ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

দাবি আদায়ে অনশন সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

দাবি আদায়ে অনশন সংস্কৃতি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ, ১৯৭১’এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান সুষ্ঠু আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সম্ভব হয়েছে। বাঙালীর দাবি আদায়ের আন্দোলনের সম্মুুখে কখনও বিরোধী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রসমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং দেশপ্রেমিক জনসাধারণ বিভিন্ন সময়ে শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন দাবি উত্থাপনের মধ্য দিয়ে জনসাধারণের ভেতরে অধিকার আদায়ের বীজ বুনে দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই বাঙালীর রক্তে আন্দোলন এবং দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা নিত্য বিরাজিত রয়েছে। দাবি আদায়ের এই আন্দোলন বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে সম্পন্ন হয়। এক সময় বাংলাদেশে রাস্তায় যানবাহন ভাংচুরকে দাবি আদায়ের পথ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেই অনুশীলন এখনও মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু কখনও তা দাবি আদায়ের সুপথ হতে পারে না। ইদানীং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দল- গোষ্ঠীর মধ্যে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনশনের পথ বেছে নেয়া যেন এক নৈত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে পড়েছে। এক দলের দাবি আদায়ের হাতিয়ার অনশন ভঙ্গ হলেই আরেক দল দাবি আদায়ের দফা নিয়ে অনশনে রাজপথে বসে পড়ে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনশন করার অধিকার সবার রয়েছে। তবে মাত্রাতিরিক্ত অনশনের অপপ্রয়োগ শুধু দাবি আাদায়ের আন্দোলনকে স্তিমিত করে না বরং আন্দোলনের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার পাশাপাশি দল-গোষ্ঠীর আত্মসম্মানবোধের হীনতাকেও প্রকাশ করে। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্কুল-মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্তকরণের দাবিকে কেন্দ্র করে অনশনের মধ্য দিয়ে আত্মঘাতী ঝুঁকি নেয়ার মতো চিত্র গণমাধ্যমে লক্ষ্যণীয় হয়েছে। যা কখনও কাম্য নয়। যারা দেশ গড়ার কারিগর; দেশের শিক্ষার্থীদের অন্তরে শিক্ষার আলো জ্বেলে দেয়ার দায়িত্বে আসীন; তাদের মধ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কুচক্রে এমন স্বার্থবাদী কর্মকা-ের উদ্দাম নৃত্য কখনও কখনও কাম্য নয়। অনশনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন এবং দাবি আদায় কতটুকু বেগবান হয় তা বিশ্লেষক মহলই বলতে পারবেন। তবে অনশনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং দেশের যে ক্ষতি সাধিত হয় সেই ক্ষত কখনও মুছে ফেলা যায় না। সরকারের শেষ বছরে এসে দাবি আদায়ের এই অনশন দাবি প্রত্যাশাকারী ও দেশের জনগণ দুই অর্থে দেখতে পারে। প্রথমত, সরকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং দাবি-দাওয়া পূরণে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে- সেখানে দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করলে দাবি আদায় সহজেই সম্ভবপর হবে বলে বিশ্বাস। দ্বিতীয়ত, দাবি আদায়ের এই অনশন কোন মহলের ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ করার চতুর মনোভাবও হতে পারে। আর অনশনের ফলে যদি কারও মৃত্যু হয় তাহলে তা সরকার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য নিশ্চিয় সুখকর হবে না। দাবি আদায়ের এই অনশন নামক যে খেলা শুরু হয়েছে তা ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে- তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। কারণ মানুষকে যেমন মৃত্যুভয় দেখিয়ে অনেক কিছু আদায় করা যায়; তেমনি আত্মমৃত্যু ঘটানোর অনশন নামক দাবি আদায়ের সংস্কৃতি দ্বারাও দাবি আদায় সম্ভব। সচেতন মহল কখনই অনশনকে সমর্থন করবে না। কারণ একজন অনশনকারী ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত থাকে আরও বহু জীবন। দাবি আদায়ের যে অনশন শুরু হয়েছে তার সঙ্গে যদি কারো কোন নোংরা ফায়দা লোটার মনোভাব জড়িত থাকে তাহলে বাংলাদেশের জনগণ ও ইতিহাস কখনও ক্ষমা করবে না। ঢাকা থেকে
×