ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ

২০১৮’র শুরুতেই একাধিক ইতিবাচক সংবাদের সন্ধান মিলেছে। এর অন্যতম হলো সপ্তম উন্নয়ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ)- ‘সুষম প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন প্রতিদেন-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির ৭৯টি দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান ৬২তম এবং পাকিস্তান ৪৭তম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৮তম। সার্বিক জীবনযাত্রার মান, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ও ঋণ থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুরক্ষার ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে বৈশ্বিক এই সূচক। এর বাইরেও নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশনসহ সামাজিক নানা সুরক্ষায় ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই তথ্য ও মন্তব্য বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ নোবেলপ্রাপ্ত অর্মত্য সেন, বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউনিসেফ-এর। তবে একথাও সত্য যে, সুষম উন্নয়ন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। কিছুদিন আগে সম্পাদকীয় মন্তব্যে আমরা লিখেছিলাম যে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন পদে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৬১টি পদ শূন্য রয়েছে। অথচ দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বিবিএসের মতে ২৬ লাখেরও বেশি। আশার কথা এই যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক চলতি বছরের প্রথমার্ধে সরকার লক্ষাধিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। এর জন্য যথারীতি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ক্ষেত্রেই যেন প্রশ্ন ফাঁসসহ দুর্নীতি-অনিয়ম প্রবেশ করতে না পারে এবং মেধাবী ও যোগ্যরাই যাতে অগ্রাধিকার পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে। অতীতে সরকারের কর্মক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাসহ (বিসিএস ক্যাডার) বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর দক্ষতা ও সক্ষমতা এমনকি মেধা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঘুষ-দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ তো আছেই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৪৬ বছরে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ৪০ গুণ বেতন-ভাতা-বোনাস বাড়লেও কাজের দক্ষতা তথা গুণগতমান বাড়েনি। অথচ ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিশ্চিত করতে হলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এর জন্য ১৭শ’ কর্মকর্তার দক্ষতা বাড়াতে সরকার ২৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় উপসচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মকর্তাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বাস্তবতা হলো, সরকারী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়লে প্রকারান্তরে সরকারের সক্ষমতা বাড়বে এবং গতিশীল হবে, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যক। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সব মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকা কাজ চলতি বছরই সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে বলেই প্রত্যাশা। দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭ শতাংশ অতিক্রম করেছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন এবং তা অব্যাহত রাখতে হলে সুশাসনসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে এই দিকটির দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শূন্যপদ পূরণে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। কোটা প্রথার পুনর্বিন্যাসও প্রয়োজন।
×