ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ আখতার

ঝোপ বুঝে কোপ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

ঝোপ বুঝে কোপ

সরকারের শেষ মেয়াদে দাবি আদায়ের মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন আন্দোলনরত নন-এমপিভুক্ত, এমপিওভুক্ত এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। নির্বাচনের বছর সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এটাকে পুঁজি করে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারছে আন্দোলনরত শিক্ষক সমাজ। সরকারকে তথা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে ‘অনশন’কে দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না। এমপিওভুক্ত হওয়ার দাবি নিয়ে ৫ হাজারেরও অধিক নন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজারের অধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে ‘অনশন’ করছেন। তাদের দাবি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মতো নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার প্রদত্ত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। বৈষম্যের শিকার বলে তাদের দাবি। আন্দোলন না করে সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বৈষম্য দূরিকরণে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী দাবি আদায়ের পথ খুঁজে বের করা শ্রেয়। ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা প্রচ- শীতে দুই সপ্তাহ ‘অনশন’ করে দুইশত জনের মত আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে জাতীয়করণের আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফিরে গেছে। এরপর এমপিওভুক্ত ২৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চার লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ-অনশনের ডাক দিয়েছেন। বয়স বাড়াও, সুযোগ দাও- স্লোগান সামনে রেখে চাকরির প্রবেশের ৩৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য আমরণ অনশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের যুক্তি হলোÑ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলাদলি, সংঘর্ষ, শিক্ষক রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতিসহ নানা কারণে সেশনজট লেগেই আছে। এতে কোর্স শেষ করতে ৪ বছরের স্থলে ৭/৮ বছর লাগে। দাবি যুক্তিসঙ্গত হলে আন্দোলনের আগেই সরকার সুবিবেচনায় আনতে পারেন। শিক্ষা জাতির মেরুদ-। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। আর শিক্ষকমহল শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘœ ঘটিয়ে সরকারকে জিম্মি করে ‘অনশন’কে অস্ত্র বানিয়ে দাবি আদায়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। দায়িত্বশীল পেশায় অবস্থান করে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়া সমাজ আশা করে না। শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষক সমাজের। কথায় কথায় আন্দোলন, ধর্মঘট, অনশন করে দাবি আদায় শিক্ষা ক্ষেত্রে তথা সমাজকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস। আন্দোলন, ধর্মঘট, অনশন করা প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে। তবে তা অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় হওয়া উচিত। যাতে সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত না হয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা না আসে, শিক্ষার্থীদের পাঠদান বিঘœ না ঘটে। তারপরও আন্দোলনকারীদের উচিত সরকারের সক্ষমতার বিষয়টি আমলে নেয়া। জাতীয়করণ না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে, শিক্ষা ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটবে এ ধরনের হুমকি শিক্ষকদের মর্যাদাই শুধু ক্ষুণœ করে না, সমাজে শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। স্বার্থবাদী কর্মকাণ্ড পরিহার করে সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করে দাবি আদায়ে সমঝোতাই হোক একমাত্র হাতিয়ার এটাই প্রত্যাশা। পঞ্চগড় থেকে
×