ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উদ্দেশ্য, আইনের ফাঁকফোকর দূর করে রাজস্ব বাড়ানো

অনলাইন ভ্যাট প্রকল্প আবারও সংশোধনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

অনলাইন ভ্যাট প্রকল্প আবারও সংশোধনের উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আধুনিক, সুশৃঙ্খল ও সেবাভিত্তিক ভ্যাট প্রশাসন চালুসহ ১০ কারণে মূল্য সংযোজন কর আইন (ভ্যাট অনলাইন) প্রকল্প উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারের ভ্যাট সম্পর্কিত রাজস্ব বাড়বে বলে সরকারের ধারণা। শুধু তাই নয়, এতে ভ্যাট আইনের নানা ধরনের ফাঁকফোকরও বন্ধ হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন (ভ্যাট অনলাইন) প্রকল্প (২য় সংশোধিত)’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে ২৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্প সাহায্য বাবদ পাওয়া যাবে ৪৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। আইআরডি সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট সম্পর্কিত আইনের ফাঁকফোকর দূর করে ভ্যাট রাজস্ব বাড়ানো, ভ্যাট প্রশাসনকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বাস্তবায়ন, নতুন ভ্যাট আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যবসা পরিচালনা সুলভ ও সহজতর করা, কর প্রদান করে না এমন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও এনবিআর-এর লেনদেনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিক, সুশৃঙ্খল ও সেবাভিত্তিক ভ্যাট প্রশাসন চালু, জ্ঞানভিত্তিক ভ্যাট প্রশাসন তৈরি, শিল্পায়নের দ্রুত প্রসারে সহায়তা করা, সরকারী-বেসরকারী খাতে ব্যবসা শুরুর সময় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দক্ষতা বাড়ানো ও ব্যবসা পরিচালনা করা এবং অধিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে বেসরকারী খাতে অধিকতর বিনিয়োগ উৎসাহিত করতেই সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটি ঢাকাসহ সারাদেশের জন্য প্রযোজ্য হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণ কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে শুল্ক ও আয়কর অনুবিভাগের অটোমেশন কার্যক্রম চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এরই ধারাবাহিকতায় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা, কার্যক্রম ও প্রশাসন কম্পিউটারাইজড এবং অটোমেশন করতেই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির জন্য প্রথমে ৫৫১ কোটি ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। যার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে প্রকল্প সহায়তা বাবদ ৪৪৯ কোটি ৭৪ টাকা রয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদিত হয়। পরে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব দেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যা ২০১৪ সালে ৮ অক্টোবর অনুমোদিত হয়। এরপর প্রকল্পের ব্যয় ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ বাড়িয়ে তা বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ২০২০ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাবের পরিকল্পন কমিশনে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)-এর সভাও অনুষ্ঠিত হয়। পিইসির সভায় আইএমইডির সংশ্লিষ্ট সেক্টরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ইআরডি, পরিকল্পনা কমিশন, আইআরডি, এনবিআর এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রকল্পের ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ করার কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী আরডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে তা আবার পাঠাতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটির ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ করা হয়েছে। সে আলোকে আরডিপিপিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত আরডিপিপির ওপর গত বছরের ২৯ অক্টোবর ফের পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পটি ব্যয়ে ৬৯০ কোটি ১৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় পাঁচ বছরের জন্য সাড়ে ১২ হাজার বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট অফিস ভাড়া নেয়া হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬টি যানবাহন কেনা হবে। ভ্যাট সংক্রান্ত প্রচার ও বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে। ট্যাক্সপেয়ার এ্যাডভার্টাইজিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। হবে গবেষণাও। ভ্যাট সংক্রান্ত পৃথক এ্যাপস তৈরি করা হবে। তৈরি করা হবে এ সংক্রান্ত পৃথক সফটওয়্যার। দক্ষতা বাড়াতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। পরামর্শক সেবা সংগ্রহ করা হবে। নতুন ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আইটি অবকাঠামো সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্প অফিসের জন্য অফিস ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে এবং মাঠপর্যায়ের অফিস রিফারবিশমেন্ট ও অফিসগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ভ্যাট সম্পর্কে স্টেকহোল্ডারদের দক্ষতা ও জ্ঞান বাড়বে। ফলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি, আইনটি আধুনিক হবে। এ সংক্রান্ত জটিলতাও কমবে।’
×