ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাধে কি আর অনশন!;###;মোঃ এনামুল কবির

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ কথায় কথায় অনশন!

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ কথায় কথায় অনশন!

সম্প্রতি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি অনশনের আপাত সফল পরিণতি ঘটেছে। এ আন্দোলনে নিজের ভাগ্য-রুটি-রুজি জড়িত আছে বলে দু’কলম লেখার তাগিদ বোধ করছি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বহুধা বিভক্ত। সবকিছু ছাপিয়ে সরকারী- বেসরকারী শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টানাপোড়েন চলছে। দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের প্রায় ৯৭% পরিচালিত হয় বেসরকারী খাতে যা সরকারী অনুদান নির্ভর। বাকি ৩% সরকারী চাকরি বিধি অনুযায়ী পরিচালিত। বেসরকারী এই ৯৭% শিক্ষক-কর্মচারী সরকারী অনুদান হিসাবে ১০০% মূল বেতন, শিক্ষক-কর্মচারী নির্বিশেষে ১০০০ টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা আর ২৫% ঈদ বোনাস (বলতেও লজ্জা করে!) পান। শিক্ষকরা অল্পতেই তুষ্ট থাকেন বলে এ নিয়ে কখনও দর কষাকষি করেন না। (সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্যতা সবাই জানেন ধরে নিয়ে পুনরুল্লেখ করলাম না)। প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও রেশিও অনুযায়ী বেসরকারীরা জীবনে একটি ইনক্রিমেন্ট পেতেন। যেহেতু প্রতি পাঁচ বছরে নতুন পে-স্কেল দেয়া হতো, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরাও পে-স্কেল আওতায় বর্ধিত বেতন-ভাতা পেতেন (আন্দোলন না করে পাওয়ার নজির নেই!)। ২০১৫ সালের পে-স্কেল দেয়ার পর ঘোষণা দেয়া হলো আর কোন পে-স্কেল হবে না, সবাই প্রতিবছর ৫% ইনক্রিমেন্ট পাবেন। তিন অর্থবছর অতিক্রান্ত হতে চলল। সরকারী সবাই যথাসময়ে বর্ধিত ৫% করে পেতে থাকলেন। সঙ্গে যোগ হলো ২০% বৈশাখী ভাতা। পোড়া ‘কপাইল্যা’ বেসরকারীদের বৈশাখী তো দূরের কথা, ৫% ইনক্রিমেন্টের কথাও মন্ত্রী-মন্ত্রণালয় বেমালুম ভুলে গেলেন। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় আমাকে সারা জীবন এই একই বেতনে (আসলে ভাতা) চাকরি করতে হবে। আমার কোন ভবিষ্যত নেই, সন্তান নেই, তাদের পড়াশোনার খরচ নেই, সংসার নেই, উৎসব নেই, রোগব্যাধি নেই, আত্মীয়পরিজন নেই, আমাকে কিছু চাইতেও নেই। কারণ আমি যে শিক্ষক! শিক্ষকের মর্যাদা সবার ওপরে, পেটে ভাত থাকুক বা নাই থাকুক, শরীরে কাপড় বা নাই থাকল, জাতিকে দিতে হবে, দেশকে শিক্ষায় আলোকিত করতে হবে! কি দারুণ ব্যবস্থা! তার উপর আছে ম্যানেজিং কমিটি/গবর্নিং বডি নামক দানবীয় খাদক। সরকার আমাদের পেটে অন্নের ভার নেবে না, ছাত্রদের কাছ থেকে দুই টাকা নিয়ে কিছুটা পুষিয়ে নেব? মন্ত্রণালয়ের রাজকীয় আদেশ, খবরদার, এক পয়সা বেশি নেবে না। বেশ, নেব না। ওই যে দুই টাকা নিয়েছি, ওটাই সবাই মিলে শিরনি খাওয়ার মতো নেব। ওমা! ড্রাকুলা আছে না! ম্যানেজিং কমিটি/গবর্নিং বডি কিসের জন্য তৈরি? খাবলে ওটাও খেয়ে ফেলে! খুব অল্প কথায় আর কি বলার আছে? গুণীজন, সুধীজন আপনারাই ভাবুন অনশনে কেন যেতে হয়? ইচ্ছে করে ফুর্তি করতে যায়, নাকি যেতে বাধ্য করা হয়? জাতি গড়ার কারিগর, জাতির বিবেক, মানবতার ধারক, সমাজের আলোকবর্তিকা ইত্যাদি বিশেষণ শুনতে শুনতে ক্লান্ত। আমার ঘরে চাল নেই, সবজি কেনার টাকা নেই, সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করার সামর্থ্য নেই, ওষুধের অভাবে শরীরে রোগ পুষে রাখছি। আর কত? শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ থেকে
×