই গতি অর্জন করতেই তো এসডিজি অর্জনের সময় পার হয়ে যাবে। প্রশ্ন: ওবামার সেকেন্ড টার্মের আগে আপনি বলেছিলেন ওবামা আসবেন। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় টার্মের বেশ আগে বলেছিলেন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবেন। এবার তৃতীয় টার্মে এসে আপনি কী বলতে চান? উত্তর: শেখ হাসিনাই আবার আসবেন। আমাদের কিছু কিছু লোকের মাথা গরম হয়ে গেছে, তাদের একটু নম্র হতে হবে। আর কিছু পরিবর্তন তো তিনি আনবেনই। ২০১৯ এ শেখ হাসিনাই সরকার গঠন করবেন। প্রশ্ন: আপনি জনপ্রতিনিধি। জনগণের কাছে যান। মানুষ কি আপনাদের উন্নয়ন বুঝতে পেরেছে? উত্তর: যেখানেই যাই, তাদের চাহিদা অনেক কমে গেছে। কারণ তারা অনেক কিছু পেয়েছে। তার পরেও কিছু কিছু চাহিদা আছে, সেগুলো আমাদের পূরণ করতে হবে। ২০০৮ এর নির্বাচনে আমাকে যে সব জায়গায় হাঁটতে হয়েছে, নৌকায় যেতে হয়েছে, সব খানে এখন গাড়ি যায়। প্রশ্ন: পদ্মা সেতু কি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে? উত্তর: পদ্মা সেতু ২০১৮ এর ভেতর শেষ করার চেষ্টা চলছে। যদি একান্তই দেরি হয়, তাহলে ছয় মাসের মতো দেরি হতে পারে। প্রশ্ন: পদ্মা রেল সেতু? উত্তর: একই সঙ্গে হবে প্রশ্ন: রেল পার্টটা অর্থায়ন করবে কে? উত্তর: চায়না অর্থায়ন করবে। তাদের কোম্পানি কাজ পেয়ে গেছে। তারা কাজ করছে। প্রশ্ন: আপনার থেকে এত অভিজ্ঞ, এত প্রাজ্ঞ আর কেউ শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখছেন না। তার বিশেষ গুণাবলী কী দেখেন? উত্তর: শেখ হাসিনার সব থেকে বড় বিষয় হলো রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে সব বিষয় আলোচনার জন্য আসে বা কখনও তিনি আনেন, সেগুলো সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ ধারণা রাখেন। একেবারে ডিটেইলস জেনেই তিনি এগুলো আনেন। দুই. তার স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর। যে কোন কাজের ক্ষেত্রে আগে ওই ধরনের কোন কাজ হয়ে থাকলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে উদাহরণ হিসেবে সেটা নিয়ে আসেন। এই যে মনে রাখা এটা বিশাল ব্যাপার। এগুলো আন্তর্জাতিক মানের বড় নেতাদের গুণাবলী। তাঁকে আমি ২০০১ থেকে ১৮ অবধি নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখছি। তাঁর অবস্থান তিনি নিজেই বদলে ফেলেছেন। প্রশ্ন: এখন বাংলাদেশে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা কেউ কি তাঁর কাছাকাছি? উত্তর: তাঁর অবস্থান অনেক ওপরে। তিনি এখন ইন্টারন্যাশনাল লীগে আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা দেশীয় লীগে। প্রশ্ন: আপনি শুধু দেশের একজন অর্থমন্ত্রী নন, দেশের অন্যতম বুদ্ধিজীবী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। আপনার বিচরণ অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য, ইতিহাসসহ নানা ক্ষেত্রে। আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি দীর্ঘ। তাই ৮৫তম জন্মদিনে দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য আপনার পরামর্শ কি? উত্তর: নতুন প্রজন্মকে আমি বলতে চাই, তোমরা অনেক কিছু পাচ্ছ। তোমরা এনজয় কর। তবে একটা আদর্শ দরকার। যেমন, দুর্নীতি করব না। এমন একটা নৈতিক বোধ আনতে হবে। এই যে এখন ছোটখাটো ঘুষ খায়Ñ এর প্রয়োজন আগামী পাঁচ বছর পরে আর থাকবে না। লোভকে সংবরণ করতে হবে। আমি মনে করি, সেটা হবে এবং সেটা আমি দেখে যেতে পারব। আগামী পাঁচ বছরে অনেক পরিবর্তন হবে।
×