ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘জ্যাকব টাওয়ার’ পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে ॥ রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

‘জ্যাকব টাওয়ার’ পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে ॥ রাষ্ট্রপতি

হাসিব রহমান/এআর মামুন চরফ্যাশন থেকে ॥ বুধবার চরফ্যাশনবাসীর জন্য ছিল এক বিশেষ দিন। সকাল থেকে মানুষ মেতে ওঠে আনন্দ উৎসবে। আর এই আনন্দ উৎসবের কারণ হচ্ছে চরফ্যাশনে নির্মিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ জ্যাকব টাওয়ার। বুধবার দুপুরে আনন্দঘন পরিবেশে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ১৮ তলা বিশিষ্ট ২২৫ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ার উদ্বোধন করেন। দৃষ্টিনন্দন এই জ্যাকব টাওয়ারের পথ চলার মধ্য দিয়ে চরফ্যাশন তথা ভোলা জেলা উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। শুধু চরফ্যাশনই নয় এই উৎসব আনন্দের ছোঁয়া লাগে গোটা জেলায়। এই টাওয়ারের স্বপ্নদ্রষ্টা ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এর নামে ওই ওয়াচ টাওয়ারের নামকরণ করা হয়েছে ‘জ্যাকব টাওয়ার’। আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের প্রচেষ্টায় এই টাওয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এই টাওয়ারের নামকরণ করেন জ্যাকব টাওয়ার। এদিকে ভোলার চরফ্যাশনে প্রথম রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ-এর দুই দিনের সফরকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে গোটা এলাকা। সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সব মানুষ দলে দলে এসে জড়ো হতে থাকে চরফ্যাশন সরকারী টিবি স্কুল মাঠে। রাষ্ট্রপতি দুপুর পৌনে ২টায় হেলিকপ্টারযোগে চরফ্যাশন এসে পৌঁছে। ২টায় তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধন করেন জ্যাকব টাওয়ার। উদ্বোধনের পরপরই রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম লিফটযোগে জ্যাকব টাওয়ার পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি টাওয়ারের চূড়ায় উঠে বঙ্গোপসাগরসহ প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী পর্যবেক্ষণ করেন। এর আগে তিনি ফ্যাশন স্কয়ারে গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। বিকেল ৪টায় চরফ্যাশন সরকারী টিবি স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ জ্যাকব টাওয়ারটি পর্যটন শিল্পে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তিনি আরও বলেন, এ এলাকার পর্যটন সম্ভাবনা খুব উজ্জ্বল। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোক্তা ও স্থানীয় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে পর্যটকের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটেছে। সেই চিন্তাধারা থেকে নির্মিত এই জ্যাকব টাওয়ার নির্মাণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই টাওয়ার দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। এদিকে ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের দাবির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, জেলা করার ব্যাপারে কতগুলো পূর্বশর্ত রয়েছে। চরফ্যাশন বর্তমানে চারটি থানা রয়েছে। এই থানাগুলো যদি পর্যায়ক্রমে উপজেলা হয়ে যায় তা হলে ভবিষ্যতে চরফ্যাশন উপজেলা একটি জেলায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলার চারজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তারা উদ্যোগ নিলে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও চরফ্যাশনে সরকারী বা বেসরকারী যে রকমই হোক না কেন একটি রেসিডেন্সিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে ভাল হবে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি সহায়তা করবেন বলেও জানান। এ সময় রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। কিন্তু আমাদের সম্ভাবনাসমূহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই একবিংশ শতাব্দীতে দেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে এসব উন্নয়ন সম্ভাবনাসমূহকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। আর এজন্য দরকার জনপ্রতিনিধি, উদ্যোক্তা, সরকারী কর্মচারী ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত প্রয়াস। প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আরও বলেছেন, চরফ্যাশনে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ, বেগম রহিমা ইসলাম ডিগ্রী কলেজ, নজরুল ইসলাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ উদ্বোধন শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকার গুণগত শিক্ষা প্রসারে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। শিক্ষা একটি জাতীয় উন্নয়নে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সরকার এ লক্ষ্যে অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিনামূল্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বই দিচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃত্তি প্রদানসহ উৎসাহব্যঞ্জক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। এখন দরকার গুণগত মানের শিক্ষা। শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন- আপনারা ছেলে মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। একবিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। বর্তমান প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা যে কোন প্রতিযোগিতায় নিজেদের যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে পারে। রাষ্ট্রপতি বলেন- উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। উন্নয়ন কেউ কাউকে দেয় না । এটা অর্জন করতে হয়। তাই অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের যা আছে তা নিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। ওই সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ভোলায় বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস আছে। এই গ্যাস ব্যবহার করে এখানে গ্যাস ভিত্তিক ব্যাপক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে। সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য ভোলা বরিশাল সেতু নির্মাণ করা হবে। ভোলা হবে সিঙ্গাপুর। সেই লক্ষে ভোলার চার এমপি কাজ করে যাচ্ছেন। চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জে-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, সংসদ সদস্য রেজাউল আহমেদ তৌফিক। পরে সভা শেষে বিকেলে কুকরি মুকরি গমন করেন। সেখানে তিনি রাতযাপন করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কুকরি মুকরি ইকোপার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এছড়াও বেলা ১২টায় ভোলা সদরের বাংলাবাজারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনতা জাদুঘরের উদ্বোধন শেষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন।। সুধী সমাবেশের আগে রাষ্ট্রপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের নবনির্মিত ভবন, বেগম রহিমা ইসলাম ডিগ্রী কলেজের নবনির্মিত ভবন, নজরুল ইসলাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজের নবনির্মিত ভবন এবং রসুলপুর-এওয়াজপুর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেন।
×