ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে ভেরিফিকেশনে গিয়ে মিষ্টি খাওয়াল পুলিশ

প্রকাশিত: ০০:২৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

দিনাজপুরে ভেরিফিকেশনে গিয়ে মিষ্টি খাওয়াল পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা ছাপিয়ে সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দিনাজপুর পুলিশ। দিনাজপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলমের নির্দেশনায় এবারের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দিনাজপুর জেলার ৩৫ জন সরকারি চাকরি প্রার্থীর বাসায় পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়ে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দিনাজপুর পুলিশের এ অনন্য উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের জনগণ। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মালদহ গ্রামের অটোবাইকচালক বাবলু মিয়ার বড় ছেলে সাজু মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে এবার বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতে সাজু মিয়ার পুরো পরিবারসহ গ্রামের সবাই খুশি। কিন্তু সব খুশিকে ছাপিয়ে গত সোমবার পর্যন্ত একটি অজানা আতঙ্ক আঁকড়ে ছিল বাবলু মিয়ার পুরো পরিবারকে। আর সেটি ছিল পুলিশ ভেরিফিকেশনের আতঙ্ক। সাজু মিয়া জানান, তার অনেক বন্ধু বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও অজানা কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশনে বিরূপ প্রতিবেদন যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি। আবার অনেককেই পুলিশকে খুশি করে নিতে হয়েছে ভেরিফিকেশন। তাই কেমন করে পার করবেন এ যাত্রা তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন সাজু মিয়াসহ পুরো পরিবার। কিন্তু সোমবার দুপুরে দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে বিরামপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম হাফিজুর রহমান ফুলের তোড়া এবং মিষ্টি নিয়ে হাজির হন সাজু মিয়ার বাসায়। গর্বিত সন্তানের বাবা-মাকে জানান ফুলেল শুভেচ্ছা। নিজ হাতে সবাইকে খাইয়ে দেন মিষ্টি। পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ফুল নিয়ে মিষ্টি খাওয়ার সময় সাজু মিয়ার মা সাহেরা বেগম, নানী ময়না বেওয়া আর চাচা এনামুল হক আটকাতে পারেননি চোখের জল। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম হাফিজুর রহমান কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে সাজু মিয়ার মা সাহেরা বেগম বলেন, ‘পুলিশোক তো সবাই ভয় পায় বাপজান। হামরা গরিব মানুষ। তোমরা জি হামাক মিষ্টি খিলিবা আসিবেন, হামরা তো স্বপ্নেও এইটা ভাবিবা পারোছো নাই।’ সহকারী পুলিশ সুপার একেএম ওয়াহেদুননবী রিফাত জানান, শুধু সাজু মিয়ার পরিবার নয়, একইভাবে অন্তরাসহ দিনাজপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় পুরো জেলায় বিসিএস উত্তীর্ণ ৩৫ জনের পরিবারকে ফুল দিয়ে বরণ করে মিষ্টি উপহার দেয়া হয়েছে। তথ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন বিরামপুরের চক হরিদাসপুর গ্রামের আব্দুল খালেক। তার পরিবারও ছিলেন উৎকণ্ঠায়। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ গিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে মিষ্টি উপহার দেয়ায় অভিভূত হয়ে পড়েন পুরো পরিবার। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজিম উদ্দীন জানান, মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে ভীতির ধারণা দূর করে সহযোগিতার বন্ধন গড়ে তুলতে বর্তমান পুলিশ বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে পুলিশ নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের ভীতি থাকবে না। পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, পুলিশ এখন জনবান্ধব সেবা দানকারী কর্মী বাহিনী। মানুষের মধ্যে সেই বার্তা পৌঁছে দিতেই এ উদ্যোগ।
×